রবিবার, ১২ মে ২০২৪ ।। ২৮ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ৪ জিলকদ ১৪৪৫


‘ইসলাম’ বিশ্বব্যাপী দাওয়াতি ধর্ম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

।।সাইফুল ইসলাম রিয়াদ।।

আসমানি ধর্মগুলোর মধ্যে অন্যতম হল ইসলাম। এ ধর্মের আবশ্যকীয় দায়িত্বের একটি হল দীনি দাওয়াতের প্রচার-প্রসার করা। দাওয়াতি এ মেহনত নির্দিষ্ট কোনো এলাকা, বংশ, পরিবার বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়, বরং পুরো পৃথিবীর জন্য। কেয়ামত পর্যন্ত ইসলামের পরিধি বিস্তৃত হবে ক্রমাগত। ছেঁয়ে যাবে পৃথিবীর রন্ধ্রে রন্ধ্রে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি আল্লাহ পাকের ইরশাদ-

قُلْ يايهاالناس انى رسول الله اليكم جميعا

‘আপনি বলুন, হে লোক সকল! আমি সমগ্র মানব জাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত রাসুল।’ [সুরা আ’রাফ:১৫৮]

আল্লাহ প্রদত্ত মানব জাতির জন্য পাঠানো নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুয়তির দায়িত্ব ছিল সর্বদিক ব্যাপৃত। কোনো বিশেষ এলাকা, গোত্র বা সময়ের সাথে বেধে দেননি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাওয়াতের ব্যাপকতা। এটা হল ইসলামের বুনিয়াদি পদ্ধতি।

দাওয়াতে আরেকটি দিক হল, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু মানুষের নবী ছিলেন না, বরং জীনদেরও নবী ছিলেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেন-

تبارك الذى نزل الفرقان على عبده ليكون للعالمين نذيرا

‘বরকতময় তিনি, যিনি তার বান্দার প্রতি ফয়সালার গ্রন্থ (কুরআন) নাযিল করেছেন; যাতে তিনি গোঠা জগতের জন্য সতর্ককারী হোন।’ [সুরা ফুরকান:০১]

এখানে عالمين শব্দটির দ্বারা উদ্দেশ্য হল, মানুষ ও জীন সম্প্রদায়। জীন স্বতন্ত্র এক জাতি। জীন এবং মানুষ হল মুকাল্লাফ সৃষ্টি। মুকাল্লাফ বলা হয়, যাদের উপর শরিয়তের বিধি-নিষেধ আরোপিত। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে মানুষের নবী, তেমনিভাবে জীনদেরও নবী। তারাও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মত। কুরআনের ভাষ্য-

قل اوحى الى انه استمع نفر من الجن فقالوا انا سمعنا قراناعجبا
يهدى الى الرشد فامنا به ولن نشرك بربنا احدا

‘বলুন! আমার প্রতি ওহি নাযিল করা হয়েছে যে, জীনদের একটি দল তা শুনেছে এবং বলেছে, নিশ্চয় আমরা বিস্ময়কর কুরআন শুনেছি! যা সৎ পথ প্রদর্শন করে। ফলে আমরা এতে বিশ্বাস এনেছি। আমরা কখনও আমাদের পালনকর্তার সাথে কাউকে শরিক করব না।’
[সুরা জীন:১-২]

এই আয়াত নাযিলের পেছনে রয়েছে চমৎকার পটভূমি। তা হলো-
একদিন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার বাইরে সফরে বেরিয়েছেন। ক’জন সাহাবি ছিলেন তার ভ্রমণসঙ্গী। সফররত অবস্থায় ফজর নামাযের ওয়াক্ত চলে আসে। তিনি সাহাবিদের নিয়ে খোলা ময়দানে নামায আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে যান। তিনি কুরআন তেলাওয়াত করছিলেন, এমতাবস্থায় সেই মাঠ অতিক্রম করছিল জীনদের একটি দল।
কুরআনের অলৌকিক তেলাওয়াত শুনে থমকে যায় তাদের গতিপথ। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনতে লাগল কুরআনের মধুর বাণী। বিভোর কাটে না যে সুরে- তার সংবাদটি বিদ্যুতগতিতে পৌঁছে দিল নিজ গোত্রের অন্য সবার কাছে।
ঘটে যাওয়া সুন্দর মুহুর্তটি যে আল্লাহ পাকের পরিকল্পনাধীন ছিল তা শুনুন কুরআনের ভাষায়-

واذ صرفنا اليك نفر من الجن يستمعون القران فلما خضروه قالوا انصتوا فلما قضي ولوا الى قومهم منذرين

‘যখন আমি জীনের একটি দলকে আপনার প্রতি আকৃষ্ট করেছিলাম, তখন তারা কুরআন তেলাওয়াত শুনছিল। তারা যখন কুরআন তেলাওয়াতের স্থানে পৌঁছল, তখন একে অপরকে বলল, চুপ থাক। তারপর যখন তেলাওয়াত সমাপ্ত হল, তখন তারা তাদের সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে গেল।’ [সুরা আহকাফ:২৯]

এই আয়াতটির পরবর্তী আয়াতে উল্লেখ আছে যে, জীনদের এই দলটি নিজ সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে বলল, আমরা এমন এক কিতাব শুনে এসেছি যা মুসা আলাইহিস সালামের পর অবতীর্ণ হয়েছে। তারা তাদের সঙ্গীদের বলল, আল্লাহর এই পয়গম্বরের কথা মানো। আল্লাহর উপর ঈমান আনো।

এই আয়াতগুলো থেকে প্রতীয়মান হওয়া গেল যে, এখানে ‘আলামিন’ দ্বারা জীন এবং মানুষ উদ্দেশ্য। এই দু’টি সৃষ্টিই ‘মাখলুকে মুকাল্লাফ’ বা শরিয়তের বিধান আরোপিত সৃষ্টি। অন্য সকল সৃষ্টিই গাইরে মুকাল্লাফ।

ইসলামের অমোঘ বাণী সমগ্র বিশ্বের জন্য। এর প্রচার-প্রসারের পারম্পর্য চলবে কেয়ামতের ফুঁৎকার পর্যন্ত। এই উম্মতের উপর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সকল দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় মুসলিম উম্মাহ দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছে ইসলামি দাওয়াহ ও মিশন পরিচালনার।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতের কর্তব্য হল, কুরআন ও সুন্নাহ’র আলোকে মানুষের মাঝে দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া। মানুষের মাঝে দাওয়াত জারি থাকলে পরকালে লজ্জিত হবে না। দাওয়াতি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে সবাই গুনাহগার হবে।

লেখক: মুহাদ্দিস, মারকাযুল মাআরিফ আল ইসলামিয়া, তেজগাঁও, ঢাকা।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ