মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট ২০২৫ ।। ৪ ভাদ্র ১৪৩২ ।। ২৫ সফর ১৪৪৭

শিরোনাম :
বিএনপি কি ইসলামপন্থীদের আস্থা হারাচ্ছে?  নোয়াখালীতে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ৩০০ শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা গণতন্ত্রকামী দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হলে ফ্যাসিস্ট পুনর্বাসন হবে: তারেক রহমান ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থী ৬৫৮ জন, হল সংসদে ১ হাজার ৪২৭ মাইলস্টোনের তিন শিক্ষক জাতির কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন জুমার নামাজে না গেলে দুই বছরের দণ্ড হতে পারে  রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য নির্বাচন জরুরি: মির্জা ফখরুল সৌদি আরবে নতুন হজ কাউন্সেলর কামরুল ইসলাম তাওয়াফের সময় হাজরে আসওয়াদের সামনে দাঁড়িয়ে না থাকার নির্দেশ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ১০০০ বৃক্ষরোপণ

হেদায়েতি বয়ান: আলেমদের দিকনির্দেশনায় তাবলিগ করতে হবে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

তীব্র শীত উপেক্ষা করেই রোববার (১২ জানুয়ারি) লাখো মানুষ অংশ নিয়েছিলেন শুরায়ী নেজামের বিশ্ব ইজতেমার মোনাজাতে। মুসলিম উম্মাহর সুদৃঢ় ঐক্য, দুনিয়া ও আখেরাতে শান্তি এবং দেশের কল্যাণ কামনা করা হয় মোনাজাতে। এবারের মোনাজাত পরিচালনা করেছেন কাকরাইল মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা জোবায়ের আহমেদ। এ ইজতেমায় হেদায়তি বয়ান করেন মাওলানা জিয়াউল হক (রায়ব্যান্ড)। আওয়ার ইসলাম পাঠকদের জন্য বাংলায় সেই বয়ানটি তুলে ধরেছেন মুহাম্মদ বিন ওয়াহিদ


আল্লাহ তাআলার অশেষ অনুগ্রহ, তিনি আমাদেরকে মুসলমান বানিয়েছেন এবং ঈমানেরমত সবচেয়ে দামি ও মূল্যবান নেয়ামত দান করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ।

দোস্তো বুজুর্গ, আল্লাহ তাআলা যেমনিভাবে আমাদেরকে ঈমানের নেয়ামত দিয়েছেন, তেমনিভাবে বড় ও মহান এক দায়িত্বও দিয়েছেন। যেই দায়িত্বই হল আমাদের এতো সম্মান, এতো পুরস্কারের মূল রহস্য।

সেটা হল, আল্লাহ তাআলার আহকামাত (নির্দেশনা) গুলো নিজে মানা এবং সারা অপরকে তার দাওয়াত দেওয়া। মানুষদেরকে দ্বীনের দিকে আহ্বান করা। অর্থাৎ আমি নিজেও দ্বীন মানবো, আল্লাহ তাআলার হুকুম গুলো মানবো এবং লোকদেরকেও মানানোর চেষ্টা করব। এটাই আমাদের দায়িত্ব। এবং জীবনের উদ্দেশ্য।

দোস্তো বুজুর্গ, হুজুর সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লামের পরে আর কোনো নবী আসবেন না। নবী আগমনের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু উম্মতের ধারাবাহিকতা শেষ হয়নি। এই জন্য এই নবিওয়ালা জিম্মাদারি আমাদেরকে দান করা হয়েছে। এই দায়িত্বকে পূরণ করতে হবে।

আল্লাহ তাআলার আহকামাতগুলো নিজে মানতে হবে এবং সমস্ত মানুষের কাছে তা পৌঁছাতে হবে।
সবার ভেতরেই যোগ্যতা আছে, মানুষকে আল্লাহ তাআলার দিকে ডাকার এবং তার নাফরমানি করা থেকে বাধা প্রদান করার ।

আজকে আমরা যারা আল্লাহর রাস্তায় বের হচ্ছি এই দায়িত্ব তাদেরও এবং যারা যাচ্ছি না তাদেরও।
সুতরাং মৃত্যু পর্যন্ত দ্বীনের ওপরে চলা এটা যেমন আমার দায়িত্ব, তেমন অন্যকে মৃত্যু পর্যন্ত দ্বীনের দিকে ডাকা, এটাও আমার দায়িত্ব। একেই বলে ইসলাহে নফস বা আত্মার পরিশুদ্ধি ।

দোস্তো বুজুর্গ, দ্বীনের কাজ করা ওই ব্যক্তির জন্য সহজ হবে, যে একাজকে নিজের জন্য করবে।
মানুষ যখন বুঝবে , দাওয়াত দেওয়া আমার কাজ, এর দ্বারা আমি নিজে হেদায়েত লাভ করব, তাই এ কাজ আমার জন্য জরুরি, তার জন্য কাজটাকে আল্লাহ তাআলা সহজ করে দিবেন।

পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি মনে করবে, এই কাজ এখন আর আমার দরকার নাই। যা শেখার প্রয়োজন ছিল, তাতো শিখে ফেলেছি। যা আমল করার দরকার ছিল, তাতো আমল করে ফেলেছি। সুতরাং আমার জরুরত পূরণ হয়ে গেছে। এখন আমার দাওয়াতের কাজ করার কোনো প্রয়োজন নাই। করলেও অন্যের জন্য করতে হবে। আমি হেদায়েত পেয়েছি। অন্যজন পায়নি। যে পায়নি তাকে হেদায়েতের ওপরে ওঠানোর জন্য দাওয়াতের কাজ করতে হবে। এমন ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তাআলার রাস্তায় বের হওয়া, দাওয়াতের কাজ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে যায়।

যখন নিয়তের মধ্যে নিজেকে না রেখে অন্যকে রাখবে, তখন সে প্রকৃত মানুষ হতে পারবে না। আসল মুমিন হিসেবে দ্বীনের সাথে লেগে থাকতে পারবে না। যেমন, একজন রোগীর জন্য হসপিটালে যাওয়া, ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া, অশুধ খাওয়া, ডাক্তার যা খেতে বলেন, তা খাওয়া। আর যা খেতে নিষেধ করেন,তা থেকে বেঁচে থাকা, এগুলো ওই ব্যক্তির জন্য সহজ, যে নিজেকে রোগী মনে করবে। যে সুস্থ হতে চায়।

অপরদিকে রোগী যদি নিজেকে রোগীই মনে না করে, হসপিটালে না যায়, ডাক্তারের দেওয়া অশুধ না খায়, যা খেতে বলে তা না খায়, যা খেতে নিষেধ করে তা খাওয়া না ছাড়ে, তাহলে সে সুস্থ হতে পারবে না। তার থেকে রোগ দূর হবে না।

তেমনিভাবে আমি যখন দাওয়াত নিজের জন্য না দিব, নিজের হেদায়েতের ফিকির না করব, অন্যের পেছনে পড়ে যাব, তখন আমি দ্বীন থেকে সরে যাব।

দোস্তো বুজুর্গ, যেভাবে মেহনত করতে বলা হয়, সেভাবেই মেহনত করতে হবে। যেগুলো পরিত্যাগ করতে বলা হয় সেগুলো পরিত্যাগ করতে হবে।

আমরা এই মেহনতের জন্য বের হচ্ছি দ্বীনকে শেখার জন্য। বের হচ্ছি, ওই মেহনত করার জন্য, যেই মেহনতের ব্যাপারে হেদায়েতের ওয়াদা করা হয়েছে। এই মেহনত হল সামষ্টিক কিছু আমলের নাম । এক কাজের নাম এই মেহনত নয় । যেখানেই থাকব, যেভাবেই থাকব, দাওয়াত দিতে হবে । তালীম তাআল্লুম অর্থাৎ শেখা শেখানোর আমল করতে হবে। ইবাদত-যিকির করতে হবে। খেদমত করতে হবে। এই সবগুলো কাজ সমন্বয় করে এই মেহনতের নাম রাখা হয়েছে।

আমি আল্লাহর রাস্তায় বের হলাম, কিন্তু সবগুলো কাজ করলাম না, তাহলে আমি আমার কাজকে সম্পন্ন করলাম না। মেহনত পুরা হবে চারটা কাজের দ্বারা। যদি পুরা করি তাহলে আমাদের বের হওয়ার মাকসাদ পুরা হবে। নয়তো হবে না ।

[caption id="attachment_175956" align="aligncenter" width="300"] বই কিনতে ক্লিক করুন[/caption]

যখন আমার মধ্যে এই কাজের মেজাজ তৈরি হয়ে যাবে, তখন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আমার মধ্যে একটা নূর আসবে। আমি যখন বাড়িতে যাব, তখনও এই কাজ করব। এমন যেন না হয়, আজকে আমার ভালো লাগছে , তাই দীর্ঘক্ষণ কাজ করলাম। আর যখন ভালো না লাগে তখন করলাম না, এমন যেন না হয়।

হাদীস শরীফে আছে, সর্বোত্তম আমল হল ওইটা, যা ধারাবাহিকভাবে করা হয় । যেই কাজের কথা বলা হচ্ছে এটা হল নুরানি আমল। যেই নুরের দ্বারা আল্লাহ তাআলার সাথে আমার মোহাব্বত তৈরি হবে। আল্লাহ থেকে তার দূরত্ব ঘুচবে।

দোস্তো বুজুর্গ, একাজে শরিক হওয়ার উদ্দেশ্য কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা । আল্লাহ তাআলা যেন আমাকে জান্নাতে দান করেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। আমি যেন পরকালে সফল হই, পুরস্কৃত হই। হ্যাঁ, এর সাথে দুআ এবং চেষ্টাও থাকতে হবে। যেন আমার দ্বারা আরও অনেক মানুষ হেদায়েত পায়। আমার মাধ্যমে যেন আল্লাহ তাআলা খেদমত নেন।

আমরা যে দ্বীনের দাওয়াত দিবো, আখেরাতকে সামনে রেখে দিব। যতোগুলো নবিকে আল্লাহ তাআলা পাঠিয়েছেন, তারা আখেরাতকে সামনে রেখেই দ্বীনের দাওয়াত দিতেন। এই জন্য উচিত হল, আমরা যার সাথেই কথা বলবো তার সাথে আখেরাতের আলোচনাও করব।

খোদা না করুন, কারও উদ্দেশ্য যদি আখেরাত না হয়ে দুনিয়া হয় । তাহলে সে দ্বীনের কাজ করতে পারবে ততক্ষণ, যতোক্ষণ তার দুনিয়াবি কাজের কোনো খতি না দেখবে। যখন সে দুনিয়ার খতি দেখবে, সাথে সাথে তার খতি থেকে বাঁচার জন্য দ্বীনের কাজকে ছেড়ে দিবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, নবিদেরকে আমি একটি বিশেষত্ব দিয়েছি, সেটা হল আখেরাতের বিশেষত্ব। এই জন্য আমরাও দ্বীনের কাজ করব আখেরাতকে সামনে রাখব।

দোস্তবুজুর্গ, লোকদেরকে কালিমা এবং তাওহীদের দিকে ডাকতে হবে। আল্লাহ তাআলা সবকিছুর ব্যাপারে একক ক্ষমতাবান। সমস্ত নবিদের দাওয়াত ছিল, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু বেশি বেশি কালেমার দাওয়াত দিব। যেন এর হাকিকত আমার অন্তরে বসে যায়। যেন আমার অবস্থা এমন হয় যে, দুনিয়ার সমস্ত মানুষ যদি আমার ক্ষতি করতে চায়, তাহলে ততটুকুই করতে পারবে যতোটুকু আল্লাহ তাআলা চান, ততোটুকুই কল্যান করতে পারবে, যতোটিকু আল্লাহ তাআলা চান, এই বিশ্বাস যেন তৈরি হয়।

আল্লাহর রাসূল এক যুবককে ডেকে বললেন, হে যুবক শোনো, গোটা দুনিয়ার মানুষ একত্রিত হলেও তোমার ততটোকুই ক্ষতি করতে পারবে, যতোটুকু আল্লাহ তাআলা চান, তেমনিভাবে ততোটুকুই কল্যাণ করতে পারবে, যতোটুকু তিনি চান। আমাদের সকলের দিল যেন এ ব্যাপারে এতমিনান হয়ে যায় , ভালো মন্দ যা কিছু হয় সব আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকেই হয়। এতে মাখলুকের কোনো হাত নেই।

আমরা মুসলমান। আমাদের সবার কাজই হল কল্যাণের দিকে ডাকা । দুনিয়ার দিকে নয়। আখেরাতের দিকে ডাকা । মাখলুক থেকে খালেকের দিকে ডাকা । এটাই হবে আমাদের মেহনত। সমস্ত নবিদের কাজ ছিল তাওহীদ এবং আহকামাতের দিকে ডাকা । আল্লাহ তাআলার সমস্ত হুকুম আমাদের জানা থাকতে হবে। আল্লাহ তাআলা যতোটুকু করতে বলেছেন ততটুকুই করতে হবে। কমও নয় বেশিও নয়।

দোস্ত বুজুর্গ, আমরা যা মিখবো, সহীহ শুদ্ধ শিখব। নামাজে যতোটুকু কেরাত পড়তে হয়, তা যেন সহীহ হয়।
আমাদের ইবাদাত যেন প্রথাগত না হয়। ইহসান থাকা চাই। আপাদমস্তক আল্লাহ তাআলা আমাকে দেখছেন, ইবাদাতে এই কথা মনে থাকতে হবে।

আমার জানার ওপরে যেন আমি সন্তুষ্ট না হয়ে যাই, আমি সবকিছু জানি, আমি সব আমল করি, নিজের প্রতি যেন এমন ইতেমাদ(নির্ভরতা) না হয়। বরং উলামায়ে কেরামের সাথে মশওয়ারা করব। তাদের কাছে বেশি বেশি যাতায়াত করব। তাদেরকে মোহাব্বত করব। তারা যা করতে বলেন তা করব। যা ছেড়ে দিতে বলেন তা ছেড়ে দিব।

আরএম/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ