দিল্লির লাল কেল্লায় ১০ নভেম্বরের বিস্ফোরণের পর কাশ্মীরজুড়ে মুসলিম অধিবাসীদের ওপর দমন–পীড়ন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মানবাধিকার সংগঠন, স্থানীয় গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক নেতারা বলছেন—ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো “সন্দেহ” অজুহাতে ব্যাপক তল্লাশি, আটক ও অভিযান চালাচ্ছে, যা পুরো সম্প্রদায়কে অপরাধীর চোখে দেখার সমতুল্য।
গণগ্রেফতার ও গণতল্লাশি
বিস্ফোরণের কয়েক দিনের মধ্যেই কাশ্মীর থেকে কমপক্ষে ১,৫০০ মুসলিমকে আটক করা হয়েছে বলে কাশ্মীর টাইমস ও রাইজিং কাশ্মীর জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজ্যের স্টেট ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এসআইএ) কাশ্মীর টাইমস পত্রিকার অফিসে অভিযান চালায়।
কুলগামে এক অনুষ্ঠানে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেন,
“দু–একজনের কাজের দায়ে পুরো সম্প্রদায়কে সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে। আমাদের হেয় করার চেষ্টা চলছে।” — ডন
পরিচয়ের ভিত্তিতে সন্দেহ
বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই, কোনো সন্দেহভাজন শনাক্ত না হওয়া সত্ত্বেও, দেশজুড়ে মুসলিমদের লক্ষ্য করে তল্লাশি শুরু হয়।
রেলস্টেশন ও গণপরিবহনে ধর্মীয় পরিচয় দেখে যাত্রীদের থামানো,
কাশ্মীর ছাড়াও উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, গুজরাটে একই তল্লাশি,
সোশ্যাল মিডিয়ার ডানপন্থি চক্রের প্রকাশ্য মুসলিমবিদ্বেষ,
বিজেপি–ঘনিষ্ঠ অনলাইন অ্যাকাউন্ট ‘বাবা বনরস’ কোনো প্রমাণ ছাড়াই দাবি করে—বিস্ফোরণে ব্যবহৃত গাড়িটি নাকি একজন কাশ্মীরী মুসলিমের। তারা কাশ্মীরে “গণগ্রেফতার” চালানোর দাবি তোলে।
দোকান–বাড়িতে অভিযান
শ্রীনগর পুলিশের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার শহরের সব জোনে হার্ডওয়্যার দোকানে ব্যাপক পরিদর্শন চালানো হয়—নোহাট্টা, লালবাজার, শাহীগঞ্জ, চানাপোরা, রাজবাগ, সাদ্দার, সওরা, হজরতবালসহ অন্তত এক ডজন এলাকা।
পুলিশ দাবি করেছে—
হার্ডওয়্যার সামগ্রী অবৈধ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে কিনা তা যাচাই,
দোকানের নথিপত্র ও নিয়ম–নীতি মেনে চলা নিশ্চিত করা,
এদিকে ভারতীয় সেনা, সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও আধা–সামরিক সদস্যরা বারামুল্লা ও উরি অঞ্চলে সহিংস তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে। — কাশ্মীর মিডিয়া সার্ভিস
অভিযোগ ছাড়াই আটক ও হয়রানির অভিযোগ
১৩ নভেম্বরের মধ্যেই কাশ্মীরের বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক অভিযান চালানো হয়—
কুলগামে ২০০+ স্থানে অভিযান,
চার দিনে পুরো জেলায় ৪০০+ অভিযান,
অনেককে অভিযোগপত্র ছাড়াই কারাগারে পাঠানো,
ফোন, কম্পিউটার, নথিপত্র জব্দ,
বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন—অভিযানগুলোতে অনেককেই শুধু আত্মীয়তা বা পরিচিতজনের ভিত্তিতেই আটক করা হচ্ছে।
এক নারীর অভিযোগ:
“রাত ২টায় দরজা ভেঙে ঢুকে স্বামীকে ধরে নিয়ে যায়। বাচ্চাদের সামনে মারধর করা হয়।”
আরেকজন জানান—
“৬৭ বছর বয়সি বাবাকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই গভীর রাতে তুলে নিয়ে গেছে।”
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী এ ধরনের সমষ্টিগত শাস্তি ও পরিচয়ভিত্তিক অভিযান স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ।
উত্তর ভারতে কাশ্মীর বিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি
জম্মু ও কাশ্মীর স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে—বিস্ফোরণের পর উত্তর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কাশ্মীরী শিক্ষার্থীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, অনেককে বাড়ি ছাড়তে বলা হয়েছে।
সংগঠনের ন্যাশনাল কনভেনর নাসির খুইহামী বলেন—
“দেশজুড়ে কাশ্মীরীদের বিরুদ্ধে সন্দেহ ও অবিশ্বাস ভয়াবহভাবে বেড়েছে।”
অভিযোগ পাওয়া গেছে
উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, রাজস্থান ও দিল্লির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়রানি,
আবাসিক এলাকায় হুমকি,
জম্মুর মেডিকেল কলেজে মুসলিম শিক্ষার্থীদের বাদ দেওয়ার দাবি,
আরএসএস–ঘনিষ্ঠ সংগঠনগুলো শ্রীমাতা বৈষ্ণোদেবী ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল এক্সেলেন্সের ভর্তি তালিকা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করে, কারণ নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ৯০% মুসলিম, যাদের বেশিরভাগই কাশ্মীরী।
লাল কেল্লা বিস্ফোরণের তদন্ত এখনও চলমান থাকলেও কাশ্মীরে এবং ভারতের উত্তরাঞ্চলে মুসলিম ও কাশ্মীরী জনগোষ্ঠী ব্যাপক চাপ, নজরদারি ও হয়রানির মুখে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠছে। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন—এ ধরনের দমন–পীড়ন শুধু অস্থিরতা বাড়াবে এবং পুরো সম্প্রদায়ের ওপর অন্যায্য অপরাধবোধ চাপিয়ে দেবে।