বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ঘোষিত জুলাই সনদ বাস্তবায়নসহ ৫ দফা দাবিতে আজ রোববার (১২ অক্টোবর) দেশের প্রায় সব জেলা শহরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে ।
ঢাকা জেলায় মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা সানাউল্লাহ আমীনের নেতৃত্বে স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকের হাতে তুলে দেন। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বায়তুলমাল সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মুরশেদ সিদ্দিকী, ঢাকা জেলা দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক মাদবর আলী আহমদসহ নেতৃবৃন্দ, সিলেট জেলায় জেলা সভাপতি মাওলানা ইকবাল হোসাইনের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসকের হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন যুগ্মমহাসচিব মাওলানা আব্দুল আজিজ, সমাজকল্যাণ সম্পাদক মাওলানা সামিউর রহমান মুসা, মহানগর সভাপতি মাওলানা এমরান আলমসহ নেতৃবৃন্দ। চট্টগ্রাম খুলনা,ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, কক্সবাজার, যশোর, কুষ্টিয়া, বগুড়া, ফেনী, নোয়াখালী, পাবনা, বাগেরহাট, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, মুন্সিগন্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ,পটুয়াখালী, কিশোরগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, পটুয়াখালী, ঝিনাইদহ, ভোলা, জামালপুর, নেত্রকোণা, শেরপুর, টাঙ্গাইল, দিনাজপুর, চুয়াডাঙ্গা, নাটোর, খাগড়াছড়ি, ঝালকাঠি, গাইবান্ধা ও পঞ্চগড়সহ দেশের প্রায় সব জেলা শহরে সংশ্লিষ্ট শাখার নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিলসহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন।
অনেক জেলায় স্মারকলিপি হস্তান্তরের আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশও অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বক্তারা বলেন— জুলাই সনদ বাস্তবায়নই জাতির মুক্তির একমাত্র পথ।
প্রদত্ত স্মারকলিপিতে সরকারকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য “সাংবিধানিক আদেশ” জারি এবং নির্বাচনের পূর্বে গণভোট আয়োজনের আহ্বান জানানো হয়। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে বলা হয়— এই পদক্ষেপই জাতিকে সংকটমুক্ত করবে, জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনবে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করবে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে আপনার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রের প্রয়োজনকে সামনে রেখে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্রে সংস্কার ও স্বৈরাচার ফিরে আসার সকল পথ রুদ্ধ করার প্রত্যয় নিয়ে কাজ শুরু করে। গঠিত হয় বিভিন্ন সংস্কার কমিশন। কমিশনগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৬৬টি প্রস্তাবের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে আলোচনায় মিলিত হয়। দীর্ঘ আলোচনার পর ৮৪টি প্রস্তাব সিদ্ধান্ত আকারে গৃহীত হয়। অনেকগুলো প্রস্তাবের সাথে কতিপয় রাজনৈতিক দল ভিন্নমত পোষণ করায় সেগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।
সরকার ইতোমধ্যেই জুলাই জাতীয় ঘোষণাপত্র ও জুলাই জাতীয় সনদ প্রস্তুত করেছে। দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল জুলাই জাতীয় ঘোষণাপত্র ও জুলাই জাতীয় সনদে প্রয়োজনীয় সংশোধনীসহ তাদের পরামর্শ সরকারের নিকট উপস্থাপন করেছে। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস বরাবরই জুলাই জাতীয় সনদকে আইনগত ভিত্তি দেওয়ার বিষয়ে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। জাতির ক্রান্তিলগ্নে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ হিসেবে অতীতের বিভিন্ন নজির ও উদাহরণ তুলে ধরে জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তির বিষয়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস অবস্থান বারবার ব্যক্ত করে আসছে। এ লক্ষ্যে জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তি দেওয়ার জন্য আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ইতোমধ্যে সরকারের কাছে লিখিতভাবে দুটি প্রস্তাব করেছে—
প্রথমত, জুলাই জাতীয় সনদের জন্য “সংবিধান আদেশ” জারি করা।
দ্বিতীয়ত, এই সনদের অধিকতর আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য নির্বাচনের পূর্বে গণভোট প্রদান করে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা।
সেটা না হলে জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তি প্রদান ব্যতীত ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত অভ্যুত্থান ও তার অর্জন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে বলে আমরা মনে করি।
আমরা লক্ষ্য করছি, জনগণের দাবিসমূহ কার্যকর করার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। এমতাবস্থায় জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি ন্যায়ভিত্তিক ও জবাবদিহিতামূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্ররূপে গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দাবি জানিয়ে আসছে। এরই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল সেপ্টেম্বর মাসে ৫-দফা গণদাবি জাতির সামনে উপস্থাপন করেছে এবং রাজধানীসহ প্রতিটি বিভাগীয় শহর, জেলা ও উপজেলায় সমাবেশ, বিক্ষোভ ও গণসংযোগ করেছে। এসব কর্মসূচিতে সারাদেশে বিপুল জনগণ অংশগ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ৫ দফা দাবি:
১️.জুলাই সনদের অবিলম্বে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন।
২️.জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ।
৩️.আগামী নির্বাচনে প্রকৃত লেভেল-প্লেইং ফিল্ড নিশ্চিত করা।
৪️.জুলাই গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান করা।
৫️.জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষে PR পদ্ধতি বাস্তবায়ন।
এলএইস/