বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫ ।। ১৯ আষাঢ় ১৪৩২ ।। ৮ মহর্‌রম ১৪৪৭

শিরোনাম :
গুমের সঙ্গে জড়িত সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে: সেনাবাহিনী জাতিসংঘের সমকামী দূত ও কার্যালয় স্থাপন বাতিলের দাবি খেলাফতের ভোর থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৭৩ ফিলিস্তিনি নিহত তাবেলা সিজার হত্যা : তিনজনের যাবজ্জীবন, চারজন খালাস হযরত মুহাম্মদ (সা.) -এর অবমাননা একটি উসকানিমূলক ও ঘৃণিত কাজ জামেয়া ইসলামিয়া মুনশীবাজারে প্রয়াত শিক্ষকদের স্মরণে আলোচনা সভা ১২ জুলাই মুহতামিম সম্মেলন সফল করতে মানিকছড়িতে মতবিনিময় সভা শুটকি মাছের পুষ্টিগুণ ইরানে বিভাজন সৃষ্টির কৌশল ব্যর্থতার পথে: আমেরিকান ওয়েবসাইট গণঅভ্যুত্থান সরকারের কেউ কেউ ‘লুটপাট’ করে বেহুঁশ হওয়ার দশা: ইশরাক হোসেন

শহীদ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করতেন ইসলামী আন্দোলন কর্মী মাসরুর

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের মাযহারুল ইসলাম মাসরুর ওরফে আলী আজগর (২৯) স্ত্রীর নিষেধ উপেক্ষা করে শহীদ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে নিয়মিত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যেতেন, এমনকি স্ত্রী এবং নিজের নাবালক সন্তানকেও আন্দোলনে নিয়ে যেতে চাইতেন তিনি। সবশেষ ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের দিন গাজীপুরে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন তিনি।

শহীদ মাসরুরের স্ত্রী বিবি সালমা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘তিনি আমাকেও আন্দোলনে তার সঙ্গী হতে বলেছিলেন। আমাকে আন্দোলনে যেতে বুঝিয়ে গেছেন। হাজিরহাটে মিছিল হবে, আমাকে যেতে বলেছেন। সঙ্গে আমার সন্তানকে নেওয়ার জন্যও বলেছিলেন।’

মাসরুর যখন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তখন তার স্ত্রী সালমা আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তার মৃত্যুর দেড় মাস পর ২২ সেপ্টেম্বর স্ত্রীর কোলজুড়ে ফুটফুটে একটি ছেলে সন্তান আসে। সে সন্তানের মুখ দেখা হয়নি তার। সন্তানও কোনোদিন দেখবে না বাবার মুখ। এতিম হয়েই জন্ম নিলো তার একমাত্র ছেলে সন্তান।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনীতি করায় সবসময় আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন তিনি। সংগঠনের পাটওয়ারীর হাট ইউনিয়ন শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন মাসরুর।

আন্দোলনে যেতে নিষেধ করলে মাজহারুল ইসলাম মাসরুর ওরফে আলী আজগর (২৯) তার সহধর্মিণী বিবি সালমাকে বলতেন, ‘আমি যদি আন্দোলনে গিয়ে মারা যাই, তাহলে শহীদ হব। লোকে তোমাদের ‘শহীদের স্ত্রী-সন্তান’ বলে ডাকবে। আর আমার সন্তান মারা গেলে, তখন সবাই আমাদের শহীদের বাবা-মা বলে ডাকবে।’

সাড়ে তিন বছর বয়সী নাফিজা আক্তার নামে এক কন্যা সন্তানও রয়েছে তাদের। প্রতিদিন বাবার সঙ্গে মোবাইলফোনে কথা বলত নাফিজা। প্রায় এক বছর বাবার সঙ্গে তার কথা হয় না। বাবার কথা জিজ্ঞেস করতেই দুচোখ পানিতে ভিজে যায় ছোট্ট নাফিজার।

৫ আগস্টও সালমার সঙ্গে মাসরুরের কথা হয়। তখন মাসরুর দোকানে ছিলেন। সালমাকে তিনি জানিয়েছিলেন, তিনি আন্দোলনে যাবেন। তখন আন্দোলনে যেতে নিষেধ করেন তিনি। কিন্তু নিষেধ না মেনে আন্দোলনে যান।   এসময় সালমা খাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে আন্দোলন তারপর খাওয়া-দাওয়া। পরে সালমা তার ভাইয়ের কাছে জানতে পারেন মাসরুর গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।

৫ আগস্ট গাজীপুরে আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মাসরুর। লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার পাটওয়ারীর হাট ইউনিয়নের চরবড়ালিয়া গ্রামের বৃদ্ধ আবদুল খালেকের ছেলে দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে  মাজহারুল ইসলাম মাসরুরু ওরফে আলী আজগর ও ছোট ছেলে হুমায়ুন কবির। মেয়ে সামিয়ার বিয়ে হয়েছে।

মাজহারুল ইসলাম জীবিকার তাগিদে মাদরাসায় শিক্ষকতা, পোলট্রি খামার ও ইলেকট্রিক সরঞ্জামের ব্যবসা করেছেন। তবে কোথাও স্থায়ী হতে পারেননি। সবশেষ প্রায় সাত মাস আগে গাজীপুরে তার শ্বশুর মো. মোস্তফার কাছে যান ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে। সেখানে ব্যবসায় ভালোই করছিলেন।

মাসরুরের শিক্ষকতা জীবনের সহকর্মী সিরাজুল ইসলাম মেহরাজ বলেন, ঘটনার দিন মাসরুর তার এক বন্ধুকে বলেছিল, গুলিবিদ্ধ কেউ একজনকে তিনি হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন। এরপর আর তার সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। পরে গাজীপুরের শহীদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে তার মরদেহ পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে- গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিবার বা আত্মীয়-স্বজনদের দুশ্চিন্তায় না ফেলতে সেদিন তিনি ঘটনাটি লুকিয়েছিলেন।

মাসরুরের ছোট ভাই হুমায়ুন কবির বলেন, আমার ভাই জীবনে অনেক কষ্ট করেছেন। নিজে পড়ালেখা করেছেন। পাশাপাশি আমাদের জন্য কষ্ট করেছেন। তিনি একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। পরে ওই মাদরাসার দায়িত্ব আমাকে বুঝিয়ে দিয়ে তিনি গাজীপুরে ব্যবসা করতে যান। আমার ভাই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। সবাই বলেছে, তার শরীরের একটা গুলি লেগেছে। তবে শেষ গোসলের সময় তার পেটে ও পিঠে দুটি গুলির চিহ্ন দেখা গেছে।

মাসরুরের চাচা শ্বশুর ওমর ফারুক বলেন, মাসরুর আর্থিকভাবে তেমন একটা স্বাবলম্বী ছিলেন না। গাজীপুর যাওয়ার আগে তার অন্ত্বঃসত্ত্বা স্ত্রীকে শ্বশুর বাড়িতে রেখে যান। এখন কোনোভাবে দিন কাটছে তাদের। সামনে তারা কীভাবে চলবে? যতই সময় যাচ্ছে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। সরকার যদি পরিবারটির দিকে মুখ তুলে তাকায় হয়তো মাসরুরের স্ত্রী ছেলে-মেয়েকে নিয়ে স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারবে মেয়েটা।

মাসরুরের কথা জিজ্ঞেস করতেই তার বৃদ্ধ বাবা আবদুল খালেকের চোখ থেকে পানি ঝরতে শুরু করে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, মাসরুর সবার চেয়ে ভালো ছিল। পরিবারের সবার দেখভাল করত। দীনের কাজে গিয়ে সে মারা গেছে। আমি শুকরিয়া আদায় করছি। মৃত্যু তো ঠেকানো যায় না, বাড়িতে থাকলেও মারা যেত। সূত্র: বাসস

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ