মুহাম্মদ মিজানুর রহমান
ইসলামী বিয়ের সময় ‘মোহর’ (বা মাহর) হচ্ছে স্ত্রীর অধিকার স্বরূপ বর পক্ষ থেকে কনের জন্য নির্ধারিত একটি উপহার বা নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ। এই মোহর কোনো কনভেনশন নয়, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে নারীর প্রতি সম্মান ও অধিকার প্রতিষ্ঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা। এরই এক বিশেষ রূপকে অনেকে বলেন "মোহরে ফাতেমি"।
মোহরে ফাতেমি কী?
মোহরে ফাতেমি বলতে বোঝানো হয় হযরত ফাতেমা (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশে তার স্বামী হযরত আলী (রাঃ) যে মোহর দেন, সেই মোহরের পরিমাণ বা আদর্শ অনুসরণ করে নির্ধারিত মোহর। এটি কোনো ফরজ বা বাধ্যতামূলক পরিমাণ নয়, তবে একটি আদর্শ ও ভালোবাসাপূর্ণ দৃষ্টান্ত।
মোহরে ফাতেমির পরিমাণ
বিভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ী হযরত আলী (রাঃ) ফাতেমা (রাঃ)-কে ৫০০ দিরহাম মোহর দেন। অনেকে এটিকে মোহরে ফাতেমি হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। বর্তমান মুদ্রায় এই পরিমাণ নির্ভর করে প্রতিটি দিরহামের রূপা ও বাজারদরের উপর। গড় হিসেবে এটি প্রায় ১৩১.২৫ তোলা বা ১.৫৩০৯ কিলোগ্রাম রুপা।
কেন মোহরে ফাতেমি গুরুত্বপূর্ণ?
১. এটি সরলতা ও পরিমিততার প্রতীক।
২. নবী পরিবার থেকে শিক্ষা পাওয়া যায় কেমন করে অহংকার ছাড়া একটি সম্মানজনক বিয়ে হতে পারে।
৩. এটি নারীকে সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে একটি উদাহরণ তৈরি করে।
৪. ইসলামি শিক্ষায় মোহর হলো নারীর সম্পূর্ণ নিজস্ব অধিকার—এটি বাবা, ভাই, স্বামী কেউ ছুঁতে পারে না।
ভুল ধারণা: অনেকে মনে করেন মোহরে ফাতেমি রাখা ফরজ বা আবশ্যক, তা নয়। কেউ চাইলে স্বামী-স্ত্রীর সামর্থ্য ও পারস্পরিক সম্মতিতে যেকোনো মোহর নির্ধারণ করতে পারে। মোহরে ফাতেমি কেবল একটি বরকতময় আদর্শ হিসেবে গণ্য।
মোহরে ফাতেমি কেবল একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নয়, এটি একটি দৃষ্টান্ত—নারীর মর্যাদা, ইসলামী সরলতা ও নবী পরিবারের অনুসরণে আগ্রহ প্রকাশের প্রতীক। বিয়েকে যদি কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক বরকতময় করতে হয়, তবে মোহরের আদর্শ হোক হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর মতোই বিনয়ী, মর্যাদাপূর্ণ ও মানবিক।
আরএইচ/