মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫ ।। ২৩ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ৮ জিলকদ ১৪৪৬


শায়খ মুফতি ফয়জুল করীম! আপনি বিচলিত হবেন না!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| এইচএম কাওছার বাঙ্গালী ||

মেয়র ঘোষণার নাটকীয়তা নিয়ে অনেক হতাশ হচ্ছেন। দুঃখ পেয়েছেন সবাই এবং এটা পাওয়ারই কথা। কিন্তু হতাশ হচ্ছেন কেন? সেই হতাশাগ্রস্ত বন্ধুদের বলবো, এতো নাজুক অনুভূতি নিয়ে আদর্শিক দল করা যায় না।

মুফতি ফয়জুল করীম কে? মেয়র না হতে পারলে তার কী ক্ষতি হবে? আগে এই প্রশ্নগুলো সমাধান বের করুন! 

মুফতি ফয়জুল করীম মেয়র হলে তার ব্যক্তিগত সম্পদ অন্যায়ভাবে বৃদ্ধি পেতো না। নিজস্ব ক্ষমতাবলে সন্ত্রাসী পালতেন না, ফলে চাঁদাবাজ তৈরির পথ রুদ্ধ হতো। তিনি ক্ষমতায় আসলে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা/বাণিজ্য  নির্বিঘ্নে চলতো। অফিস আদালত ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত করতে যথাসাধ্য চেষ্টা না, লড়াই চালিয়ে যেতেন। এসকল কাজে উপকার হতো জনগণের, রাষ্ট্রের। এবং সবার। মোট কথা দেশের সকলের। 

কিন্তু রাষ্ট্রীয় আইনের দ্বিচারিতার কারণে কৌশলে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে এবং সামনে হাইকোর্টেও সুবিচার পাবেন কি না সন্দেহ! 

এতে তার ব্যক্তিগত সম্পদের কোনো লোকসান হয় নাই। তাঁর সম্মান হানি হবে না। বরং ক্ষেত্র বিশেষ সম্মান বাড়বে। মাজলুম হিসেবে মানুষের হৃদয়ে আরো বেশি জায়গা পাবেন। তাঁর অবৈধ সম্পদ গড়ার মেশিন তাতে হুমকিতে পড়ার ভয় নাই। কারণ তিনি একজন মুক্তাকী মানুষ। 

ভয় বা হারানো বেদনা তাদের জন্যেই, যারা রাজনীতিকে সম্পত্তি বানানোর উপায় মনে করে। সমস্যা সেই সব মিসকিনদের জন্য যাদের রাজনীতি ছাড়া জীবিকার পথ নাই। যারা ক্ষমতা ছাড়া সম্পদ বাড়ানোর উপায় খুঁজে পায় না। রাষ্ট্রীয় সম্পদ কুক্ষিগত করার জন্যেই এসকল লোক রাজনীতি করে। স্পষ্ট কথা, শায়খে চরমোনাই এজন্য রাজনীতিতে আসেননি। সুতরাং হারালে জনগণ হারিয়েছে মহান কিছু। হারালে দেশ হারিয়েছে মূল্যবান মানিক-রতন। 

অনেকেই বলতে আসবেন এগুলো পুরোনো ওয়াজ। জি আমিও বলি পুরোনো ওয়াজ। তাহলে নতুন কী? 

শোনেন! আশির দশকে হাফেজ্জী হুজুরের তাওবার রাজনীতির পরে ইসলামপন্থী কোনো রাজনীতিকের ব্যাপারে বাংলাদেশে এমন আলোড়ন তৈরি হয়েছে নাকি? হয়নি। বিশ বছর আগে ইসলামী আন্দোলনের জন্য ব্যাপক আইনজীবী খুঁজে পেতে কষ্ট হতো, আর এখন? এখন শতশত আইনজীবী ইসলামী আন্দোলনের ছায়াতলে রাষ্ট্র মেরামতের কাজে লেগে আছে। চাপিয়ে দেওয়া সেক্যুলার রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ঘোরপাক খাচ্ছি প্রায় আড়াইশো বছর যাবৎ।  এর মেরামত খুবই সহজ নয়। 

বিশ বছর আগে বাংলাদেশের মানুষ আলেম জনপ্রতিনিধি কল্পনাও করতে পারতো না, জামায়াতের ইসলামীর কিছু আলেম ছিলেন, দলীয় চর্চা মুখ্য হয়ে ছাপিয়ে থাকতো তাদের ভিন্ন পরিচয়। 

বিশেষ করে মেয়র নির্বাচনে গিয়ে বড় লাভটা হলো সাহসিকতা, প্রচারণা ও রাজনীতির ফাঁকিজুঁকি চিনতে পারা। ইসলামপন্থীরা এগুলো জানেই না, মোটেও ভাবে না, ভাবতে চায়ও না। ক্ষমতার মারম্যাচ, স্বৈরাচারদের বৈষম্যের রকমফের চেনার জন্য এবং সারা বাংলাদেশের রাজনীতিতে উদ্ভুত অবস্থা সামাল দেওয়ার জন্য ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে সক্ষম হয়েছে এই নীতিহীন রায়ে। ক্রমান্বয়ে ভীতি কমাতে সক্ষম হচ্ছে যা ভবিষ্যত রাজনীতিতে মাইলফলক হবে৷ এ বিবেচনায় না পাওয়ার ক্ষতিটাও কম লাভজনক নয়, যদি আমরা এর থেকে 'ইবরত' (উপদেশ) হাসিল করতে পারি। 

এখনতো বাংলাদেশের অনেক মানুষ ব্যাপক সমালোচনা করছে, ‘নির্বাচনে যাওয়া উচিত হয়নি’, ‘আবার মারও খেলো’, ‘আবার মামলায় হারলো’, ‘তিনি দলের এই সেই’, ‘এগুলোর কিছুরই উচিত ছিল না’, ‘এগুলো লজ্জা লজ্জা।’

একথাগুলো বেশি বলছে যারা, তারা কি সব চকবাজার মসজিদের ইমাম সাহেব, পরহেজগার ব্যক্তিবর্গ? না, না, না। বেশির ভাগই আগে বলতো হুজুররা রাজনীতি করে ক্যান?  হুজুররা বিয়া করে ক্যান?  হুজুরদের আবার বাচ্চাও হয় ক্যান? হুজুররা এক হয় না ক্যান?  হুজুররা বিএনপির সাথে মেলে না ক্যান? ইত্যাদি ইত্যাদি। কতগুলো ‘ক্যান’র উত্তর আপনার কাছে আছে?

সো, বাদ দেন! হতাশাবাদীদের ঘ্যানরঘ্যান আওয়াজ শোনা। 

শেষ কথা

মানুষের কাজের সফলতা নির্ভর করে বেশিরভাগ সময়ে তাঁর নিয়ত ও সততার ওপর দৃঢ় থাকায়। একবার বৃষ্টির কারণে টঙ্গীর এজতেমা শেষ করে দিতে হয়েছিল। তার মানে এই নয় যে, কোটি কোটি টাকা খরচ করে ইজতেমা করতে না পারায় কতৃপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে। আরেকবার সেইম ঘটনা চরমোনাইর মাহফিলে ঘটেছে৷ তাহলে সেটাও নিশ্চই ব্যর্থ হয়নি৷ অনেক সময় ইসলামী আন্দোলনের জন্য সভা, সমাবেশ, সেমিনার, মানববন্ধন, মিছিল-মিটিং প্রশাসনিক বাঁধায় পণ্ড হয় মানে এই নয় যে, সেসকল ক্ষেত্রে সংগঠন ব্যর্থ। 

মেয়র ঘোষণা না হলেও ইসলামী আন্দোলন সফল। তার রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পেরেছে। কারণ নির্বাচন করা দলীয় সিদ্ধান্তে ছিলে, পরবর্তী তাৎক্ষণিক মামলা না করা তাও মাশওয়ারাভিত্তিক দলীয় সিদ্ধান্ত ছিল, এখন আবার মামলায় লড়াই করা তাও দলীয় সিদ্ধান্ত ও স্বার্থের দিকে তাকিয়েই। সুতরাং নেতৃত্বের প্রতি আস্থা থাকলে আপনি হতাশ হবেন না। বরং জায়গায় হোচট না খেলে আপনি সমস্যা বুঝবেন কীভাবে?  তবে সতর্ক থেকে দেখতে হবে একই জায়গায় বারবার হোচট খাওয়া যাবে না। 

ঝড় -বৃষ্টি আসে শুধু আপনার গতি রোধ করার জন্য না। বৃষ্টি এসে দেখিয়ে দেয়— আপনার চালায় কোথায় ফুটো আছে, মেরামত প্রয়োজন। ঝড় দেখায়— আপনার ঘরের কোন খুঁটি দুর্বল, সংস্কার প্রয়োজন। 

এদেশের ইসলামি রাজনীতিটাই দাঁড়িয়ে আছে দুর্বল ভিত্তির ওপর, যদিও আদর্শ শ্রেষ্ঠ কিন্তু পথ ও পদ্ধতি নড়বড়ে। 

এখন ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র এ বিষয়ে বেশি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। বাস্তবতা হচ্ছে দেশে আর বেশি মাদরাসার করার খুব প্রয়োজন নাই। কিছু লোক/রিজাল তৈরির জন্য ১০টি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, ২টি টেকনিক্যাল কলেজ, ৫টি মানসম্মত বৃহৎ আলিয়া মাদরাসা তৈরির উদ্যোগ নিতে পারে। ১০ বছর পরে রাজনীতি এমনেই আয়ত্বে চলে আসবে, ইনশাআল্লাহ। 

আর এটা দল করবে না, ফান্ডও দেবে না। কিন্তু প্রয়োজনীয় সহায়তা দিবে। ইনভেস্টের জন্য উৎসাহিত করবে। 
মুহতারাম আমির, নায়েবে আমিরের কাছে এই বার্তা/আবেদন বেশি বেশি পৌঁছা দরকার। গাছের মগডালের বিস্তৃতি যথেষ্ট হয়েছে এখন শেকড়ের মজবুতি দরকার। তারা জানেন-বুঝেন, চাহিদা বেশি হলে তারা সেদিকে বেশি ঝোঁক দিবেন। 

রাষ্ট্রের ভোক্তা জনগোষ্ঠী পর্যাপ্ত আছে, কিন্তু কলকাঠি নাড়ানোর মতো গোড়ায় কম কি, লোকই নাই। এটাই এখন মোটাদাগে প্রয়োজন। 

দুঃখের একটা বলি- এই সংগঠন এখন এতো ‘মুখলিসিনা লাহুদ্দীন’ হয়া গেছে যে, একজন জেনারেল/বিশ্ববিদ্যালয় পড়ূয়া তরুণও নূরাণী মাদরাসা প্রতিষ্ঠা কিংবা মাদরাসার লাইনের জব খোঁজে (বেশির ভাগের কথা বলছি)। 

স্কুল প্রতিষ্ঠা করছে না, কিন্ডারগার্টেন প্রতিষ্ঠা করছে না কিংবা সেগুলোতে জবও করছে না। যুক্তি দেয় ঈমান আমলের মজবুতির জন্য...। এগুলোকে ইবাদতই মনে করে না। 

আরে ভাই! 

ঈমান আমলের বিষয়ে তো জাতিকেও বাঁচাতে হবে, সবাই ব্যক্তি চিন্তা করলে জাতির ঘাড়ে তো আতাতুর্কের উত্থান পরবর্তী সেক্যুলারিজম আবারো চেপে বসবে।

 এজন্য মাঝে মাঝে রসিকতা করে বলি—
 যান স্কুল করেন, কলেজ করেন, কিন্ডারগার্টেন করেন, আমলের ঘাটতি হলে কেয়ামতের ময়দানে কিছু ধার দিমুনে -ইনশাআল্লাহ!

এখন একটা ইসলামী মাইন্ডের কিন্ডারগার্টেন করা ১০০ নূরানী মাদরাসার চেয়ে বেশী সওয়াবের। কারণ মাদরাসায় মানুষের দান আসে, কিন্ডারগার্টেনে দান আসেনা। চালানো মহা মুশকিল। কত যে, কষ্ট ভুক্তভোগী জানেন। তবে ভবিষ্যত ভালো। 

বর্তমানে একটি ধর্মীয় ভাবধারার স্কুল চালানো ১০ টা দাওরা মাদরাসা চালানোর চেয়ে কম সওয়াবের না ( ফতোয়ায়ে বাঙ্গালিয়া)  

সময়ের সঠিক চাহিদা পূরণ করতে না পারলে, আরো পঞ্চাশ বছর পরেও একটিমাত্র মেয়র হওয়ার জন্য আদালতের দ্বারে দ্বারে উপেক্ষিত হতে হবে। 

আসুন হতাশ না হয়ে আশাবাদী হই! 

সময়কে কাজে লাগাই। আগামীর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে মনোযোগী হই!

লেখক: ইসলামী যুব আন্দোলন নেতা ও মাদরাসা পরিচালক

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ