মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট ২০২৫ ।। ৪ ভাদ্র ১৪৩২ ।। ২৫ সফর ১৪৪৭

শিরোনাম :
বিএনপি কি ইসলামপন্থীদের আস্থা হারাচ্ছে?  নোয়াখালীতে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ৩০০ শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা গণতন্ত্রকামী দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হলে ফ্যাসিস্ট পুনর্বাসন হবে: তারেক রহমান ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থী ৬৫৮ জন, হল সংসদে ১ হাজার ৪২৭ মাইলস্টোনের তিন শিক্ষক জাতির কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন জুমার নামাজে না গেলে দুই বছরের দণ্ড হতে পারে  রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য নির্বাচন জরুরি: মির্জা ফখরুল সৌদি আরবে নতুন হজ কাউন্সেলর কামরুল ইসলাম তাওয়াফের সময় হাজরে আসওয়াদের সামনে দাঁড়িয়ে না থাকার নির্দেশ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ১০০০ বৃক্ষরোপণ

মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জহির মুহম্মদ উদ্দিন বাবর: পৃথিবী ছেড়েছিলেন এই দিনে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: ভারতবর্ষে মুঘল রাজবংশের সূচনা ইতিহাসের এক যুগান্তকারী ও মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা। ১৫২৬ খ্রি. জহিরউদ্দিন মুহম্মদ বাবর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এই বংশ কয়েক শতাব্দি ধরে শাসন পরিচালনা করে।

জানা যায় যে, মুঘল শব্দটি এসেছে ‘মোঙ্গ’ বা ‘মোঙ্গল’ শব্দ হতে। এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা জহিরুদ্দিন মুহাম্মদ বাবর ছিলেন পিতার দিক থেকে চেঙ্গিস খান এবং মাতার দিক হতে তৈমুর লঙ এর বংশধর। মুঘল বংশ প্রাথমিকভাবে তার পূর্ণ নিয়ন্ত্রন ও শক্তি নিয়ে ১৫২৬-১৭০৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতবর্ষে শাসন পরিচালনা করে। পরবর্তীতে ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের কাছে বাংলার স্বাধীনতা হারালে পরবর্তী ১০০ বছর ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মুঘল শাসকগণ নামমাত্র শাসক হিসেবে পরিণত হয়। তবে গৌরব ও আধিপত্যের যুগে মুঘলরা ছিল পারস্যের সাফাভী ও তুরস্কের ওসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রতিদ্বন্দী।

বাবর জন্মেছিলেন ১৪৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ফারগানা (বর্তমানে উজবেকিস্তান) প্রদেশের আনদিজান শহরে। তিনি ফারগানা প্রদেশের শাসনকর্তা ওমর মির্জার বড় পুত্র ছিলেন। পিতার মৃত্যুর পর মাত্র ১২ বছর বয়সেই সিংহাসনে বসেন। তবে চাচার ষড়যন্ত্রের কাছে পরাজিত হয়ে সেখান থেকে বিতাড়িত হন বাবর। পরে ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে হিন্দুকুশের দিকে পা বাড়ান বাবর।

ভারতে রাজ্য স্থাপন পরিকল্পনা সফল করতে বাবরকে একের পর এক নানা বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করতে হয়। পানিপথ,খানুয়া, ঘর্ঘরার যুদ্ধ, এই তিনটি প্রধান যুদ্ধে সাফল্য অর্জন করার পর বাবরের স্বপ্ন সফল হয়। এই তিনটি যুদ্ধ হল পানিপথের প্রথম যুদ্ধ, খানুয়ার যুদ্ধ ও ঘর্ঘরা যুদ্ধ।

সম্রাট বাবর হচ্ছেন পৃথিবীর প্রথম শাসক, যিনি নিজের আত্মজীবনী লিখেছিলেন। 'বাবরনামা'-তে তাঁর জীবনের সাফল্য আর ব্যর্থতা - দুইয়ের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।

তুর্কি ভাষায় কবিতা লিখতেন বাবর। বাবরনামায় ব্যবহৃত বেশ কিছু শব্দ এখন ভারতে প্রতিদিনের ভাষার অঙ্গ হয়ে গেছে। যেমন 'ময়দান' শব্দটা তাঁর জীবনীতেই প্রথমবার দেখা যায়। সেভাবেই অনেক তুর্কি আর ফার্সি শব্দ ভারতীয়দের মুখের ভাষায় ঢুকে গেছে।

সাম্রাজ্য পরিচালনার মধ্যেও নিজের পরিবারের প্রতি নিষ্ঠাবান ছিলেন বাবর।

তার মা এবং নানির সঙ্গে যেমন গভীর সম্পর্ক ছিল, তেমনই বোনের কাছেও বাবর ছিলেন এক আদর্শ ভাই। আবার ছেলে হুমায়ূনের প্রতিও ছিল গভীর পিতৃস্নেহ।

হুমায়ূনের একবার কঠিন অসুখ হয়েছিল, এরপরেই একরাতে তিনি পুত্রের শয্যার পাশে চক্রাকারে ঘুরতে লাগলেন, আর বিড়বিড় করে বলতে লাগলেন, ‘হে আল্লাহ, যদি একজনের প্রাণ নিয়ে আরেকজনের প্রাণ ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব হয়, তাহলে পুত্রের প্রাণের বিনিময়ে আমার নিজের প্রাণ উৎসর্গ করতে আমি প্রস্তুত।’ ‘হুমায়ুন কে সুস্থ করে দাও, আর হমায়ুনের অসুখ আমাকে দাও’-এমন সব প্রার্থনা।

আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, এর কিছুদিন পরেই হুমায়ুন ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠতে লাগলেন। আর সম্রাট বাবর ধীরে ধীরে অসুস্থ হতে শুরু করলেন। তবে, হুমায়ুনের সুস্থ হয়ে ওঠা আর সম্রাট বাবরের অসুস্থ হয়ে বিছানায় যাওয়ার মাঝে ব্যবধান ছিলো কয়েক মাস।

মৃত্যুর আগে  তিনি পুত্র হুমায়ুনকে মুঘল সাম্রাজ্যের পরবর্তী সম্রাট ঘোষণা দেন। এর তিন দিন পর, ১৫৩০ সালের ২৬ ডিসেম্বর ৪৭ বছর বয়সে হিন্দুস্তান ও মুঘল সাম্রাজ্যের প্রথম সম্রাট জহির উদ্দিন বাবর পৃথিবীকে বিদায় জানিয়ে পরপারে মহান রবের কাছে চলে গেলেন। পেছনে রেখে গেলেন নিজের জীবনের বিশাল এক কীর্তি আর বীরত্বপূর্ণ ও স্নেহবৎসল্যের এক অসমাপ্ত অধ্যায়।

এনটি


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ