মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ ।। ৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৭


‘কোনো আশ্বাস নয়, অবিলম্বে কওমি স্বীকৃতির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন চাই’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিস সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং জাতীয় পর্যায়ে সমানাধিকারের দাবিতে সোমবার (২৪ নভেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে ‘কওমি শিক্ষা অধিকার আন্দোলন’। দেশের বিভিন্ন কওমি মাদরাসা থেকে আগত হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও আলেমের অংশগ্রহণে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ২০১৮ সালে আইন পাস হওয়া সত্ত্বেও, ছয় বছরের বেশি সময় ধরে কওমি শিক্ষার্থীরা একটি ‘কাগুজে স্বীকৃতি’ নিয়ে বসে আছে। এই অকার্যকর স্বীকৃতির কারণে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং দেশ গড়ার মূলধারায় অংশগ্রহণের সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, যা জুলাই বিপ্লবের "বৈষম্যহীন বাংলাদেশ"-এর চেতনার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, প্রখ্যাত আলেম মুফতি শামসুদ্দোহা আশরাফী বলেন, ‘স্বীকৃতি আমাদের জাতীয় অধিকার। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইসলামিক স্টাডিজে যে যোগ্যতা অর্জন করে, কওমি শিক্ষার্থীরা তার চেয়ে কোনো অংশেই কম যোগ্যতা অর্জন করে না। আমরা রাষ্ট্রের কাছে প্রত্যাশা করি, কওমি মাদ্রাসার স্বকীয়তা ঠিক রেখে আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য দেশের গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় পদগুলোতে কর্মসংস্থান এবং দেশ-বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষার সকল পথ উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক।’

সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা আশরাফ মাহদী বলেন, ‘২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে শতাধিক কওমি ছাত্রের রক্ত রয়েছে। বিগত সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কওমি সনদের মূলা ঝুলিয়ে আমাদের সাথে প্রতারণা করেছে। সেই অকার্যকর স্বীকৃতি আমরা প্রত্যাখ্যান করি। ২৪-পরবর্তী বাংলাদেশে আমরা এই বৈষম্য দেখতে চাই না। একটি সুনির্দিষ্ট কমিশনের অধীনে মাস্টার্সের সার্টিফিকেটের কার্যকর স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ধর্মীয় প্রকল্পে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের সুযোগ দিতে হবে।’

আন্দোলনের আহ্বায়ক মাওলানা মারুফ বিল্লাহ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘একশ কওমি ছাত্রের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আছে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, কিন্তু তাদের কাছে এই রক্তের কোনো মূল্য নেই। যে অভ্যুত্থান কওমি ছাত্রদের অংশগ্রহণ ছাড়া স্বপ্নই থেকে যেত, সেই ছাত্রদের প্রতিই আজ চরম অবহেলা দেখানো হচ্ছে। বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে গঠিত সরকার নিজেই এক বিরাট বৈষম্য রেখে বিদায়ের পথে। আমাদের তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না, ইনশাআল্লাহ।’

মানববন্ধন থেকে সরকারের কাছে তিনটি সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরা হয়:
দাবি-১: দাওরায়ে হাদিসের মাস্টার্স মানের নিঃশর্ত ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন (উচ্চশিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে সমান সুযোগ)।
দাবি-২: বিশেষ অধ্যাদেশের মাধ্যমে উলামায়ে কেরাম পরিচালিত একটি স্বতন্ত্র ‘চার্টার্ড কওমি বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা।
দাবি-৩: আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শিক্ষার সকল ভিসা ও প্রশাসনিক বাধা অপসারণ।

মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক রকিবুল ইসলাম, সদস্য সচিব মাওলানা আসাদুজ্জামান, অর্থ সম্পাদক মুফতি হাসিবুল ইসলাম , মাওলানা মোশারফ হোসাইন (সদস্য সচিব, জাতীয় কওমি ঐক্য) মাওলানা শরিফ সিয়াম -সহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ