মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫ ।। ১৯ কার্তিক ১৪৩২ ।। ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
চট্টগ্রামে সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত পরিষদের মতবিনিময় সভা জুলাই আন্দোলনের অগ্রসেনানী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর বিরুদ্ধে মামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ খুলনায় হাতপাখার সংসদ সদস্য প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির জরুরি বৈঠক সার্বিক উন্নয়ন ও ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে চাই: হাফিজ ফখরুল ইসলাম ফরিদপুরে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীর প্রচারণার গেট ও ব্যানার ভাঙচুর  জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির জন্য নভেম্বরেই গণভোট দিতে হবে: এ টি এম মাছুম জামায়াত আমিরের আসনে বিএনপির প্রার্থী হলেন যিনি খালেদা জিয়াসহ ৯ নারী পেলেন বিএনপির মনোনয়ন ২৩৭ আসনে বিএনপির ধানের শীষ পেলেন যারা নাসিরুদ্দিন পাটওয়ারীর বিরুদ্ধে মামলায় মতিউর রহমান আকন্দ নিন্দা

মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জহির মুহম্মদ উদ্দিন বাবর: পৃথিবী ছেড়েছিলেন এই দিনে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: ভারতবর্ষে মুঘল রাজবংশের সূচনা ইতিহাসের এক যুগান্তকারী ও মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা। ১৫২৬ খ্রি. জহিরউদ্দিন মুহম্মদ বাবর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এই বংশ কয়েক শতাব্দি ধরে শাসন পরিচালনা করে।

জানা যায় যে, মুঘল শব্দটি এসেছে ‘মোঙ্গ’ বা ‘মোঙ্গল’ শব্দ হতে। এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা জহিরুদ্দিন মুহাম্মদ বাবর ছিলেন পিতার দিক থেকে চেঙ্গিস খান এবং মাতার দিক হতে তৈমুর লঙ এর বংশধর। মুঘল বংশ প্রাথমিকভাবে তার পূর্ণ নিয়ন্ত্রন ও শক্তি নিয়ে ১৫২৬-১৭০৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতবর্ষে শাসন পরিচালনা করে। পরবর্তীতে ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের কাছে বাংলার স্বাধীনতা হারালে পরবর্তী ১০০ বছর ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মুঘল শাসকগণ নামমাত্র শাসক হিসেবে পরিণত হয়। তবে গৌরব ও আধিপত্যের যুগে মুঘলরা ছিল পারস্যের সাফাভী ও তুরস্কের ওসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রতিদ্বন্দী।

বাবর জন্মেছিলেন ১৪৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ফারগানা (বর্তমানে উজবেকিস্তান) প্রদেশের আনদিজান শহরে। তিনি ফারগানা প্রদেশের শাসনকর্তা ওমর মির্জার বড় পুত্র ছিলেন। পিতার মৃত্যুর পর মাত্র ১২ বছর বয়সেই সিংহাসনে বসেন। তবে চাচার ষড়যন্ত্রের কাছে পরাজিত হয়ে সেখান থেকে বিতাড়িত হন বাবর। পরে ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে হিন্দুকুশের দিকে পা বাড়ান বাবর।

ভারতে রাজ্য স্থাপন পরিকল্পনা সফল করতে বাবরকে একের পর এক নানা বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করতে হয়। পানিপথ,খানুয়া, ঘর্ঘরার যুদ্ধ, এই তিনটি প্রধান যুদ্ধে সাফল্য অর্জন করার পর বাবরের স্বপ্ন সফল হয়। এই তিনটি যুদ্ধ হল পানিপথের প্রথম যুদ্ধ, খানুয়ার যুদ্ধ ও ঘর্ঘরা যুদ্ধ।

সম্রাট বাবর হচ্ছেন পৃথিবীর প্রথম শাসক, যিনি নিজের আত্মজীবনী লিখেছিলেন। 'বাবরনামা'-তে তাঁর জীবনের সাফল্য আর ব্যর্থতা - দুইয়ের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।

তুর্কি ভাষায় কবিতা লিখতেন বাবর। বাবরনামায় ব্যবহৃত বেশ কিছু শব্দ এখন ভারতে প্রতিদিনের ভাষার অঙ্গ হয়ে গেছে। যেমন 'ময়দান' শব্দটা তাঁর জীবনীতেই প্রথমবার দেখা যায়। সেভাবেই অনেক তুর্কি আর ফার্সি শব্দ ভারতীয়দের মুখের ভাষায় ঢুকে গেছে।

সাম্রাজ্য পরিচালনার মধ্যেও নিজের পরিবারের প্রতি নিষ্ঠাবান ছিলেন বাবর।

তার মা এবং নানির সঙ্গে যেমন গভীর সম্পর্ক ছিল, তেমনই বোনের কাছেও বাবর ছিলেন এক আদর্শ ভাই। আবার ছেলে হুমায়ূনের প্রতিও ছিল গভীর পিতৃস্নেহ।

হুমায়ূনের একবার কঠিন অসুখ হয়েছিল, এরপরেই একরাতে তিনি পুত্রের শয্যার পাশে চক্রাকারে ঘুরতে লাগলেন, আর বিড়বিড় করে বলতে লাগলেন, ‘হে আল্লাহ, যদি একজনের প্রাণ নিয়ে আরেকজনের প্রাণ ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব হয়, তাহলে পুত্রের প্রাণের বিনিময়ে আমার নিজের প্রাণ উৎসর্গ করতে আমি প্রস্তুত।’ ‘হুমায়ুন কে সুস্থ করে দাও, আর হমায়ুনের অসুখ আমাকে দাও’-এমন সব প্রার্থনা।

আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, এর কিছুদিন পরেই হুমায়ুন ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠতে লাগলেন। আর সম্রাট বাবর ধীরে ধীরে অসুস্থ হতে শুরু করলেন। তবে, হুমায়ুনের সুস্থ হয়ে ওঠা আর সম্রাট বাবরের অসুস্থ হয়ে বিছানায় যাওয়ার মাঝে ব্যবধান ছিলো কয়েক মাস।

মৃত্যুর আগে  তিনি পুত্র হুমায়ুনকে মুঘল সাম্রাজ্যের পরবর্তী সম্রাট ঘোষণা দেন। এর তিন দিন পর, ১৫৩০ সালের ২৬ ডিসেম্বর ৪৭ বছর বয়সে হিন্দুস্তান ও মুঘল সাম্রাজ্যের প্রথম সম্রাট জহির উদ্দিন বাবর পৃথিবীকে বিদায় জানিয়ে পরপারে মহান রবের কাছে চলে গেলেন। পেছনে রেখে গেলেন নিজের জীবনের বিশাল এক কীর্তি আর বীরত্বপূর্ণ ও স্নেহবৎসল্যের এক অসমাপ্ত অধ্যায়।

এনটি


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ