বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫ ।। ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ ।। ২ জিলহজ ১৪৪৬


ইসলামপন্থার প্রতি সমর্থন অনেক বাড়লেও কাজে লাগানো যাচ্ছে না কেন?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ফারুক ফেরদৌস

বাংলাদেশে গত এক দশকে ইসলামপন্থার প্রতি সমর্থন অকল্পনীয় রকম বেড়েছে। এটা এ দেশের ইসলামি চিন্তাবিদ ও দলগুলোর যোগ্যতায় যতটা হয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি হয়েছে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতির সুযোগে বৈশ্বিক ইসলাম ও মুসলমানদের সাথে বাংলাদেশের মুসলমানদের সম্পর্ক বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে।

বাংলাদেশের মুসলমানরা এ দেশের ইসলামপন্থীদের সাংস্কৃতিক দারিদ্র্য ও প্রতিবেশী দেশটির সাংস্কৃতিক আধিপত্যের মুখে অনেকটা ডমিনেটেড ছিল। যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি আরও স্পষ্টভাবে বলতে গেলে ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক ওই ডমিনেন্স ভেঙে দিয়েছে।

বাংলাদেশের মুসলমানরা এখন খুব সহজেই বিভিন্ন দেশের প্রভাবশালী ইসলামি চিন্তাবিদদের কথা শুনতে পারে, বিভিন্ন মতের সাথে পরিচিত হতে পারে যাদের মধ্যে বাংলাদেশের আলেমদের মতো চিন্তাগত দারিদ্র্য ও সংকীর্ণতা নাই।

তারা খুব সহজেই তুর্কি সিরিয়াল, পাকিস্তানি ড্রামা দেখে এবং অনুভব করে তারা তো আমাদের মতোই, আমাদের চেয়ে বেশি আধুনিক!

এই দেশে প্রতিবেশীদের দাগাগ প্রগতিশীলরা পাকিস্তান ঘৃণার যে বাতাবরণ তৈরি করে রেখেছিল, জেনজির মধ্যে তা নাই করে দিয়েছে পাকিস্তানি ড্রামাগুলো। প্রগতিশীলরা তাদের বুঝিয়েছিল পাকিস্তান মানে একটা পাহাড়ের গুহা যেখানে বড় বড় দাড়ি আর দাঁতওয়ালা মোল্লারা থাকে। কিন্তু বাস্তবে জেনজি দেখেছে ওরা তো ভবতীয়দের চেয়ে অনেক বেশি রুচিশীল, বেশি সুন্দর!

জেনজির মধ্যে মূল ভারতীয় মুভি-সিরিয়াল দেখা (দক্ষিণ ভারতীয় নয়) এখন সেকেলে বা খ্যাত রুচির পরিচয়, পাকিস্তানি ড্রামা দেখা রুচিশীলতা। ফেসবুকে বড় বড় ফ্যান গ্রুপ পাবেন পাকিস্তানি ড্রামার যেগুলোর সদস্য বেশিরভাগ জেনজি পোলাপান।

ফলে জুলাইয়ে পাকিস্তানপন্থী বা রাজাকার বলে হাসিনা ওদের দমাতে পারে নাই। ওরা বলছে হ আমরা রাজাকার, তাতে সমস্যা কী? আমি ইস্ট ওয়েস্ট, নর্থ সাউথ এবং ব্র্যাকের পোলাপানরে দ্বিধাহীন সানন্দ স্লোগান দিতে দেখছি, আমরা রাজাকার! এটা আগের বয়ান বা বাতাবরণ টিকে থাকতে অসম্ভব ছিল। আর তুর্কি সিরিয়ালগুলো মুসলমানদের গৌরবময় ইতিহাস-ঐতিহ্যের ব্যাপারে জনসাধারণের সচেতনতা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।

শুনে কিছুটা অবাক হবেন অনেকে, আমার মাদরাসার এক সিনিয়র ভাই আমাকে বলেছিলেন, তিনি এক মসজিদে তারাবি পড়াতেন। হঠাৎ এক বছর তিনি তারাবি পড়াতে গিয়ে দেখলেন মুসল্লি গত বছরের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। বিশেষত তরুণ নিয়মিত মুসল্লি অনেক বেশি।

অনেকের সাথে কথা বলে এর কারণ তিনি আবিষ্কার করেছিলেন, অনেকেই তুর্কি সিরিয়াল দেখে নিয়মিত ইসলাম পালনে আগ্রহী হয়েছে।

কারণ যাদেরকে মানুষ নায়ক ভাবে, তাদের মতো হতে চায়। আর তুর্কি সিরিয়ালের নায়করা তাদের সব স্বাভাবিক কাজকর্মের (প্রেমসহ) পাশাপাশি নামাজও পড়ে।

এর সাথে আপনি ইসলামের আদর্শ, চেতনা ইত্যাদি মেলাতে পারবেন না অনেক ক্ষেত্রে, কিন্তু এটা হলো বাস্তবতা।

এগুলো সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পরিবর্তনের কথা বললাম। রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও গত দশকে মুসলিম বিশ্বে বড় পরিবর্তন ঘটেছে। আরব বসন্ত হয়েছে। বিভিন্ন দেশে জনসমর্থন নিয়ে ইসলামি দলগুলো ক্ষমতায় এসেছে। এরদোয়ান সফলভাবে তুরস্কের ক্ষমতায় টিকে থেকেছেন এবং তার নেতৃত্বে তুরস্ক পৃথিবীতে প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে।

ইসলামপন্থী দলের শাসন বলতে আগে পর্যন্ত মানুষের চোখে ভেসে উঠতো আফগানিস্তানের চিত্র। এখন তুরস্ক, কাতার ইত্যাদি দেশগুলোর চিত্র ভেসে ওঠে।

তো এই সামগ্রিক বাস্তবতায় বাংলাদেশে ইসলামপন্থার প্রতি সমর্থন অনেক বেড়েছে। কিন্তু ওই সমর্থন পাতে নেওয়ার মতো ইসলামি কোনো দল বা জোট রাজনীতির মাঠে এখনও হাজির হতে পারেনি। যে দলটার কিছুটা সাংগঠনিক শক্তি ও সম্ভাবনা ছিল, তারা বর্তমানে থেকে রাজনীতি করার সুযোগই পাচ্ছে না। বর্তমানের চেয়ে ইতিহাসের দায় মোচনেই তাদের শ্রম ও মেধা বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে।

অনেকে ভেবেছিল এনসিপি এরদোয়ান বা ইমরান খানের দলের মতো প্রো-ইসলাম দল হতে পারে। দল গঠনের আগে তাদের পক্ষ থেকেও এ রকম বক্তব্য দেখেছিলাম। কিন্তু বাস্তবে সেটা হয়নাই। ফলে শূন্যতা থেকেই গেছে। আর বাকি যে সময় আছে, এর মধ্যে আর কতটুকু কী সম্ভব জানি না।

লেখক: সাংবাদিক, লেখক ও চিন্তক

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ