মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫ ।। ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ ।। ২০ মহর্‌রম ১৪৪৭

শিরোনাম :
নতুন বাংলাদেশ গঠনে ৭ দফা বাস্তবায়নের আহ্বান জামায়াত নেতা বুলবুলের ‘বিএনপি নেতার ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজকে আরও উস্কে দেবে’  ফিশিং ট্রলারসহ ৩৪ ভারতীয় জেলে আটক ‘জুলাইয়ে উলামায়ে কেরাম বুকের তাজা রক্ত দিয়ে হকের পথে ছিলেন’ রাষ্ট্রের টাকায় পশ্চিমা এজেন্ডা বাস্তবায়নে উপদেষ্টা শারমীন মুরশিদ: হেফাজত ৭ লাখ টাকা নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল, যা বললেন এনসিপি নেতা ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হতে হবে : মির্জা ফখরুল  গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর ‘মহা বিপর্যয়’, ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের দাবি ইসলামি দলগুলোর ঐক্যচেষ্টায় পিআর কি বাধা হয়ে দাঁড়াবে? রাতে চরমোনাই যাচ্ছে এনসিপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল

আফগানিস্তানের নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয়ার পেছনে রাশিয়ার স্বার্থ কী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

কয়েক বছরের রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও আইনি প্রস্তুতির পর অবশেষে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়া। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদী পরিণতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।

তবে রাশিয়া তালেবানকে সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ দেয়ার পরই প্রকৃত স্বীকৃতির প্রক্রিয়া কার্যত শুরু হয়ে গিয়েছিল। ফলে বর্তমান পদক্ষেপটি মূলত বিদ্যমান সম্পর্ককে আনুষ্ঠানিক রূপ দেয়া মাত্র। রুশ পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি অংশ যখন তালেবানকে স্বীকৃতির দিকে ঝুঁকছে, তখন মস্কোর এই সিদ্ধান্ত অন্যান্য দেশের নীতিকেও প্রভাবিত করতে পারে।

স্বীকৃতির পেছনের কারণসমূহ

তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়ার পেছনে মস্কোর একাধিক কৌশলগত স্বার্থ রয়েছে।

-তালেবানের সাথে রাশিয়ার স্বার্থগত কোনো দ্বন্দ্ব নেই। 

-মধ্য এশিয়ার নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতায় আফগানিস্তানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

-সন্ত্রাসবাদ দমন ও নিরাপত্তা সহযোগিতায় আফগানিস্তানকে আঞ্চলিক অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করা।

-বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক ও লজিস্টিক দৃষ্টিকোণ থেকে আফগানিস্তানের কৌশলগত অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ।

উল্লেখ্য, ১৯১৯ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে মুক্ত হওয়ার পর আফগানিস্তানকে স্বীকৃতি দেয়া প্রথম দেশও ছিল রাশিয়া।

নিরাপত্তার প্রসঙ্গ

মধ্য এশিয়াবিষয়ক গবেষক রমজান নুরতাজিন মনে করেন, সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থা, অপরাধ ও মাদক পাচারের মতো হুমকির মুখে থাকা মধ্য এশিয়ার নিরাপত্তার জন্য তালেবান সরকারের স্বীকৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আফগানিস্তানের অস্থিতিশীলতা কয়েক দশক ধরে এই হুমকিগুলোর মূল উৎস। ফলে কাবুলের সাথে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তোলা রাশিয়ার দক্ষিণ সীমান্তের নিরাপত্তাকে মজবুত করবে।

তার মতে, এখন জরুরি হলো নতুন আফগানিস্তানের সাথে সহাবস্থানের কার্যকর সূত্র খুঁজে বের করা। এই প্রেক্ষাপটে ভারতের ও পাকিস্তানের সাথে লজিস্টিক সংযোগ তৈরির জন্য আফগান ভূখণ্ড গুরুত্বপূর্ণ। আফগানিস্তানের খনিজ ও অবকাঠামোগত খাতে রাশিয়ান কোম্পানির সম্ভাবনাও উজ্জ্বল।

তালেবানের কূটনৈতিক বিজয়

নুরতাজিন আরো বলেন, রাশিয়ার স্বীকৃতি তালেবানের পররাষ্ট্রনীতির জন্য এক ধরনের বিজয়। বিগত চার বছর ধরে তালেবান অন্যান্য দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ও বাণিজ্যিক সংযোগ স্থাপনে চেষ্টা করে এসেছে। রাশিয়ার এই সিদ্ধান্ত তাদের সেই প্রচেষ্টাকে আরো জোরালো করবে।

এছাড়া এই পদক্ষেপ মধ্য এশিয়ার অন্যান্য দেশকেও তালেবানকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করতে পারে। যেমন তালেবানের সাথে বৈরী সম্পর্ক থাকা তাজিকিস্তান, যারা আন্দোলনের উত্তরাঞ্চলীয় তাজিক কমান্ডারদের সমর্থন করতো, তারা নিজেদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে পারে। ফলে রাশিয়া-কাবুল সম্পর্ক আফগান-তাজিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করতেও ভূমিকা রাখবে।

সমালোচনা ও ঝুঁকির দিক

তবে ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড রিজিওনাল স্টাডিজের পরিচালক সাইফুদিন তুরসুনভ মস্কোর এই সিদ্ধান্তে দ্ব্যর্থ প্রকাশ করেছেন। তার মতে, স্বীকৃতি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বড় কোনো পরিবর্তন আনবে না; এটি মূলত সম্পর্ককে বৈধতা দেয়ার প্রচেষ্টা।

তুরসুনভ সতর্ক করে বলেন, তালেবানের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণহীনতা এবং সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর সক্রিয়তা এই সরকারকে আঞ্চলিক ব্যবস্থায় একীভূত করার পথে ঝুঁকি তৈরি করে। পাশাপাশি, রাশিয়ার মতো একটি বড় শক্তির এই স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে গঠিত বৈধতা কাঠামোকে দুর্বল করতে পারে।

তিনি বলেন, আফগানিস্তানে তীব্র অস্থিরতা এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাথে চলমান প্রতিযোগিতা বিবেচনায় রাখতে হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে, চীনা প্রভাবাধীন একটি ভূখণ্ড হিসেবে আফগানিস্তান রাশিয়ার সাথে গভীর সহযোগিতার জন্য উপযুক্ত নয়।

তুরসুনভের মতে, রাশিয়ার এই স্বীকৃতিকে দুই দেশের সম্পর্কের নতুন অধ্যায় হিসেবে না দেখে বরং আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং উত্তেজনা হ্রাসের কৌশল হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে আফগানিস্তানের সাথে টেকসই যোগাযোগ রাশিয়ার জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

সূত্র : আল জাজিরা

আইএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ