বুধবার, ২১ মে ২০২৫ ।। ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ ।। ২৩ জিলকদ ১৪৪৬


তিস্তার পানিতে ভেসে গেছে কৃষকের স্বপ্ন, বন্যার শঙ্কা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তার পানি বেড়ে কুড়িগ্রামের উলিপুর ও রাজারহাট উপজেলায় নিম্নাঞ্চলের ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে। এতে করে ধান, বাদাম, কাউন, শাকসবজি, মরিচ ও ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল তলিয়ে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়ে দিশেহারা কৃষক। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, শুধু বাদামেই ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকার ওপরে।

রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তৈয়বখা গ্রামের বাসিন্দা আমিনুর ইসলাম জানান, ঋণ নিয়ে তিনি তিস্তা নদীর চরে ১০ বিঘা জমিতে বাদাম আবাদ করেন। ভারী বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে অপরিপক্ক এসব বাদামের খেত এখন পানির নিচে।

উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের চর গোড়াই পিয়ার গ্রামের বাহার আলী জানান, তার প্রায় এক একর জমির বাদাম খেত পানির নিচে। শুধু কৃষক বাহার আলী আর আমিনুলই নয়, এমন হাজারো কৃষকের স্বপ্ন এখন নদীর পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কুড়িগ্রাম চর উন্নয়ন কমিটির 

আহ্বায়ক অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন, হাজার কোটি টাকার ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে তিস্তা নদীর চরে। অথচ তিস্তা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে প্রতিবছর কয়েকশ কোটি টাকার ফসলহানি হলেও কর্তৃপক্ষের নেই কোনো ভ্রূক্ষেপ। 


কুড়িগ্রাম খামারবাড়ির অতিরিক্ত উপপরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, জেলায় চলতি মৌসুমে ৯৫০ হেক্টর বাদাম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও অর্জিত হয়েছে ৯১২ হেক্টর। এদিকে রাতভর বৃষ্টিপাতের কারণে রংপুর মহানগরীসহ এ অঞ্চলের নিম্নাঞ্চলের অনেক স্থান প্লাবিত হয়েছে। 

গত ৪৮ ঘণ্টায় রংপুরে প্রায় ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে জমির ধান, বাদামসহ রবিশস্য পানিতে নিমজ্জিত অবস্থায় রয়েছে। সব চেয়ে ক্ষতি হয়েছে তিস্তার চরাঞ্চলের কৃষি ফসলের। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের দৈনন্দিন বিভিন্ন নদ-নদীর যে তথ্য প্রকাশ করা হয় তাতে দেখা গেছে, রংপুরের তিস্তা নদীর ডালিয়া, গংগাচড়া, কাউনিয়াসহ সব ক’টি পয়েন্টে পানির স্তর বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। 

এদিকে সিলেট ব্যুরো জানায়, ভারী বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে সিলেটের একাধিক উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জের বেশ কিছু নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সিলেট অঞ্চলে মাত্র তিন ঘণ্টায় ১০১ মিলিমিটার এবং সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত নয় ঘণ্টায় রেকর্ড হয়েছে ১৮৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। 

এদিকে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসন সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা’ ঘোষণা করে আগাম সতর্কতা জারি করেছে। তাছাড়া সিলেট মহানগর ও আশপাশের এলাকায় দিনভর বৃষ্টির কারণে দেখা দিয়েছে সাময়িক জলাবদ্ধতা। 

এদিকে শেরপুর প্রতিনিধি জানান, ভারী বর্ষণে শেরপুরের সীমান্তবর্তী তিন উপজেলায় বন্যার শঙ্কায় উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার মানুষ। 

শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আখিনুজ্জামান জানান, মঙ্গলবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত নালিতাবাড়ীর চেল্লাখালি নদীর পানি বাতকুচি পয়েন্টে বিপদসীমার ১২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, বৃষ্টি ও উজানের পানিতে নদনদীর পানি বেড়েছে। তবে এখনও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ