বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৫ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ৯ শাওয়াল ১৪৪৫


আদর্শের একমাত্র ঠিকানা ও আমাদের অবস্থান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

জহির উদ্দিন বাবর
সাংবাদিক ও কলামিস্ট

প্রকৃতিগতভাবেই মানুষ অনুসরণ ও অনুকরণপ্রিয়। সব ক্ষেত্রেই আমরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কারও দেখানো পথ অনুসরণ করি। জীবনচলায় এটা মানুষের জন্য নিরাপদ। যেকোনো অজানা গন্তব্যে যেতে হলে চেনা-জানা কারও নির্দেশনা অনুযায়ী চলাই সমীচীন। নিজে নিজে অজানা পথ মাড়াতে গেলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। মানুষের জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে অনুসরণযোগ্য ব্যক্তিত্ব পাওয়া অসম্ভব।

আপনি দুনিয়ার যে কাউকে অনুসরণ করুন, তার প্রতিটি কর্মকা- আপনার আস্থায় আসবে না। কোনো না কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি এর মধ্যে পাওয়া যাবে। এতে তার প্রতি আপনার আস্থা ও বিশ্বাসে চিড় ধরা স্বাভাবিক। মানবেতিহাসে একমাত্র মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা. ছাড়া পূর্ণাঙ্গ আদর্শ বা মডেল কোনো ব্যক্তিত্ব নেই। তাঁর পূর্ণতার সার্টিফিকেট খোদ ¯্রষ্টা দিয়ে দিয়েছেন। শুধু তাঁর জীবন ও আদর্শের মধ্যেই আপনি খুঁজে পাবেন জীবনচলার পাথেয়।

মানবজীবনের ঐকান্তিক সফলতা নিহিত আছে তাঁর আদর্শে। মুসলমান হিসেবে তাঁকে অনুসরণ করা, তাঁর দেখানো পথে চলা, তাঁর আদর্শের বাস্তবায়ন ঈমানের অনিবার্য দাবি। রাসুল সা.-কে ভালোবাসা ও তাঁর আনুগত্য করাই হচ্ছে আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্যতার মাপকাঠি। আল্লাহ বলেন, ‘(হে নবী) বলুন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস, তবে আমাকে অনুসরণ করো। আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ [সুরা আলে ইমরান-৩১]

একজন মুমিনের ঈমানের অনিবার্য দাবি হচ্ছে, তার স্ত্রী-পরিজন, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্তুতির চেয়ে রাসুলকে বেশি ভালোবাসবে। হাদিসে আছে, ‘তোমরা তোমাদের সন্তান পিতা-মাতা ও সবার চেয়ে আমাকে যতক্ষণ না বেশি ভালোবাসবে ততক্ষণ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না।’ [বুখারি] মুসলমান বলে দাবি করলে তাঁকেই মানতে হবে, তাঁর আদর্শের কাছেই বারবার ফিরে যেতে হবে। তাঁর আদর্শ ও নির্দেশিত পথ মানবজাতির এমন এক ঠিকানা যা ভুল করলে কখনও কেউ সাফল্যের মুখ দেখতে পারবে না। জীবনের বাঁকে বাঁকে প্রিয়নবী সা.-ই হলেন আমাদের প্রকৃত সহায়ক, কাক্সিক্ষত গন্তব্যে পৌঁছার একমাত্র রাহবার। তিনি শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী, প্রৌঢ়-প্রৌঢ়া, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সবার পথের দিশা।

রাসুল সা. ছিলেন সৃষ্টির সেরা মানুষ। নিরপেক্ষ প্রাচ্যবিদরাও অকপটে স্বীকার করেছেন, তিনি সব যুগের সেরা মানুষ। আপনি যে কেউই হোন না কেন তাঁর জীবনাদর্শে খুঁজে পাবেন মূল্যবান পাথেয়। আপনি ব্যবসায়ী হলে মক্কা-মদিনা ও সিরিয়ার ব্যবসায়ী কাফেলায় নেতৃত্বদানকারীকে দেখুন। আপনি রাষ্ট্রপ্রধান হলে মদিনার খেজুর পাতার ছাউনিতে বসে বিশাল সা¤্রাজ্য পরিচালনাকারী শাসককে দেখুন। আপনি প্রজা হলে কুরাইশদের শাসিতের দিকে একটু তাকান। আপনি বিজয়ী হলে বদর-হুনাইন ও মক্কা বিজয়ীর আচরণ লক্ষ্য করুন। আপনি পরাজিত হলে উহুদের বিপর্যয় থেকে শিক্ষা নিন।

শিক্ষক হলে সুফফার সেই মহান শিক্ষকের পাঠদান অনুসরণ করুন। শিক্ষার্থী হলে জিবরাইলের সামনে বসা শান্তশিষ্ট ও অতিশয় ভদ্র সেই ছাত্রের কথা স্মরণ করুন। বক্তা হলে মসজিদে নববিতে দাঁড়ানো মিষ্টভাষী সেই খতিবকে দেখুন। সত্য প্রচার করতে গিয়ে প্রতিকূলতায় পড়লে একটু তাকিয়ে দেখুন মক্কার সেই অনাথ শিশুটির দিকে, যার আশ্রয়-প্রশ্রয়ের কোনো জায়গা ছিল না। দীর্ঘ সংগ্রামে শত্রুদের পরাজিত করলে আপনি অনুসরণ করুন মক্কা বিজয়ী উদার সেই বীর সেনানীকে। আশ্রয়হীন-এতিম হলে দেখুন আব্দুল্লাহ ও আমেনার সেই আদরের দুলালকে।

একজন শিশুর জন্যও হালিমা সাদিয়া রা.-এর কোলের সেই শিশুটি আদর্শ। আপনি যুবক হলে মক্কার হিলফুল ফুজুলের সেই যুবককে দেখুন, যিনি আল আমিন বা সত্যবাদী হিসেবে বিশ্বখ্যাত। মুসাফির হলে বাণিজ্যিক কাফেলায় সিরিয়া-বসরা সফরকারী সেই বণিককে দেখুন। আপনি বিচারক হলে দেখুন ওই শালিসকারী ও বিচারককে যিনি হাজরে আসওয়াদ স্থাপন নিয়ে দ্বন্দ্বের সুরাহা করে দিয়েছেন অসাধারণ দক্ষতা ও কৌশলে।

মদিনার খেজুর পাতা বেষ্টিত কাঁচা ঘরে বসা সেই বিচারকের ঐতিহাসিক রায় আজও মানবতাকে ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনের পথ দেখায়। আপনি স্বামী হলে খাদিজা রা. ও আয়েশা রা.-এর আদর্শ স্বামীকে অনুসরণ করুন। পিতা হলে দেখুন ফাতেমা রা.-এর আদর্শ বাবাকে। এককথায়, আপনি যে কেউই হোন না কেন, আপনার অবস্থান যাই হোক তাঁর জীবনে আপনি খুঁজে পাবেন সঠিক দিশা। কাক্সিক্ষত গন্তব্যে পৌঁছতে তিনিই মানবজাতির একমাত্র আদর্শের ঠিকানা।

মুমিনের সামনে স্বচ্ছ আয়নার মতো নববি আদর্শের বাস্তব চিত্র স্থির হয়ে আছে। সে চিত্রের সঙ্গে নিজেদের জীবনের রূপটা পরখ করে দেখলেই প্রত্যেকের স্ব-স্ব পরিচয় উদ্ভাসিত হয়ে যাবে। অনুমান করতে কষ্ট হবে না, আমাদের জীবনচিত্র সে ছাঁচের কাছে কতটা বেমানান। আদর্শিক বিচারে নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা.-এর পথ ও পদ্ধতি অনুসরণের কোনো বিকল্প নেই।

আমরা যে কেউই হই না কেন, আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের জন্য রাসুলের জীবনে রয়েছে অনন্ত পাথেয়। অন্ধকারে আলোকদিশা পাওয়ার প্রোজ্জ্বল জ্যোতি একমাত্র তাঁর আদর্শেই বিরাজমান। জীবনের সব ঝঞ্ঝা, সংকট ও সমস্যাকে জয় করতে হলে রাসুলে সা.-এর জীবনাদর্শের ডাকে সাড়া দিতে হবে। কারণ অনির্বাণ এ আদর্শই হলো কেয়ামত পর্যন্ত আগত-অনাগত সব মানুষের মুক্তি ও সফলতার চিরন্তন অঙ্গীকার।

লেখক : সভাপতি, ইসলামী লেখক ফোরাম বাংলাদেশ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ