শনিবার, ১৮ মে ২০২৪ ।। ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ।। ১০ জিলকদ ১৪৪৫


আলেমদের সোহবতে এসে ইলম শিখতে হবে: মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বয়ান: মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা
তরজমা: মাওলানা কারী জুবায়ের
শ্রুতি লিখন: রাহাত জামিল ও হুসাইন আহমাদ খান

দীনি কথাবার্তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য শুনা উচিত। যারা ইচ্ছে করে দীনি কথা শুনে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে সুসংবাদ দেন।কুরআন ইরশাদ করেন যারা ইচ্ছে করে শুনে এবং সে অনুযায়ী আমল করে সেই জ্ঞানী লোক।আল্লাহ তাদেরকেই পথ দেখান।

আল্লাহ তায়ালা গোটা দুনিয়া বানিয়েছেন মানুষের জন্য। আর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে এই পয়গামই দিয়েছেন। আর আমাদেরকে পাঠিয়েছেন আখেরাতের প্রস্তুতির জন্য। আমাদের শেষ ঠিকানা হবে মৃতু।তাই অল্প সময়ে জীবনকে আখেরাতের জন্য বানানো উচিত।

এই দুনিয়া সৃষ্টি করার দুটি দিক আছে,এক হলো প্রয়োজন মিটানো, আরেক হলো চাকচিক্য। হাদিস এ এসেছে তিরমিজি শরিফ : ২৪৫৯

বুদ্ধিমান সে যে নিজের অন্তরকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুত হয়। আল্লাহ দুনিয়ার সকল কিছুতে চাকচিক্য দিয়েছেন মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য। কে প্রয়োজনের পিছনে ঘুরে আর কে চাকচিক্যের পিছনে ঘুরে। আখেরাতে বদলা পাবে সে যে দীন নিয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন و من يبتغي غير الادإسلام دينا فليقبل আলেইমরান: ( ৮৫) منه و هو في الأخرة من الخاسرين

অর্থ দীন ছাড়া আখেরাতে কোন বদলা দেয়া হবে না।এই দুনিয়া বেকার নয়।অযথা আল্লাহ তাআালা দুনিয়া সৃষ্টি করেননি।আখেরাতকে বানানোর জন্যই দুনিয়া দিয়েছেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন ربنا ما خلقت هاذا আলেইমরান :(১৯১)অর্থ: আল্লাহ অনর্থক এই দুনিয়া সৃষ্টি করেনি। যে দুনিয়া আখেরাতকে ভুলিয়ে দেয় সে দুনিয়াতে কোন নেয়ামত নেই। যে দুনিয়া আখেরাত কে স্মরণ করায় সে দুনিয়া কতই না উত্তম। নবীদেরকে আল্লাহ এই জন্যই পাঠিয়েছেন যে, তোমরা আখেরাত বানাও। উম্মতকে আখেরাতমূখী কর।

আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক ইমান দ্বারাই কায়েম হয়।আর ইমান হলো لا إلاه إلا الله যে আল্লাহর সমস্ত হুকুম পালন করে আল্লাহর সাথে তার সম্পর্ক কায়েম হয়ে যায়।আর আল্লাহর সাথে যার সম্পর্ক হয়ে যায় আল্লাহ তার আখেরাত সুন্দর করে দেন। তাকে স্বচ্ছলতা দান করেন। তার সকল হাজত পুরণ করে দেন।

হাদিস শরিফে এসেছে من أصلح بينه و بين الله أصلح الله بينه وبين خلقه অথ:যে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ঠিক করে নেয়, আল্লাহ তার মাখলুকের সাথে তার সম্পর্ক ঠিক করে দেন। বান্দা অনেক সময় পেরেশান হয়। বিপদে পড়ে। তখন তার উচিত আল্লাহর সাথে সম্পর্ক কায়েম করা।এছাড়া আর কোন রাস্তা নেই।

যতদিন আল্লাহ আল্লাহ বলনে ওয়ালা বাকি থাকবে, ততদিন কেয়ামত হবে না। বুঝা যায় এ দুনিয়া আল্লাহর ইবাদত এর জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে।দুনিয়া হলো আল্লাহর হক, বান্দর হক আদায় করার জায়গা। এর বদলা আখেরাতে পাওয়া যাবে।

তো এই ইমানের চাহিদা কি ?? যেমন: মালের চাহিদা হলো মালকে বাড়ানো, এজন্য মালদার তার মাল বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন ব্যস্ত থাকে। তো ভাই ইমানের চাহিদা হলো আল্লাহর হুকুম পালন করা। ইমানকে বাড়ানো।

আনুগত্যের বৈশিষ্ট্য হলো আগুন পানির বৈশিষ্ট্যের মত। যখন আনুগত্য করা হবে তখন রহমত নাজিল হবে। আল্লাহ বলেন اطيعوا الله و اطيعو আলে ইমরান : (১৩২)الرسول لعلكم ترحمون অর্থ:আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর।তাহলে তোমাদের প্রতি রহমত নাজিল হবে। এইজন্যই সাহাবায়ে কেরাম বলতেন: بايعنا رسول الله صلي الله عليه و سلم علي الطاعة আমরা আল্লাহর রাসূলের আনুগত্যের বায়াত গ্রহন করলাম।তাই খুশি অবস্থায়,নারাজ অবস্থায়, মন চাইলে না চাইলে সর্বহালতে আল্লাহর আনুগত্য করাই ইমানের দাবি।

আল্লাহ আমাদের দুটি নেয়ামত দিয়েছেন। এক. জান দুই. মাল। আর এর তাকাজা হলো আল্লাহর আনুগত্য করা।আর আনুগত্য করতে গেলে ইলম প্রয়োজন, কেননা ইলম ছাড়া আনুগত্য সহীহ হয় না।আনুগত্য সহীহ করতে গেলে ইলম শিখতে হবে।

নিজের ভিতর এই অনুভূতি জাগানো যে, আল্লাহ আমাকে এতো নেয়ামত দিয়েছেন সুতরাং আমাকে আল্লাহর হুকুম পালন করতে হবে।আর "হুকুম" কি তা জানতে হলে ইলম লাগবে। ইলম হলো হুকুম এর বিষয়ে জানার নাম। আর জিকির হলো হুকুম বাস্তবায়ন করার নাম।আমরা যে আল্লাহর রাস্তায় যাই, এর উদ্দেশ্য হলো আমাদের মাঝে অনুভূতি তৈরী হওয়া। যখন অনুভূতি তৈরী হবে তখন ইলম ও জিকির করা যাবে।
গাফলত ও জাহালাত এটা কুফুরির সিফত। জিকির ও ইলম হলো ইমানের সিফাত।

এই এলম হাসিল করার ২ পদ্ধতি, এক হলো কিতাব পড়ে ওস্তাদ এর কাছ থেকে শিক্ষা করা। আরেক হলো আলেমদের সোহবতে যেয়ে শিক্ষা করা। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে ইলম শিক্ষা দিয়েছেন। এমনিভাবে সাহাবায়ে কেরাম তাদের পরবর্তীদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। এমনি ভাবে একে অপর থেকে শিক্ষা করেছেন। আমাদেরকেও আলেমদের সোহবত এ থেকে এলম শিক্ষা করতে হবে তাহলে আমারা জীবনকে আখেরাতের জন্য বানাতে পারব।

ইলম ২ ধরনের। এক. ফাযায়েল ইলম। দুই. মাসায়েল ইলম। ফাজায়েল ইলমের উদ্দেশ্য হলো মাসায়েল শিখার আগ্রহ তৈরী হওয়া।সেই আগ্রহ দিয়ে মাসায়েল শিখে নিজের জীবন কে আখেরাতের জন্য তৈরী করা।

সুতরাং আল্লাহর দীন শিখার জন্য ফারেগ হতে হবে, আল্লাহর রাস্তায় তাবলীগ এ বের হতে হবে। তাহলে আল্লাহই তার সকল জরুরত মিটিয়ে দিবেন ইনশাআল্লাহ।

-এটি


সম্পর্কিত খবর