বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫ ।। ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ ।। ২ জিলহজ ১৪৪৬

শিরোনাম :
জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ডা. মাহাথিরকে প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা  উপকূল অতিক্রম করছে গভীর নিম্নচাপ, হতে পারে জলোচ্ছ্বাস ইরানি ধর্মীয় নেতাকে মুক্তি দিয়েছে সৌদি আরব বাবুনগর মাদ্রাসায় ‘কুরবানীর ফাযায়িল ও মাসায়িল’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত এবারের হজ ব্যবস্থাপনা, চ্যালেঞ্জের মধ্যেও সফল আয়োজন: ধর্ম মন্ত্রণালয় ভাটারার মারকাযুল হুদা মাদরাসায় আবাসিক মাদানী শিক্ষক নিয়োগ সচিবালয়ের কর্মচারীদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ, উপকূলে টানা বৃষ্টিপাত নির্বাচন ইস্যুতে এনসিপি নেতাকর্মীদের ওপর ক্ষোভ ঝাড়লেন ববি হাজ্জাজ নেতানিয়াহুকে ইরানে হামলা করতে না করেছি : ট্রাম্প

বাবা মা ছাড়া পৃথিবী যেন অনেক অচেনা!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতী মুঈনুল ইসলাম

আব্বা চলে গেছেন পৃথিবী ছেড়ে দেখতে দেখতে অনেক দিন হয়ে গেলো। ২০১৭ সালের ২৪ জানুয়ারির সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা ৩০ এর মধ্যে কোনো এক মুহূর্তে আমাদের বিশাল ব্যক্তিত্বশালী আব্বা ঘুমের মধ্যে চুপিসারে কাউকে কিছু না বলেই চলে গেছেন মহান আল্লাহর জিম্মায়।

আব্বার সীমাহীন শূন্যতা অনেক দিন আমাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। শশ্রুমন্দিত বয়স্ক কোনো  সুপুরুষ দেখলেই মনে হতো,  ইনি যেন আমার বাবার মতো। কতো বয়স্ক মানুষকে যে আমার বাবার মতো কল্পনা করেছি, তার কোনো হিসাব নেই। কতো বয়স্ক মানুষের গা ছুয়ে যে আব্বার উষ্ণতা নিতে চেয়েছি, তার ইয়ত্তা নেই।

একবার বাড়িতে গিয়েছি। আম্মার পাশে বসে আছি। আম্মা হঠাৎ করেই আব্বার কবরের দিকে ইশারা করে বললেন, ওই যে তোর আব্বা, ওখানে শুয়ে আছেন। সেদিন থেকে আমি আমার মনকে বুঝ দিয়েছি যে, পৃথিবীতে কোনো ব্যক্তি আর আমার আব্বার মতো অবশিষ্ট নেই। নিঃসন্দেহে আব্বা বলে যা আছেন, তিনি শুয়ে আছেন ওই শান্ত কবরে।

এরপর থেকে যখনই বাড়িতে গিয়েছি, সর্বপ্রথম আব্বার ওই শান্ত কবরটির পাশে দাঁড়িয়ে দোয়া কালাম পড়েছি, যতক্ষণ মনের তৃপ্তি  হয়নি। তারপর বাড়িতে গিয়ে আমার আম্মা কোথায় বসে আছেন, খুঁজে বের করে তাঁর উষ্ণতা নিতে চেষ্টা করেছি। আমার ছন্নছাড়া জীবনের অগোছালো সীমাহীন ব্যস্ততা, খুব যে আমাকে এভাবে করতে দিয়েছে, তা কিন্তু নয়।

২০২৫ সাল। ২৩ রমজানুল মোবারক। রাত সাড়ে নয়টায় ইন্তেকাল করলেন আম্মাও। সূরা ইয়াসীন ও সূরা মুলক এর তেলাওয়াত শুনতে শুনতে এবং যিকির করতে করতে তিনি এই মোবারক সময়ে আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে গেলেন।

রমজানে ইন্তেকালের অনেক ফজিলত হাদিসে আছে। এজন্য আমার প্রত্যাশা ছিল, আম্মা যেন কোনো এক রমজানে আল্লাহর দরবারে হাজিরা দেন। হয়েছেও তা-ই। কিন্তু আমার আম্মা যে পৃথিবীতে নেই, এই কথাটা আমাকে কে বোঝাবেন! এখন মায়ের বয়সি যেকোনো মাকে দেখলেই, আমার বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে। চোখ অশ্রুতে ভরে যায়। কেউ কি আছেন, আমার মায়ের কবরের অদূরে দাঁড়িয়ে ইশারা করে বলবেন, ওই যে তোর আম্মা, ওখানে শুয়ে আছেন। হয়তো সেদিন থেকে আমি বুঝে নেব, পৃথিবীতে কোনো বয়স্ক মা আমার মায়ের মতো আর অবশিষ্ট নেই।

বাবা মা ছাড়া পৃথিবী যেন  অনেক শূন্য, অনেক নিঃসঙ্গ, অনেক নীরব,  অনেক নিকষ, অনেক অচেনা। এটাই বাস্তবতা। তবে এতে অভ্যস্ত হতে বেশ সময় লাগে। এটাও আরেক কঠিন বাস্তবতা।

রাব্বিরহাম হুমা- কামা- রাব্বায়া-নী সগীরা। হে আল্লাহ, আমাদের আব্বা আম্মাসহ মুসলমানদের সকল আব্বা আম্মাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন, আমিন। ইয়া রব্বাল আলামিন।

লেখক: প্রিন্সিপাল ও রেক্টর, জামিয়া ইসলামিয়া ঢাকা; বহু গ্রন্থপ্রণেতা

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ