উসমান বিন আ.আলিম।।
কারো ওপর অপবাদ আরোপ করা ইসলামে যেমন নিষিদ্ধ, তেমনিভাবে সামাজিক দৃষ্টিতেও ঘৃণিত। এই অপবাদের কারণে একজন মানুষ আরেকজনের মান-মর্যাদা সব বিনষ্ট করে ফেলে। আমাদের সমাজে নিজের, দলের স্বার্থের জন্য ঘটে যায় এরকম হাজারো ঘটনা স্রেফ অনুমানের ভিত্তিতে।
এরকম কতো ঘটনা হরদম ঘটছে। এই পরিস্থিতি রীতিমতো মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। গল্প, গুজব, আড্ডা যত যাই হোক। সর্বত্রই অন্যের দোষচর্চা। অন্যের দুর্নাম, মিথ্যা অপবাদ দেওয়া। জানাশোনা-পরিচয় নেই কিছুই। তবুও একজনকে যাচ্ছেতাই বলা হচ্ছে। কেউ নিজের স্বার্থে, অনেকে দলের জন্য করে ফেলে এরকম জঘন্য কাজ।যিনি বলছেন তার পাপবোধ নেই। বিবেকে বাধে না। যারা শুনছেন তারাও কিছু বলেন না। বক্তার সঙ্গে তাল মেলান।
একজনের কাছ থেকে শোনেন,অমনিতেই ছড়িয়ে দেন আরেকজনের কাছে। একটুও যাচাই করার চেষ্টা করেননা যে,কথাটা কী আসলেই সঠিক। যাচাই না করার কারণে আপনি যখন অন্যত্রে বলেন তখন এটা মিথ্যায় পরিণত হয়। মিথ্যা বলা যে কত বড় গুনাহ, তা একটি হাদিস শরিফ থেকে বোঝা যায়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের প্রশ্ন করেছিলেন, 'সবচেয়ে বড় গুনাহ কী, আমি কি তোমাদের জানাব না?' সাহাবিরা বললেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)। তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা ও মাতাপিতাকে কষ্ট দেওয়া। তিনি হেলান দিয়ে এ কথাগুলো বলছিলেন। এরপর সোজা হয়ে বসে বললেন, সাবধান এবং মিথ্যা কথা।' (বোখারি ও মুসলিম শরিফ)
অথচ দেখা যায় অন্যের নামে মিথ্যা দোষারোপ করা জঘন্য গোনাহ থেকেও আমরা বেচে থাকি না । কারও সম্মানহানি করার অধিকার অন্যের নেই। ইসলামে মিথ্যা দোষারোপের সুযোগ নেই। এটা ঘৃণিত অপরাধ। শাস্তিযোগ্য।
আল্লাহ তায়া’লা অপবাদ রটনাকারীর শাস্তির ব্যাপারে ইরশাদ করেন;
‘কোন পূতচরিত্রা নারীর বিরুদ্ধে কেউ (ব্যভিচারের) অপবাদ দিয়ে যদি চার জন সাক্ষী উপস্থিত করতে ব্যর্থ হয়, তবে অপবাদ রটনাকারীকে শাস্তি হিসেবে ৮০ বেত মারবে। আর কোনদিন তার সাক্ষ্য গ্রহণ করবে না। এরা সত্যত্যাগী।’ (সূরা নূর ৪)
মিথ্যা অপবাদ দেওয়া ব্যক্তির ব্যাপারে কোরআনে এরশাদ হয়েছে,
‘যারা চরিত্রহীনতার মিথ্যা অপবাদ রটনা করেছে, তারা তা তোমাদেরই একটি দল। (কিন্তু এই অপবাদে যাদের ওপর অন্যায় করা হয়েছে) তারা যেন নিজেদের জন্যে বিষয়টিকে ক্ষতিকর মনে না করে। বরং এটা তোমাদের জন্যে কল্যাণকর। (অপবাদ রটনাকারী) প্রত্যেককেই এ পাপের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। এদের মধ্যে যে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে, তার জন্যে অপেক্ষা করছে কঠিন আজাব।’ (সূরা নূর ১১)
অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তায়া’লা এরশাদ করেন ;
  'যারা বিনা অপরাধে বিশ্বাসী পুরুষ ও নারীদের কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে' (সুরা আহ্যাব,আয়াত-৮৫)।
আবার কেউ অন্যায়ভাবে তার মুসলমান ভাইয়ের মান-ইজ্জত খাটো করলে তার সম্পর্কে রাসুলুলল্গাহ (সা.) বলেছেন, 'কোনো মুসলমান অপর কোনো মুসলমানকে যদি এমন স্থানে লাঞ্ছিত করে যেখানে তার মানহানি ঘটে এবং সর্বদা খাটো করা হয়, আল্লাহ তাকে এমন স্থানে লাঞ্ছিত করবেন, যেখানে তার সাহায্যপ্রাপ্তির আশা ছিল' (আবু দাউদ)।
এরকমভাবে দোষারোপ করা, কারও দুর্নাম করা তো দূরের কথা, কারও সম্পর্কে কিছু প্রমাণ ছাড়া বলাও যাবে না। অহেতুক মানুষকে দোষারোপ করা সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। প্রচলিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেনো এর প্রথম কারণ, মানুষ একটা কথা শুনে এর সত্যায়ন না করে ছড়িয়ে সোস্যাল মিডিয়াতে। এভাবে একটা ভিত্তিহীন কথা ছড়িয়ে পড়ে পুরো বিশ্বজুড়ে।
নবী করিম (সা.) বলেছেন, মুমিনদের প্রতি তোমরা ভালো ধারণা পোষণ করবে। অনুমান করেও কিছু বলা যাবে না। কারণ আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ, তোমরা অধিকাংশ অনুমান থেকে দূরে থাক। কারণ অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ (সুরা আল হুজরাত, আয়াত-১২)।
পরিশেষে বলি,আমরা অন্যের সাথে হিংসা করা ছেড়ে দেই,অন্যের দোষচর্চা,মিথ্যা অপবাদ, দুর্নাম রটানো ছেড়ে দেই। এগুলো খুবই খারাপ জিনিস। এসব কাজ আপনাকে কখনোই প্রশান্তি দেবেনা। বরং আপনার জীবনে নেমে আসবে অশান্তি আর অশান্তি।আর এর কারণে আপনার পরিবারও থাকে অশান্তিতে।তাই আসুন আমরা অন্যের দোষচর্চা ছেড়ে দেই,অন্যকে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া থেকে বিরত থাকি।একটা কথা শুনেই তাহকীক বা সত্যায়ন না করে এটাকে না ছড়াই।এমন কাজ ইসলাম কখনো সমর্থন করেনা।
আল্লাহ তায়া’লা আমাদেরকে সঠিক বুঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুক, আমিন।
এনটি
 
                              
                           
                              
                           
                         
                              
                           
                        
                                                 
                      
                                                  
                                               
                                                  
                                               
                                      
                                         
                                      
                                         
                                      
                                        