জাগ্রত কবি, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সমাজ চিন্তক মুহিব খান বিএনপিকে পাঁচ দফা পরামর্শ দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে তিনি এসব পরামর্শ তুলে ধরেন। এর আগে তরুণদের নেতৃত্বে নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) পাঁচটি পরামর্শ দিয়েছিলেন কবি মুহিব খান। বিএনপিকে দেওয়া কবির পরামর্শগুলো হুবহু নিচে তুলে ধরা হলো-
১.
বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি তথা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিকে মনে রাখতে হবে- এক সময় বিএনপি দলটা ছিল না। তারপর এক উদ্ভূত জাতীয় পরিস্থিতির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে একজন দেশপ্রেমিক সামরিক অফিসার, পূর্ব-অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের চিন্তা দর্শন ও রাজনৈতিক রূপরেখায় দলটি গঠিত হয়েছিল এবং এর মাত্র কয়েক বছর আগেই মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব প্রদানকারী দেশের সবচেয়ে পুরনো এবং প্রতিষ্ঠিত দল আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ করে সেই নতুন দলটি দেশের প্রায় ৫০ ভাগ নাগরিকের অকুণ্ঠ সমর্থন লাভ করেছিল; যেমনটি এর পরবর্তী বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্য কোন প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর পক্ষে আর সম্ভব হয়নি।
ভুলে গেলে চলবে না- সেই প্রেক্ষাপটটি কী ছিল এবং শহীদ জিয়ার কোন ধরনের রাজনৈতিক আদর্শ এবং রূপরেখা এত দ্রুত এত সংখ্যক জনগণকে নিতান্তই নতুন একটি দলের দিকে চুম্বক আকর্ষণে টেনে এনেছিল। এটাই বিএনপির মূল পরিচয়, মূল বৈশিষ্ট্য এবং মূল শক্তি; যা এখনকার বিএনপির একটি বৃহৎ অংশ একেবারেই ভুলে বসে আছে।
শহীদ জিয়াউর রহমান আগে থেকে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত না থাকলেও তিনি যে বাংলাদেশের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম রাজনীতিবিদদের একজন, সে প্রমাণ তার প্রতিষ্ঠিত এখনো পর্যন্ত বিপুল জনপ্রিয় দল বিএনপি। সঠিক সময়ে গোটা জাতির চিন্তা এবং চাওয়া অনুভব করতে পেরেছিলেন বলেই তিনি তার সঠিক রাজনীতিটি বাস্তবায়ন করতে পেরেছিলেন। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তিনি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন যে-
ক. এই জাতি পশ্চিম পাকিস্তানিদের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক প্রহসন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ করে মানচিত্র ভাগ করে নিলেও তারা ইসলামী চেতনা ও জীবন ধারার বিপক্ষে কোন অবস্থান ও চক্রান্ত মেনে নিতে মোটেও রাজি নয়।
খ. এই জাতি একটি রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হওয়ার পর ভারতের দাসত্বের শৃংখলে আবদ্ধ হতে মোটেও রাজি নয়।
গ. শুধুমাত্র 'বাঙালি' শব্দটি দিয়ে এই জাতির জাতীয় পরিচয় পূর্ণাঙ্গ হয় না, কারণ বাংলা ভাষাভাষী অনেক বাঙালি ভারতেও রয়েছে, কাজেই বাংলাদেশের মানচিত্রের নাগরিকদের পরিচয় হতে হবে 'বাংলাদেশী'। অতএব 'বাংলাদেশী' শব্দটিই হবে এই জাতির স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও স্বাতন্ত্র্যের রক্ষাকবচ।
এই ৩টি প্রধান দর্শনের ভিত্তিতে তিনি জাতিকে আহবান করেছেন মাত্র, আর অমনি দেশের অজস্র ধর্মপ্রাণ, স্বাধীনচেতা, জাতীয়তাকামী জনগণ একজন পূর্ব-অরাজনৈতিক সামরিক ব্যক্তিত্বের ডাকে সাড়া দিয়ে এক সুবিশাল রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলে। সেই প্রধান ৩ দর্শন- ইসলামের প্রতি অনুরাগ, ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরোধিতা এবং জাতীয় পরিচয়ের গৌরবজনক ঐতিহ্য ছেড়ে দেওয়া হবে বিএনপির জন্য আত্মহননের শামিল। বিএনপি যদি তাদের জন্মলগ্নের ভিত্তিমূলক এই ৩টি আদর্শের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। যদি অসাম্প্রদায়িক চেতনার নামে ইসলামের প্রতিকূলে অবস্থান নেয়, যদি ক্ষমতাসীন হওয়া ও ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য ভারতের করুণা প্রত্যাশী সেবাদাসে পরিণত হয়, যদি আন্তর্জাতিক রাজনীতির হিসেব-নিকেশে দেশের সার্বভৌমত্ব বিরোধী কোন অবস্থান গ্রহণ করে, তাহলে বিএনপি'র বিশেষ কোনো তাৎপর্য্য বা প্রয়োজনীয়তা এই জাতির কাছে আর অবশিষ্ট থাকবে না।
২.
একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে কেবল দলের নেতাকর্মী সমর্থকদের ব্যাপকতা ও শহীদ জিয়া ও বেগম খালেদা জিয়ার অবিসংবাদিত জনপ্রিয়তার উপর অন্ধ ভরসা না করে জাতীয় রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থানকে পূর্ণ সুসংহত ও দীর্ঘস্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য এদেশের ইসলামী রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে বিএনপি'র যথাযথ উপায় সব সময় জোটবদ্ধ হয়ে থাকা উচিত। কারণ দিন ও পরিস্থিতি একরকম যায় না। সেক্ষেত্রে এদেশের অগণিত ধর্মপ্রাণ নাগরিকের প্রকৃত প্রতিনিধিত্বশীল আলেম সমাজ এবং নীতিবান ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোকে যৌক্তিক দায়িত্ব এবং সম্মানজনক অংশীদারিত্বের শর্তে কাছে টেনে নিতে হবে এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
সুনাম বদনাম যাই হোক, বাস্তবতা এই যে, অন্তত আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির ভোটের সংকট হবে না, তাই ইসলামী শক্তির সঙ্গে রাজনৈতিক জোটের ক্ষেত্রে কেবল সাংগঠনিক সক্ষমতা ও ভোটের হিসাবকে প্রাধান্য দিয়ে অতীতের কোন সুযোগসন্ধানী শক্তিকে ঘনিষ্ঠ সঙ্গী বানিয়ে নিজ অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়ার ভুলটি পুনরায় করা উচিত হবে না। উচিত হবে না অতীতে প্রমাণিত দ্বিচারিতার স্বভাব-দুষ্ট এমন কোন ইসলামী নেতৃত্ব বা সংগঠনকে আবারও কাছে ভিড়তে দেয়া, যারা জাতীয় সংসদে একান্ত নিজেদের দু'একটি আসন বাগিয়ে নেওয়ার যোগ্যতা প্রমাণের জন্য দেশের লক্ষ কোটি সরল সহজ মাদরাসা শিক্ষার্থী ওলামা ও তৌহিদী জনতার আবেগ, রক্ত ও শক্তিকে মাঠে ময়দানে ব্যবহার ও প্রদর্শন করে থাকে।
বরং সচেতনভাবে দেশের প্রতিটি শহরে নগরে গ্রামে গঞ্জে পাড়ায় মহল্লায় ছড়িয়ে থাকা জন-প্রতিনিধিত্বশীল লক্ষ লক্ষ আলেম ইমামদের সমর্থিত দায়িত্বশীল নীতিবান জাতীয় ইসলামী ব্যক্তিবর্গকে বেছে বেছে যথাযথ অবস্থানে গ্রহণ করতে হবে। বর্তমান বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত শীর্ষ নেতৃত্বে একজন পুরুষ নেতার অবস্থান থাকার সুবাদে সসম্মানে ঘনিষ্ঠ করে নিতে হবে নারী নেতৃত্বে অনাগ্রহী সুসংগঠিত ও সুবিস্তৃত ইসলামী দল ও সংগঠনগুলোকেও। পাশাপাশি ধর্মীয় মূল্যবোধসম্পন্ন দেশপ্রেমিক অন্যান্য রাজনৈতিক দলকেও। এই ঐক্যের সুদূরপ্রসারী এবং স্থায়ী সুফল বিএনপিকে আন্দোলনে, নির্বাচনে, দেশ শাসনে এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মোকাবেলায় যথেষ্ট সমর্থন ও সুরক্ষা প্রদান করতে থাকবে।
৩.
বস্তুত ২০০০ সালের পূর্বাপর সময় থেকে ক্রমান্বয়ে বিএনপি'র নেতৃত্বের শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত অতি সুকৌশলে ভারতপন্থী লোকদের অনুপ্রবেশ ঘটে ও ঘটানো হয়। তারা তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সারাদেশে বিএনপির নেতৃত্বের উচ্চ থেকে মধ্যসারিতে প্রকৃত রাজনীতিবিদ ও ত্যাগী নেতাদের কোণঠাসা করে লোভী স্বার্থপর ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের দৌরাত্ম্য বাড়িয়ে তোলেন এবং জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়নের ক্ষেত্রে অযোগ্য অথর্ব দুশ্চরিত্র গণধিকৃত লোকজনদের বাছাই করেন এবং বিএনপির কেন্দ্রকে খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া এবং মহাসচিবের পরিচয়ে ভেতরে ভেতরে তিন ভাগে বিভক্ত করেন, যার প্রতিক্রিয়া দেশের অনেক জেলা ও থানা কমিটিতে পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন আসনে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রাপ্তির দাবি করেন। কেন্দ্রের তিন অংশের আশ্বাস নিয়ে তিন প্রার্থীর মিছিল একই শহরে একই দিনে প্রদক্ষিণ করে, মুখোমুখি হয় এবং সংঘাতে জড়ায়। নির্বাচনে একজনের বিরুদ্ধে অপর দুজনের কর্মী সমর্থকরা গোপনে অসহযোগিতা করে এবং পরাজিত করিয়ে দেয়।
পূর্বে ঘটে যাওয়া এই বিষয়গুলো গভীরভাবে যাচাই করে দেখতে হবে এবং গোটা নেতৃতত্বের কর্মকাণ্ড ও উপযোগিতাকে পুনর্বিবেচনায় আনতে হবে।
উল্লেখ্য যে, দেশের রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপটে এসেও দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের কতকের ব্যাপারে নাস্তিকতা, ধর্মবিদ্বেষ ও ভার#তীয় অণুচর-বৃত্তির অভিযোগ এবং প্রমাণ আলোচিত হয়ে চলেছে। এসব অভিযোগ ও প্রমাণ অগুরুত্বপূর্ণ নয়। শক্ত হাতে এবং সুকৌশলে অতি দ্রুত জনগণের এই দলটিকে ভারত চীন ইসরাঈল ও পশ্চিমা অনুচরমুক্ত করতে হবে। ত্যাগী নেতা ও প্রকৃত রাজনীতিবিদদের সসম্মানে দলে উপযুক্ত অবস্থান করে দিতে হবে এবং আসন্ন নির্বাচনে প্রতিটি আসনে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য এবং নীতি আদর্শবান প্রকৃত জননন্দিত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে এনে মনোনয়ন প্রদান করতে হবে। "এবারের নির্বাচনে বিএনপির টিকেটে কলা গাছ দাঁড়ালেও পাস করবে" এই অমূলক তত্ত্ব এবং বিশ্বাস থেকে বিএনপিকে বের হয়ে আসতে হবে।
যারা কেবল ব্যক্তি স্বার্থের জন্য দলীয় পরিচয়কে বহন করে, যারা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের চিন্তা চেতনা জ্ঞান দর্শন ও রাজনৈতিক রূপরেখার ধারে কাছেও আসে না, এমনকি এসবের মানেটাও বোঝে না, তাদেরকে দলের ভেতর নিষ্ক্রিয় করে দিতে হবে। এতে কিছু নেতাকর্মী কমতে পারে কিন্তু গণআস্থা ও জনসমর্থন দিন দিন আকাশচুম্বী হয়ে উঠবে।
৪.
দলের ভিতরে ঘাপটি মেরে থাকা সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ মাদকসেবী দখলদার লোভী ও অহংকারী অশিক্ষিত উশৃংখল নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক কর্মশালার মাধ্যমে আধুনিক বিশ্ব রাজনীতির পরিস্থিতি ও আদর্শিক রাজনীতির প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তাদেরকে বোঝাতে হবে যে, পৃথিবী পাল্টে যাচ্ছে এদেশের সমাজ ও তারুণ্যের রুচি ও আকাঙ্খার উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে, আগের বস্তা পঁচা চুরি ছেচড়ামি ও গোঁয়ার গুন্ডামির রাজনীতির দিন শেষ হয়ে এসেছে, এসব করতে হলে তাদেরকে অন্য প্ল্যাটফর্ম খুঁজে নিতে হবে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দলে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের স্থান নেই এবং এ ধরনের লোকদেরও প্রয়োজন নেই। দেশ ও দেশের মানুষকে যারা প্রাণ থেকে ভালোবাসেন এবং যারা দেশের অক্ষুণ্ণ স্বাধীনতা সুশাসন উন্নয়ন কামনা করেন তারাই যেন এই দলটিতে অবস্থান করেন। এ ধরনের পদক্ষেপে দল হয়তো সাময়িক অসুবিধা ও অস্থিরতার মুখোমুখি হবে কিন্তু দলের পঁচনশীল এই প্রত্যঙ্গ গুলোর অপারেশন না হলে পুরো দলটিকেই একসময় পঁচে মরতে হবে। দলকে জীবাণুমুক্ত করতে গিয়ে অসৎ উশৃংখল নেতাকর্মীরা সাময়িক সংকট সৃষ্টি করে সরে গেলেও দেশের নীতি আদর্শবান দেশপ্রেমিক তারুণ্য নতুন বাংলাদেশে নতুন কোনো রাজনৈতিক শক্তির উত্থানের অপেক্ষায় না থেকে শহীদ জিয়ার বিএনপিতেই দলে দলে ঝাঁপিয়ে পড়বে। এই পরিবেশ এবং জায়গাটুকু বিএনপি'র নীতি নির্ধারকদের অতি দ্রুত তৈরি করে দিতে হবে এবং তারা এর সুফল সহসাই দেখতে পাবেন।
৫.
পঞ্চম এবং শেষ পরামর্শটি বিশেষভাবে জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার জিয়া-তনয় জনাব তারেক রহমানের উদ্দেশ্যে।
প্রথমতঃ আপনি আপনার পিতা এবং মাতার পাহাড়প্রতীম ব্যক্তিত্ব ও রাজনৈতিক সততার কারণেই বিপুল জননন্দিত। বর্তমান সময়ে এসে আপনিও আপনার নিজস্ব দূরদৃষ্টি ও পারঙ্গমতার কিছু স্বাক্ষর রেখে জনগণের আস্থা অর্জন করতে চলেছেন। আপনাকে অতি সতর্কতার সাথে এর ধারাবাহিকতাটুকু ধরে রাখতে হবে।
দ্বিতীয়তঃ দলের প্রাজ্ঞ ও জ্যৈষ্ঠ নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধার সম্পর্ক রেখে, আপনার মরহুম পিতা শহীদ জিয়াউর রহমানের প্রবাদপ্রতিম সততা স্বচ্ছতা ও নীতি আদর্শের উপর অবিচল থেকে, আপনার মাতা আপোষহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রজ্ঞা ও পরামর্শকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে, দেশবাসীর প্রাণের স্পন্দন ও হৃদয়ের আকাঙ্খাকে অনুধাবন করে নিয়ে, আপনাকে নিজ মেধা এবং সামর্থ অনুপাতে নির্ভুল পদক্ষেপে এগিয়ে যেতে হবে।
তৃতীয়তঃ দলকে বিদেশী দালাল, ধর্মবিদ্বেষী নাস্তিক, দুর্নীতিবাজ ও অপরাধী মুক্ত করে দেশের চিন্তাশীল আদর্শবান সভ্য রাজনৈতিক তারুণ্যকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপিকে এমন একটি দলে পরিণত করতে হবে, যেন নতুন প্রজন্ম আর কোন নতুন রাজনীতির জন্য তৃষ্ণার্ত হয়ে না থাকে বরং শহীদ জিয়ার বিএনপিই যেন দেশ ও মানুষের স্বপ্ন আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে যথেষ্ট হয়।
চতুর্থতঃ আপনাকে সর্বধর্ম ও সর্বমতসহিষ্ণু হতে হবে, তবে এদেশের প্রায় ৯৫ ভাগ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে সর্বাত্মকভাবে অনুধাবন ও মূল্যায়ন করতে হবে। ধর্মীয় এবং নৈতিক শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান তথ্যপ্রযুক্তি সুস্থ সংস্কৃতি এবং প্রগতিশীল উদারনৈতিক রাষ্ট্রচিন্তায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শুধু দেশনেতা নয় বরং একজন উদীয়মান বিশ্বনেতার আদলে দেশ শাসন করতে হবে এবং জাতিকে নেতৃত্ব দিতে হবে।
শেষ কথা
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এখন পর্যন্ত দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল, এতে কোন সন্দেহ নেই। দেশ ও জাতির এক ঐতিহাসিক ক্রান্তিলগ্নে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এই দলটি গঠনের মাধ্যমে জাতিকে এক নতুন দিগন্তের সন্ধান দিয়েছিলেন। তার বিদূষী সহধর্মিনী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন একজন জননন্দিত ফার্স্ট লেডি এবং এদেশের তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। বুঝতে হবে, একটি বৃহত রাজনৈতিক দলে দেশের সকল শ্রেণী পেশা এবং স্তরের লোকদের সমাবেশ ঘটে। যার ফলে জনগণের নানা চরিত্রের মানুষের নানা অভ্যাস ও আচরণের প্রকাশও সেই দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্য থেকে প্রকাশ পায়। এগুলোকে সমূলে দমন বা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ ব্যাপার নয়। আর কোন আদর্শবান নেতার আদর্শিক দলের ভেতর এ ধরনের পঁচনশীল চরিত্রের প্রকাশ ঘটলে সেটি দেখতে অধিক দৃষ্টিকটু হয় এবং অধিকতর দুর্গন্ধ ছড়ায়, যা দেশের সুনাগরিকদের ভালো লাগে না। তবে জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে বিদেশের তাবেদারি করা বা দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে ব্যক্তি পরিবার ও দলীয় স্বার্থ সিদ্ধি করার চরিত্র বিএনপির ছিল না, যেমনটি বিগত শাসনামলে এদেশের মানুষ চাক্ষুস প্রত্যক্ষ করেছে। সেই পরিমাপকে বিএনপি তুলনামূলক নিরাপদ ও উপযুক্ত একটি দল যা সঠিক নেতৃত্বের গুণে আরো সুন্দর পরিচ্ছন্ন এবং গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারে। একজন গণসম্পৃক্ত ব্যক্তিত্ব ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকের দৃষ্টিকোণ থেকে আমি বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুপাতে বিএনপি এবং এর প্রধান কান্ডারী জনাব তারেক রহমানের প্রতি মোটা দাগে ৫টি পরামর্শ উত্থাপন করলাম। এতে বর্ণিত বাক্য এবং বক্তব্যগুলোর যৌক্তিক এবং প্রামানিক আরো ব্যাখ্যা ও নির্দেশনা রয়েছে, যা দলটির নেতৃত্বের সঙ্গে ঘনিষ্ট পরিসরে আলোচনা করা সম্ভব। সামাজিক গণমাধ্যমের উন্মুক্ত প্রাঙ্গনে নয়। আশা করি নতুন বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক পথ-পরিক্রমায় বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব আলোচিত বিষয়গুলোর উপর চিন্তা ও গুরুত্ব আরোপ করবেন।
এমএইচ/