শায়খ মীযান হারুন
সম্মানিত ইমাম! আপনার মসজিদে কেউ উচ্চস্বরে 'আমিন' বললে, রফয়ে ইয়াদাইন করলে বিচলিত হবেন না। মসজিদের মিম্বর তো রয়েছে জ্ঞান বিতরণের জন্যই। সংশ্লিষ্ট হাদিসসমূহ অধ্যয়ন করুন, ফিকহুল হাদিস দেখুন। আপনার অনুসৃত পন্থাটি কেন বিশুদ্ধতর, এবং অপরের আমলটিও কেন বিশুদ্ধ—এই সত্য মুসল্লিদের নিকট তুলে ধরুন, স্নেহের সঙ্গে বুঝিয়ে বলুন। বৈচিত্র্য থাকবে। বিদ্বেষ থাকবে না।
আপনার মসজিদে কেউ হয়তো মাগরিবের পূর্বে সুন্নাত পড়ছেন আবার কেউ ফরজ পরবর্তী সুন্নাত না পড়েই মসজিদ ত্যাগ করছেন—বিরক্ত না হয়ে এই সম্পর্কিত হাদিসগুলো, ফিকহের বিধানগুলো জানুন। মুসল্লিদেরকে জানান। সুন্নাহর গুরুত্ব, প্রকার ও স্তরভেদ সম্বন্ধে মানুষকে জ্ঞানদান করুন। আপনার আমলটি কেন শুদ্ধতর আর অন্যেরটিও কেন অশুদ্ধ নয়—এই বোধটুকু মুসল্লিদের অন্তরে স্থাপন করুন। বৈচিত্র্য থাকবে, বিভেদ থাকবে না।
বস্তুত, ইমামের কর্তব্য কেবল নামাজে ইমামতি করা নয়; তিনি তাঁর এলাকার মুসলমানদের দীনি ও আধ্যাত্মিক প্রশান্তির অতন্দ্র প্রহরী। যে সমাজের ইমাম ও মুসল্লিরা হাদিস ও ফিকহের জ্ঞানে যত অধিক আলোকিত হবেন, সেই সমাজে ততই ধর্মীয় স্থিতি ও শান্তি বিরাজ করবে, বিশৃঙ্খলামুক্ত থাকবে। সকল অনৈক্য নিমেষে মিটে যাবে এমন নয়, কিন্তু জ্ঞানের এই ধারা দীর্ঘদিন অব্যাহত রাখলে মানুষ পরমতসহিষ্ণু হয়ে উঠবে। বিশ্বাস ও ঈমানের গভীর বন্ধনের সামনে ছোট ছোট শাখাগত বিভেদগুলি আপনা হতেই ম্লান হয়ে যাবে।
কিন্তু যেসব ইমাম জ্ঞানচর্চার এই শ্রমটুকু স্বীকার করতে পরাঙ্মুখ; যাঁরা এলাকাবাসীকে অজ্ঞানতার ভেতরে রাখতে চান, ভিন্নমত পোষণকারীকে মসজিদ থেকে বিতাড়িত করার মাঝেই নিষ্কৃতি খোঁজেন—উম্মাহর অনৈক্য, মসজিদ বিভক্তি, প্রচলিত ফিকহের বিরুদ্ধে বিদ্রোহসহ যাবতীয় ধর্মীয় বিশৃঙ্খলার জন্য তাদের দায়ভারই অধিক। সম্ভবত, তাঁদের উদ্দেশেই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে গিয়েছেন: ‘(শেষ যুগে) মসজিদসমূহ পরিপূর্ণ থাকবে, কিন্তু হিদায়াতশূন্য হবে। তাদের আলিমগণ হবে আকাশের নিচের নিকৃষ্টতম জীব। তাদের নিকট থেকেই ফিতনা প্রকাশ পাবে এবং তাদের মধ্যেই ফিরে যাবে।’
লেখক: শিক্ষাবিদ ও দাঈ
এসএকে/
                              
                          
                              
                          
                        
                              
                          