শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫ ।। ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ ।। ১৭ মহর্‌রম ১৪৪৭

শিরোনাম :
রাজসাক্ষী হওয়ার শর্তে চৌধুরী মামুনকে ট্রাইব্যুনালের ক্ষমা ইসলামী আন্দোলনের গোলটেবিলে অন্য দলের যারা যোগ দিলেন  মিটফোর্ডে নৃশংস হত্যা, অন্তর্বর্তী সরকারের চরম ব্যর্থতা: যুব মজলিস জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন রক্ষায় পিআরই একমাত্র সমাধান: পীর সাহেব চরমোনাই মিটফোর্ডে পাথর মেরে বর্বরোচিত হত্যার প্রতিবাদে চান্দিনায় বিক্ষোভ  ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় নিহত ১৭ ফিলিস্তিনি খানকায়ে আহমদিয়ার ২৭তম আধ্যাত্মিক কোর্স সফলভাবে সম্পন্ন মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ডে দুই এজাহারনামীয় আসামি গ্রেপ্তার: জানাল র‍্যাব তীব্র গরমে হাতে তৈরি এয়ার কুলারই ভরসা আফগান ট্যাক্সিচালকদের ‘নতুন করে কাউকে ফ্যাসিবাদী হতে দেবো না’ — রিফাত রশিদ

কোনোদিন ইমামতি না করেও তিনি শ্রেষ্ঠ ইমাম!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার ওলামা দল নেতা হাফেজ মাওলানা জসিম উদ্দিন জেলার শ্রেষ্ঠ ইমাম নির্বাচিত হয়েছেন। অথচ তিনি কোনোদিন ইমামতি করেননি। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় চলছে। আলেম- ওলামা ও ইমামরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

গত ২৯ জুন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আয়োজনে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইমামদের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানে জসিম উদ্দিনকে নেত্রকোনা জেলার শ্রেষ্ঠ ইমামের সম্মাননার পাশাপাশি ক্রেস্ট, সনদ ও সম্মাননা চেক দেওয়া হয়।

বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের মাঝে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। একজন ইমাম না হয়েও কীভাবে তিনি জেলার শ্রেষ্ঠ ইমাম হলেন—তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সর্বমহলে।

হাফেজ মাওলানা জসিম উদ্দিন তালুকদার বারহাট্টা উপজেলার বিক্রমশ্রী গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত মসজিদ ভিত্তিক সহজ কুরআন শিক্ষা বিভাগের উপজেলা শাখার মডেল কেয়ার টেকার হিসাবে কর্মরত।

জসিম উদ্দিন উপজেলা ওলামা দলের সাবেক সভাপতি। বর্তমানে তিনি উপজেলা হেফাজতে ইসলামের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছে। এছাড়াও ‘বাংলাদেশ মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ পরিষদ’ একটি মানবাধিকার সংগঠনের বারহাট্টা উপজেলা শাখার সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।   

স্থানীয় একাধিক মসজিদের ইমাম ও ধর্মীয় ব্যক্তিরা বলেন, এটা ধর্মীয় দায়িত্ব ও ইমামতির মর্যাদার প্রতি অবমাননা। একজন প্রকৃত ইমাম যারা দিনের পর দিন ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন, তাদের উপেক্ষা করে ইমাম না এমন একজন রাজনৈতিক পরিচয়ধারীকে এই সম্মাননা দেওয়া দুঃখজনক।

নেত্রকোনা ইসলামিক ফাউন্ডেশন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বরে শ্রেষ্ঠ ইমাম নির্বাচনে জেলার ১০টি উপজেলা থেকে ২০ জন করে মোট ২০০ জন ইমামের তালিকা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জেলা কার্যালয়ে পাঠানো হয়। এতে জসিম উদ্দিন নিজেকে বারহাট্টা উপজেলার বিক্রমশ্রী জামে মসজিদের ইমাম হিসেবে উল্লেখ করেন।  চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি কার্যালয়ের সাবেক উপ-পরিচালক শফিকুর রহমান সরকার যাচাই বাছাই করে জসিম উদ্দিনসহ তিনজনকে শ্রেষ্ঠ ইমাম নির্বাচন করা হয়। পরে তালিকা বিভাগীয় কার্যালয়ে পাঠানো হয়। বিভাগ থেকে যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ঢাকা কার্যালয়ে। শেষে গত ২৯ জুন রাজধানীতে ধর্ম উপদেষ্টার উপস্থিতিতে সম্মেলনের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ ইমামদের সম্মাননা, ক্রেস্ট ও চেক দেওয়া হয়।

সম্মাননা পাওয়ার পর ক্রেস্ট প্রাপ্তির ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন জসিম উদ্দিন। তখনই বিষয়টি জানাজানি হয়। এতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানান অনেকে।

জানা গেছে, বারহাট্টা উপজেলার বিক্রমশ্রী জামে মসজিদে ২০১৪ সাল থেকে ইমামতি করেন মাওলানা রফিকুল ইসলাম। যদিও তালিকায় ওই মসজিদের ইমাম দেখানো হয়েছে জসিম উদ্দিনকে।

মসজিদের ইমাম মাওলানা রফিকুল ইসলাম বলেন, দুই যুগের বেশি সময় ইমামতি করেও তালিকায় আমাদের নাম নেই। জসিম উদ্দিন কোথাও ইমামতি করেন না। অথচ যাচাই-বাছাই ছাড়াই তাকে শ্রেষ্ঠ ইমাম নির্বাচিত করা হয়েছে। এটা দুঃখজনক। পেশাদার ইমামদের এ সম্মাননা দেওয়া হলে ইমামদের মধ্যে উৎসাহ বেড়ে যেত। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মতো একটা প্রতিষ্ঠান যদি এমনটা করে তাহলে মানুষের ভরসার আর জায়গা কোথায়?

তবে অভিযুক্ত হাফেজ মাওলানা জসিম উদ্দিন বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে কমপক্ষে ১৫টা প্রশিক্ষণ করেছি। ইমামতি করিনি এটা সঠিক নয়। অনেক আগে ইমামতি করেছি জেলা সদর ও ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ভেতরের মসজিদে। জেলা ওলামা দলের প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম। এক সময় জেলা ছাত্রদলের পদে ছিলাম। গত আওয়ামী আমলে ১৭টি মামলার আসামি হয়েছি। গ্রেফতার হয়েছি, জেল খেটেছি। একাধিক মানবাধিকার সংগঠনে আছি। পাশাপাশি শ্রমিক সংগঠনের পদে আছি।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন নেত্রকোনা জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি এখানে যোগদান করেছি ফেব্রুয়ারিতে। ইমাম নির্বাচনের কাজটি করেছেন আগের উপ-পরিচালক শফিকুর রহমান সরকার। দুর্নীতির দায়ে তিনি বরখাস্ত হওয়ার পর আমি এখানে যোগদান করেছি। প্রতিটি উপজেলায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বাছাই কমিটি রয়েছে তারা প্রথমে বাছাই করে ২০ তালিকা জেলায় পাঠায়। পরে জেলায় চূড়ান্ত করা হয়।

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ