শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫


শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি: কারণ ও প্রতিকার কী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি: আওয়ার ইসলাম

|| হাসান আল মাহমুদ ||

দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে উদ্বিগ্ন হারে বাড়ছে যৌন হয়রানি। ঘটছে আত্মহত্যাসহ নানা দুর্ঘটনা। আর এমন দুর্ঘটনা ঘটছে হরহামেশাই। সাম্প্রতিক সময়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানির ঘটনাকে কেন্দ্র করে নারী শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনায় বিষয়টি নতুন করে সামনে আসে। তবে যতগুলো ঘটনা প্রকাশ পায় তার থেকেও বেশি ঘটনা অপ্রকাশিতই থেকে যায় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এসব ঘটনার পেছনে কী কারণ রয়েছে এবং কী তার প্রতিকার তা নিয়ে কথা বলছেন দেশের শীর্ষ দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির জন্য বিচারহীনতাকে দায়ি করেন দেশের শীর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী

তিনি বলেন, যেসমস্ত টিচাররা যৌন হয়রানি করছে শিক্ষার্থীদের, তারা নিজেদেরকে দাপুটে মনে করে। তারা মনে করে ‘বিচার নাই, তাই যা ইচ্ছে তাই করি’।

তিনি বলেন, শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মোবাইল চ্যাটিংকে আরো কাছে এনে দেয় যৌন হয়রানি। হাই-হ্যালোর একটা পর্যায়ে টিচারের যে একটা প্রভাব থাকে সেটা কমে যায় এবং মেয়ে শিক্ষার্থীরও লজ্জা কমে যায়। প্রথম দিকে এমন কিছু আচরণ করা হয় যাতে বুঝায় যে তার সাথে যৌন আচরণ করা যায়। পরে দেখা যাচ্ছে যখন সে রাজি হচ্ছে না, তখনিই ঘটে দুর্ঘটনা।

‘এক হাতে তো তালি বাজে না, দেখা যাচ্ছে একটা ঘটনার পিছনে মেয়েরাও কোনো অংশে কম নয়। শিক্ষকরা যেমন দায়ি, শিক্ষার্থীরাও দায়ি’।–মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, একজন শিক্ষক অবশ্যই মর্যাদাবান একজন ব্যক্তি। তিনি যখন সে মর্যাদাবান বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন না, তখন তার সম্মান ধরে রাখার চেষ্টা থাকে না। ফলশ্রুতিতে সে এমন এমন আচরণ করে বসে, যার দ্বারা তার সম্মানহানি হয়।

অবাধ মেলামেশাকে সহজলব্ধ করার কারণে আজকাল যৌন হয়রানির মতো ঘটনা আমাদের সামনে বারবার আসছে বলে উল্লেখ করে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, ‘আমরা শুনেছি একটা সময় আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের আলাদা কমন রুম থাকতো, ক্লাস করে তারা কমন রুমে চলে যেত। আর এখন দেখা যাচ্ছে ক্লাস শেষ, তারা একই সাথে ঘুরছে, আড্ডা দিচ্ছে, ইয়ার্কি-ফাজলামি সবকিছু করছে যেটাকে আমরা এককথায় যদি বলি তাহলো ‘অবাধ মেলামেশা’। এই অবাধ মেলামেশাটাই হলো যৌন হয়রানির বড় কারণ।

এদিকে, দেশের শীর্ষ কওমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্রগ্রামের আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা আশ্রাফ আলী নিজামপুরী বলেন, তাকওয়া-খোদা ভীতি আমাদের মাঝে নেই। শিক্ষক-শিক্ষার্থী কারো মাঝে নেই আল্লাহর ভয়। নেই পরকালের জবাবদিহিতা। আবার এর শিক্ষাও নেই আমাদের জাতীয় পাঠ্যপুস্তকে। ফলশ্রুতিতে নানা দুর্ঘটনা একের পর এক ঘটছে।

তিনি বলেন, ‘এছাড়া, দেশে চলছে সহশিক্ষা। পর্দা করা ফরজ, এর লংঘন হচ্ছে, তা নিয়ে আমাদের রাষ্ট্রপরিচালকদের মাথাব্যথা নেই।’

সহশিক্ষা ব্যবস্থা উঠিয়ে দিয়ে ছেলে ও মেয়েদের আলাদা শিক্ষা ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে দেশের শীর্ষ কওমি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এই শিক্ষক বলেন, ‘ছেলেদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুধু পুরুষ শিক্ষকরাই ক্লাস নেবেন। মেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুধু মহিলা শিক্ষিকা পাঠদান করাবেন। ছেলে ও মেয়ে যখন আলাদা থাকবে, শিক্ষক ও শিক্ষিকা যখন আলাদা থাকবেন এবং তাকওয়া-খোদাভীতির পাঠ যখন পুস্তকে থাকবে, তখন আশা করি যৌন হয়রানির মতো নানা ঘটনা আমাদের সামনে আসবে না ইনশাআল্লাহ।

হাআমা/


সম্পর্কিত খবর