বিশেষ প্রতিনিধি
আজ থেকে ঠিক পাঁচ বছর আগের কথা। ২০২০ সালের ১৮ এপ্রিল। সেদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি ঐতিহাসিক জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যা শিরোনাম হয়েছিল দেশি-বিদেশি সংবাদপত্রে। আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল সবখানে।
জানাজাটি ছিল প্রখ্যাত মুফাসসিরে কোরআন ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতা মাওলানা জুবায়ের আহমদ আনসারীর। এর আগের দিন তিনি ইন্তেকাল করেন। তখন দেশে করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দেশজুড়ে চলছে কঠোর লকডাউন। সবখানে অজানা আতঙ্ক। পারতপক্ষে কেউ ঘরের বাইরে বের হন না।
কড়া সেই লকডাউন উপেক্ষা করে সেদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার বেড়তলা গ্রামে জড়ো হয়েছিলেন লাখ লাখ মানুষ। কোনো ভয়ই তাদের রুখতে পারেনি প্রিয় মাওলানার জানাজায় অংশ নিতে।
ওই জানাজায় অংশ নেওয়ার সূত্র ধরে বেড়তলাসহ তিন উপজেলার আটটি গ্রাম লকডাউনের নির্দেশ দেয় জেলা প্রশাসন। এসব গ্রামের বাসিন্দাকে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকারও নির্দেশ দেওয়া হয়।
বেড়তলা ছাড়া বাকি গ্রামগুলো হলো- আগ উপজেলার খড়িয়ালা, বৈগইর, মৈশাইর; সরাইল উপজেলার পানির ইউনিয়নের শান্তিনগর, সীতাহরণ, বড়ইবাড়ি ও সদর উপজেলার মালিহাতা। এসব গ্রামের কাউকে ১৪ দিন বাড়ি থেকে বের হতে দেয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সেই সময় দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে এই খবর প্রকাশ করা হয়। আশঙ্কা করা হয়, এই জানাজার কারণে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
ভয়াবহ দুঃসহ যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে ১৪ দিন কাটে আট গ্রামের মানুষের। পরে তাদের সবাইকে করোনা পরীক্ষা করা হয়। তবে অলৌকিক ব্যাপার হলো, এসব গ্রামে একজনও করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়নি। এটাকে অনেকেই কারামত হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
মাওলানা জুবায়ের আহমদ আনসারী দেশের প্রখ্যাত বক্তা ও মুফাসসিরে কোরআন ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। জামিয়া রাহমানিয়া বেড়তলা, সরাইল মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি প্রচুর মসজিদ-মাদরাসা প্রতিষ্ঠা ও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে বেশ কয়েক বছর ভোগার পর ৫৬ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন।
এসএকে/