শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


ইটপাথরের শহরে ছাদবাগান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রোকন হারুন

দিনদিন শহরের জায়গা সঙ্কুচিত হচ্ছে ৷ গাছের অস্তিত্ব কমে যাচ্ছে ৷ পরিবেশ ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে ৷ ফলে সুষ্ঠ-জীবন যাপন একরকম অপরিচিত হয়ে পড়ছে ঠিক স্বপ্নের মত ৷ অথচ প্রকৃতির সাথে মানুষের সখ্যতা ও মৌন-টান জন্মগত ৷

প্রকৃতির সবুজ ছোঁয়ায় দেহপ্রাণ সজিবতায় ভরে-উঠে ৷ কিছুতেই দূরত্ব সম্ভব নয় ৷ এক কথায় প্রকৃতির ছায়া ছাড়া মানব-জীবন অপূর্ণ ৷

মানবজীবনের বিশাল অংশ যেমন গাছ-গাছালির ছায়া ছাড়া অপূর্ণ, পৃথিবী-পরিবেশও গাছ-গাছালির ছায়া ছাড়া বিকলাঙ্গ ৷ পর্যাপ্ত পরিমাণ গাছ-গাছালির উৎপাদনে পরিবেশর ভারসাম্যতা ঠিক থাকে ৷

কার্বনডাই অক্সাইড, দূষিত বাতাস, বড় বড় কম্পানির জ্বালানি অগ্নিকুণ্ডের ধোঁয়া যা পরিবেশকে বিষাক্ত করে তুলে তা, গাছ-গাছালি গ্রহণ করে নির্মল শুদ্ধ অক্সিজেন তৈরি করে ৷ ফলে বিষাক্ত শ্বাসের রোধ ঘটিয়ে নির্মল বায়ু সহজে গ্রহণ করতে পারি ৷

কিন্তু শহরে পর্যাপ্ত পরিমাণ গাছ-গাছালির উৎপাদন নেই ৷ মানুষ বসবাসের হার অনুযায়ী গাছ-গাছালি নেই ৷ ফলে শহুরে জীবন অস্বস্হিকর ও অস্বাভাবিক হয়ে পড়েছে ৷ বিশেষ করে জ্বালানি অগ্নিকুণ্ডের ধোঁয়ায় শহরময়ে বিষাক্ততা ছড়িয়ে পড়ছে ৷ বিষাক্ত শুষ্ক আবহাওয়ায় শ্বাস নেয়ায় ফলে রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে ৷

পরিবেশ ভারসাম্যতায় বিঘ্ন হওয়ায় সুপেয় পানি গড়ে প্রতি বছর এক থেকে দু’ফুট নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে, যে কারণে ভবিষ্যতে পানি শূন্যতার প্রকটতায় জনজীবন নিঃশেষ হওয়ার আশঙ্কা, এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ গাছ-গাছালির উৎপাদন না করলে ভবিষ্যত জনজীবনও ধ্বংসের মুখে পড়বে ৷

ছাগবাগান বিষয়ে পড়তে পাড়েন এ বইটি ছাদে বাগান

একটু জনসচেতনতা, গাছ-গাছালির প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা, প্রকৃতি-শিকড়ের প্রতি টান, বাঁচাতে পারে নিশ্চিত মৃত্যুকায় হুমকির মুখ থেকে ৷ সেই সাথে গাছ-গাছালি দিয়ে সাজাতে পারি সুন্দর নগরিকে ৷ গড়ে তুলতে পারি সমাজ-জীবন সুখকররূপে ৷

আসুন, ছাদের ফাঁকা জায়গা সবুজায়ন গাছ-গাছালি দ্বারা পূর্ণ করি ৷ জুঁই চামেচি চন্দ্রমল্লিকা দোলনচাঁপা রঙ্গন গোলাপ অর্কিড ডালিয়া হাছনাহেনা প্রভৃতি ফুল টবে টবে রোপণ করি ৷

সুন্দরের প্রতিক ঝুমকা লতা কুঞ্জলতা বেলকনিতে পালতে পারি ৷ তা সহজেই জানলার গ্রিলে শাখা মেলে ৷ অদ্ভূত রকমের সুন্দর প্রজাতির ফুল ৷ এছাড়াও মাঝাড়ি গড়নের ফলের গাছ লাগাতে পারি৷

কলমদেয়া আম গাছ লিচু গাছ, চেরিফল করমচা বেদানা ডালিম কুলবরই পেয়ারা প্রভৃতি ৷ তাতে বিষাক্ত ফলের বিকল্প হিসাবে সুস্বাদু ঋতুফল খেতে পারব, এবং প্রিয়জনদের বাড়িতেও পাঠাতে পারব ৷ এতে ফর্মালিনমুক্ত সম্পর্ক গড়ে উঠবে ৷

এছাড়াও পাশাপাশি সবজি চাষ করে আর্থিক লাভবান হতে পারি, যেমন চালকুমড়া মিষ্টি কুমড়া পুঁইশাক ডাটা-শাক, বেগুন ঢেঁড়শ টমেটো মরিচ লেবু, প্রভৃতির চাষে নিজ হাতে তৈরি কাঁচাবাজার উৎপাদন করতে পারি ৷

তাতে সংসারের অনেকাংশেই খরচ বেঁচে যাবে এবং ভেজালমুক্ত তরকারি খেতে পারব ৷ ভেজালযুক্ত, বিষাক্ত ফর্মালিনের কবল থেকে বেড়িয়ে আসতে পারব ৷ বহু রোগব্যাধি থেকেও পাব মুক্তি ৷

এভাবে আমাদের পরিবার সমাজ হয়ে উঠবে আত্মনির্ভর ৷ তাতে যেমন নিজেদেরও লাভ তেমনই অন্যদের এবং রাষ্ট্রেও লাভ ৷ শহুরে প্রতিটি ছাদে যদি, মনমতো করে ছাদবাগান গড়ে তুলতে সচেষ্ট হই তাহলে অন্যদের জন্য আমরা মডেল হতে পারি ৷ সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে উল্লেখযোগ্য একক ভূমিকা রাখতে পারি ৷

-তরুণ আলেম ও লেখক


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ