রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১৪ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ২৯ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :

চার দশকে প্রথম বার ঢাকায় অবস্থানরত সভাপতি পেল জমিয়ত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বিশেষ প্রতিনিধি

দেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী ইসলামি দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কাউন্সিল গতকাল শনিবার (২৬ এপ্রিল) সম্পন্ন হয়েছে। এই কাউন্সিলে দলটির সভাপতি পদে নতুন মুখ এসেছে। নির্বাচিত হয়েছেন আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক। আগের কমিটিতে সিনিয়র সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করা উবায়দুল্লাহ ফারুকের গ্রামের বাড়ি সিলেটে হলেও কর্মসূত্রে তিনি ঢাকার বাসিন্দা। প্রায় পাঁচ দশক ধরে তিনি ঢাকাতেই কাটাচ্ছেন। এ হিসেবে জমিয়ত দীর্ঘদিন পর ঢাকায় অবস্থানরত কোনো সভাপতি পেল। এতে দলের কর্মতৎপরতা বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জমিয়তের আগের চারজন সভাপতি ছিলেন সিলেট কিংবা সিলেট বিভাগের। সদ্য সাবেক সভাপতি আল্লামা শায়খ জিয়া উদ্দীনের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজারে। এর আগের সভাপতি আল্লামা শায়খ আব্দুল মোমিন ইমামবাড়ীর গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে। এর আগের সভাপতি আল্লামা আশরাফ আলী বিশ্বনাথীর গ্রামের বাড়ি ছিল সিলেটের বিশ্বনাথে। আর এর আগের দীর্ঘকালীন সভাপতি আল্লামা আব্দুল করিম শায়খে কৌড়িয়ার বাড়িও সিলেটের বিশ্বনাথে। তবে দীর্ঘদিন নির্বাহী সভাপতির দায়িত্ব পালন করা মাওলানা মহিউদ্দীন খান এবং মাওলানা মোস্তফা আজাদ ছিলেন ঢাকার অধিবাসী।

চার দশকে যাঁরা হাল ধরেছেন জমিয়তের

জমিয়তের জন্ম ব্রিটিশ ভারতে। অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের মাধ্যমে দলটি টিকে রয়েছে। আশির দশকে হজরত হাফেজ্জী হুজুর রহ.-এর নেতৃত্বে যখন তওবার রাজনীতি শুরু হয় তখন জমিয়ত বিলুপ্ত করে এই রাজনীতির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছিল। তবে ১৯৮৪ সালে খেলাফত আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের ইরান সফর ও ইরানের সাথে সম্পর্ক নিয়ে মতানৈক্যের কারণে এক সম্মেলনে জমিয়ত খেলাফত আন্দোলন থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর থেকে জমিয়তের নতুন পথচলা শুরু হয়।

উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, মাওলানা আব্দুল করিম শায়খে কৌড়িয়াকে সভাপতি ও মাওলানা শামসুদ্দীন কাসেমীকে সাধারণ সম্পাদক ১৯৮৪ সালে করে জমিয়ত পুনরায় নিজস্ব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করে। ১৯৮৮ সালের ২০ মার্চ জামেয়া হুসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ মাদরাসায় অনুষ্ঠিত জমিয়তের কাউন্সিলে মাওলানা আব্দুল করিম কৌড়িয়া সভাপতি ও মাওলানা শামসুদ্দীন কাসেমী সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পুনরায় নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালের ১১, ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জমিয়তের কাউন্সিলে মাওলানা আব্দুল করিম কৌড়িয়াকে সভাপতি, মাওলানা শামসুদ্দীন কাসেমীকে নির্বাহী সভাপতি ও মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাসকে মহাসচিব করে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়।
১৯৯৬ সালের ১৯ অক্টোবর মাওলানা শামসুদ্দীন কাসেমী মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৯৬ সালের ৩০ নভেম্বর ও ১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জমিয়তের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে শায়খে কৌড়িয়াকে সভাপতি ও মাওলানা মুহিউদ্দীন খানকে নির্বাহী সভাপতি ও মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাসকে মহাসচিব করে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠন করা হয়। ২০০০ সালের ২৩ ও ২৪ জুন জমিয়তের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে শায়খে কৌড়িয়াকে সভাপতি, মাওলানা আশরাফ আলী বিশ্বনাথীকে নির্বাহী সভাপতি ও মুহাম্মদ ওয়াক্কাসকে মহাসচিব করে ৬১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠন করা হয়। ২০০১ সালের ১২ নভেম্বর জমিয়তের সভাপতি শায়খে কৌড়িয়া মৃত্যুবরণ করেন। তখন নির্বাহী সভাপতি মাওলানা আশরাফ আলী বিশ্বনাথীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।

২০০২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জমিয়তের বার্ষিক কাউন্সিলে মাওলানা আশরাফ আলী বিশ্বনাথীকে সভাপতির দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। ২০০৩ সালের ১ জুন জমিয়তের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে মাওলানা আশরাফ আলী বিশ্বনাথীকে সভাপতি ও মুহাম্মদ ওয়াক্কাসকে মহাসচিব পুনঃনির্বাচিত করে ৭৭ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। ২০০৫ সালের ২০ মে মাওলানা আশরাফ আলী বিশ্বনাথী মৃত্যুবরণ করলে মাওলানা মুহিউদ্দীন খানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০০৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর মজলিসে আমেলা ও শূরার যৌথ সভায় আল্লামা আব্দুল মোমিন শায়খে ইমামবাড়ীকে সভাপতির দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।
২০০৮ সালের ২৬ জুন দক্ষিণ শাহজাহানপুর মাহবুব আলী ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত কাউন্সিল অধিবেশনে পুনরায় শায়খে ইমামবাড়ীকে সভাপতি, মাওলানা মুহিউদ্দীন খানকে নির্বাহী সভাপতি ও মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাসকে মহাসচিব করে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠন করা হয়। ২০১২ সালের ১৮ জুন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জমিয়তের কাউন্সিলে পুনরায় শায়খে ইমামবাড়ীকে সভাপতি, মাওলানা মোস্তফা আজাদকে নির্বাহী সভাপতি ও মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাসকে মহাসচিব করে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ (মজলিসে আমেলা) গঠন করা হয়। ২০১৫ সালের ৭ নভেম্বর আজিমপুরস্থ কনভেনশন সেন্টারে জমিয়ত সভাপতি মাওলানা আব্দুল মোমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে আব্দুল মোমিনকে সভাপতি ও মাওলানা নূর হুসাইন কাসেমীকে মহাসচিব নির্বাচিত করে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ (মজলিসে আমেলা) গঠন করা হয়।

২০১৮ সালের ১৪ জুলাই পল্টনস্থ জমিয়তের কেন্দ্রীয় দফতরে অনুষ্ঠিত জমিয়তের কাউন্সিলে শায়খে ইমামবাড়ীকে সভাপতি ও মাওলানা নূর হুসাইন কাসেমীকে মহাসচিব করে ১৬১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ (মজলিসে আমেলা) গঠন করা হয়। ২০২০ সালে ৭ এপ্রিল সভাপতি আব্দুল মোমিন মৃত্যুবরণ করেন। ৮ এপ্রিল ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান আল্লামা শায়খ জিয়া উদ্দিন। ১৩ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন মহাসচিব মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী। তার স্থলে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব গ্রহণ করেন মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী। ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জমিয়তের জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে শায়খ জিয়া উদ্দিনকে সভাপতি, মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীকে মহাসচিব ও মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুককে সহসভাপতি করে ১৮৯ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়।

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ