মোস্তফা ওয়াদুদ: চলছে রমজান মাস। ইবাদাতের মাস। বিশ্বের মুসলমানরা এ মাসে সিয়াম পালন করছে। সারাদিন উপোস থেকে আদায় করছে মহান রবের হুকুম। রাতে দাড়াচ্ছে প্রভূর দরবারে। পড়ছে কুরআনুল কারীম।
এ রমজান মাসের বহুল প্রয়োজনীয় আধুনিক অনেক মাসআলা লিখেছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধান বিচারপতি ও শায়খুল হাদিস মুফতি তাকী উসমানী। নিচে পাঠকদের জন্য ১০ আধুনিক মাসআলা তুলে ধরা হলো।
১. ইনজেকশন: ইনজেকশন নিলে রোজা ভাঙবে না। (জাওয়াহিরুল ফতওয়া)
২. ইনহেলার: শ্বাসকষ্ট দূর করার লক্ষ্যে তরল জাতীয় একটি ওষুধ স্প্রে করে মুখের ভেতর দিয়ে গলায় প্রবেশ করানো হয়, এভাবে মুখের ভেতর ইনহেলার স্প্রে করার দ্বারা রোজা ভেঙে যাবে। (ইমদাদুল ফতওয়া)
৩. এনজিওগ্রাম: হার্ট ব্লক হয়ে গেলে উরুর গোড়া কেটে বিশেষ রগের ভেতর দিয়ে হার্ট পর্যন্ত যে ক্যাথেটার ঢুকিয়ে পরীক্ষা করা হয় তার নাম এনজিওগ্রাম। এ যন্ত্রটিতে যদি কোনো ধরণের ঔষধ লাগানো থাকে তারপরও রোজা ভাঙবে না। (ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা)
৪. অক্সিজেন: রোজা অবস্থায় ওষুধ ব্যবহৃত অক্সিজেন ব্যবহার করলে রোজা ভেঙে যাবে। তবে শুধু বাতাসের অক্সিজেন নিলে রোজা ভাঙবে না। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)
৫. মস্তিস্ক অপারেশন: রোজা অবস্থায় মস্তিস্ক অপারেশন করে ওষুধ ব্যবহার করা হোক বা না হোক রোজা ভাঙবে না।
(আল মাকালাতুল ফিকহীয়া)
৬. রক্ত নেয়া বা দেয়া: রোজা অবস্থায় শরীর থেকে রক্ত বের করলে বা শরীরে প্রবেশ করালে রোজা ভাঙবে না।
(আহসানুল ফতওয়া)
৭. সিস্টোসকপি: প্রসাবের রাস্তা দিয়ে ক্যাথেটার প্রবেশ করিয়ে যে পরীক্ষা করা হয় এর দ্বারা রোজা ভাঙবে না। (হেদায়া)
৮. প্রক্টোসকপি: পাইলস, পিসার, অর্শ, হারিশ, বুটি ও ফিস্টুলা ইত্যাদি রোগের পরীক্ষাকে প্রক্টোসকপ বলে। মলদ্বার দিয়ে নল প্রবেশ করিয়ে পরীক্ষাটি করা হয়। রোগী যাতে ব্যথা না পায় সে জন্য নলের মধ্যে গ্লিসারিন জাতীয় কোনো পিচ্ছিল বস্তু ব্যবহার করা হয়। নলটি পুরোপুরি ভেতরে প্রবেশ করে না। চিকিৎসকদের মতে ওই পিচ্ছিল বস্তুটি নলের সঙ্গে মিশে থাকে এবং নলের সঙ্গেই বেরিয়ে আসে, ভেতরে থাকে না। আর থাকলেও তা পরবর্তীতে বেরিয়ে আসে। যদিও শরীর তা চোষে না কিন্তু ওই বস্তুটি ভিজা হওয়ার কারণে রোজা ভেঙে যাবে। (ফতওয়া শামী)
৯. স্যালাইন: স্যালাইন নেয়া হয় রগে, আর রগ যেহেতু রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তা নয়, তাই স্যালাইন নিলে রোজা ভাঙবে না, তবে রোজার কষ্ট লাঘবের জন্য স্যালাইন নেওয়া মাকরূহ। (ফতওয়ায়ে দারাল উলূম)
১০. টিকা নেয়া: টিকা নিলে রোজা ভাঙবে না। কারণ, টিকা রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তায় ব্যবহার করা হয় না। (আপকে মাসায়াল)
১১. ঢুস লাগানো: ঢুস মলদ্বারের মাধ্যমে দেহের ভেতরে প্রবেশ করে, তাই ঢুস নিলে রোজা ভেঙে যাবে। ঢুস যে জায়গা বা রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করে এ জায়গা বা রাস্তা রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য স্থান। (ফতওয়া শামী)
১২. ইনসুলিন গ্রহণ করা: ইনসুলিন নিলে রোজা ভাঙবে না। কারণ, ইনসুলিন রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করে না এবং গ্রহণযোগ্য খালী জায়গায় প্রবেশ করে না।(জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)
১৩. দাঁত তোলা: রোজা অবস্থায় একান্ত প্রয়োজন হলে দাঁত তোলা জায়েজ আছে। তবে অতি প্রয়োজন না হলে এমনটা করা মাকরূহ। ওষুধ যদি গলায় চলে যায় অথবা থুথু থেকে বেশি অথবা সমপরিমান রক্ত যদি গলায় যায় তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। (আহসানুল ফতওয়া)
১৪. পেস্ট/টুথ পাউডার ব্যবহার করা: রোজা অবস্থায় দিনের বেলায় টুথ পাউডার, পেস্ট, মাজন ইত্যাদি ব্যবহার করা মাকরূহ। কিন্তু গলায় পৌঁছালে রোজা ভেঙ্গে যাবে। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)
১৫. মিসওয়াক করা: শুকনা বা কাঁচা মিসওয়াক দিয়ে দাঁত মাজার দ্বারা রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। চাই যখনই করা হোক না কেন। (ফতওয়া শামী)
১৬. মুখে ওষুধ ব্যবহার করা: মুখে ওষুধ ব্যবহার করে তা গিলে ফেললে বা ওষুধ অংশ বিশেষ গলায় প্রবেশ করলে রোজা ভেঙে যাবে। গলায় প্রবেশ না করলে রোজা ভাঙবে না। (ফতওয়া শামী)
১৭. রক্ত পরীক্ষা: পরীক্ষার জন্য রক্ত দিলে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। তবে খুব বেশি পরিমাণে রক্ত দেয়া যার দ্বারা শরীরে দুর্বলতা আসে, তা মাকরূহ।
১৮. ডায়াবেটিস: ডায়াবেটিসের সুগার মাপার জন্য সুচ ঢুকিয়ে যে একফোটা রক্ত নেয়া হয়, এতে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না।
১৯. নাকে ওষুধ দেয়া: নাকে পানি বা ওষুধ দিলে যদি তা খাদ্য নালীতে চলে যায়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে এবং কাযা করতে হবে।
২০. চোখে ওষুধ বা সুরমা ব্যবহার করা: চোখে ওষুধ বা সুরমা ব্যবহার করার দ্বারা রোজা ভাঙবে না। যদিও এগুলোর স্বাদ গলায় অনুভব হয়। (হেদায়া)
এমডব্লিউ/
 
                              
                           
                              
                           
                         
                              
                           
                        
                                                 
                      
                                                  
                                               
                                                  
                                               
                                      
                                         
                                      
                                         
                                      
                                        