রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মামুন কর্তৃক হিজাব নিয়ে কটাক্ষের প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) নারী শিক্ষার্থীবৃন্দ।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর ২০২৫) বিকাল ৫ টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে 'চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরের নারী শিক্ষার্থী' ব্যানারে এই মানববন্ধন আয়োজিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) ছাত্রীকল্যাণ সম্পাদক নাহিমা আক্তার দ্বীপা, সহ ছাত্রী কল্যাণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদাউস রিতা এবং সহ দপ্তর সম্পাদক জান্নাতুল আদন নুসরাত। আরো বক্তব্য রাখেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হল সংসদের জিএস নাজিফা তাসফিয়াহ, বিজ্ঞান ,গবেষণা ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক নিশাত সালসাবিল শিকদার এবং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তাওফিকা রহমান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন হলের প্রতিনিধি ও অন্যান্য নারী শিক্ষার্থীবৃন্দ।
চাকসুর ছাত্রীকল্যাণ সম্পাদক নাহিমা আক্তার দ্বীপা বলেন, "রাকসুতে বিজয়ী হিজাব পরিহিত বোনদের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মামুন কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। সেই সাথে তিনি ক্লাসে হিজাবীদের কটাক্ষ করে থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট এবং মদ হাতে ক্লাসে আসতে চেয়েছেন। তার এই বক্তব্য ধর্মীয় অনুশাসন ও দেশের আইনের পরিপন্থী। আমরা তার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একই সাথে প্রতিবাদ জানাচ্ছি এরকম মানসিকতার সেইসব শিক্ষকের কাজকে, যারা অনবরত হিজাবকে কটাক্ষ করে আসছেন।"
চাকসুর সহ-দপ্তর সম্পাদক জান্নাতুল আদন নুসরাত বলেন "একজন শিক্ষক, যিনি সমাজের পথপ্রদর্শক হওয়ার কথা, তিনি যখন নারীদের পোশাক নিয়ে বিদ্রূপ করেন, তখন তা একটি পুরো শ্রেণিকে, একটি পরিচয়কে, একটি বিশ্বাসকে অপমানিত করে। আজকের এই প্রতিবাদ কেবল একজন শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে নয়। আমাদের প্রতিবাদ সেই মানসিকতার বিরুদ্ধে, যা একজন শিক্ষকের কণ্ঠে বিদ্বেষ জাগায়, একজন নারীর পোশাক নিয়ে উপহাস করতে শেখায় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো জায়গাকে বৈষম্যের জায়গায় পরিণত করে। আমরা চাই, আমাদের হিজাবী বোনেরা হোক গর্বিত, নিরাপদ ও মর্যাদাবান। আমরা ন্যায়ের পক্ষে, সম্মানের পক্ষে, মর্যাদার পক্ষে দাঁড়িয়েছি।"
চাকসুর সহ-ছাত্রী কল্যাণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদাউস রিতা বলেন, "রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গনযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষকের মন্তব্য নারীর প্রতি অবমাননা এবং নারীর মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করে। তিনি পোশাকের স্বাধীনতা চেয়েছেন অথচ একজন শিক্ষার্থীর বোরকা পড়ার যে স্বাধীনতা, তা তিনি মানতে পারছেন না। আমরা মনে করি এরকম দ্বি-চারিতামূলক আচরণ শিক্ষাঙ্গনে ভারসাম্য নষ্ট করে।"
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হল সংসদের বিজ্ঞান ,গবেষণা ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক নিশাত সালসাবিল শিকদার বলেন, "আমাদের নির্বাচিত হিজাব ও নিকাব পরা বোনেরা ডাকসু, জাকসু, রাকসু এবং চাকসুতে নিজেদের যোগ্যতা, দক্ষতা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁরা প্রমাণ করেছেন -হিজাব কখনও কাজের সক্ষমতায় বাধা নয়। হিজাব আমাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, সম্মান ও বিশ্বাসের প্রতীক। একজন শিক্ষকের কাছ থেকে এ নিয়ে কটাক্ষ শুধু হতাশাজনকই নয়, গভীরভাবে উদ্বেগজনকও। আরও দুঃখজনক যে, তিনি মদ্যপানকেও স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন যা সামাজিক অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ। আমরা এই অগ্রহণযোগ্য কাজের জন্য তাঁর উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানাচ্ছি, যাতে ভবিষ্যতে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আর এধরনের হীন মানসিকতা প্রকাশের সাহস না পান।"
ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তাওফিকা রহমান বলেন, "চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনিন্দিতা সরকার প্রথা হিজাব নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। আমরা তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু, আদৌ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কিনা এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছি।"
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হল সংসদের জিএস নাজিফা তাসফিয়াহ বলেন, "ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৮ ধারায়, কেউ কোনো ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে ধর্মীয় অবমাননামূলক বক্তব্য দিলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের শাস্তব এবং অর্থদন্ডের কথা উল্লেখ আছে। আমরা কী এই আইনগুলো কী শুধু লিখিত আইনই রয়ে যাবে? এগুলোর বাস্তবায়ন কী আমরা কখনোই দেখবো না?"
এলএইস/