সময়ের সাহসী কণ্ঠস্বর কবি মুসা আল হাফিজ। পরিচয়ে কবি হলেও লিখছেন সবই। গবেষণা করছেন সম্প্রতির অনুচ্চারিত গুরুতর সব বিষয় নিয়ে। সাহিত্য, দর্শন, ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহ তার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু।
দীর্ঘ দুই যুগ ধরে দুহাতে লিখে চলা এ কলমযোদ্ধার প্রকাশিত বই এ নাগাদ বিশেরও বেশি। দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক পত্রিকার পাশাপাশি অনলাইন পোর্টালগুতোও তার সমান বিচরণ। ইসলাম ও মুসলিম বিশ্বের সাম্প্রতিক বিভিন্ন সংকট নিয়ে কথা বলেছেন আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম সম্পাদক হুমায়ুন আইয়ুব-এর সঙ্গে।
হুমায়ূন আইয়ুব : আপনার সম্প্রতি প্রকাশিত বই সম্পর্কে জানতে চাই।
মুসা আল হাফিজ : 'সহস্রাব্দের ঋণ' প্রকাশিত হলো গত মাসে। ঢাউস আকারের বই। ইহুদি বুদ্ধিজীবী স্যামুয়েল পি. হান্টিংটনের তাবিজ গলায় ঝুলিয়ে সভ্যতার সংঘাতে পশ্চিমারা ইসলামকে প্রধান প্রতিপক্ষ বানিয়ে এর বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক যে রণাঙ্গণ তৈরি করেছে, বইটি সেই রণাঙ্গণে একটি প্রতিরোধের অংশ। ইউরোপীয় সভ্যতাকে ইসলামি সভ্যতার চোখ দিয়ে দেখার একটি চেষ্টা এ বই।
হুমায়ূন আইয়ুব : নতুন যে কাজ করছেন...
মুসা আল হাফিজ : কয়েকটি কাজ... বিশেষত সিরাত। সিরাতকে আমি আলাদা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। কারণ এর যথার্থ চর্চা ও বিকাশ না হলে আমরা, মুসলিমরা ইসলামের জন্য আরোও বিপজ্জনক হয়ে উঠবো।
হুমায়ূন আইয়ুব : মুসলিমরা ইসলামের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে?
মুসা আল হাফিজ : হতে পারে। আমরা যেমন মুসলিম, আমরা ইসলামের নামে যা করছি, তাকে যদি কোনো অমুসলিম ইসলাম হিসেবে ধারণা করে, সে জীবনেও মুসলিম হতে চাইবে না।
হুমায়ূন আইয়ুব : কেউ মুসলিম হতে চাইলে কুরআন হাদিস আছে। সেখানে ইসলামের শিক্ষা আছে। তা পড়বে। আমাদের দেখে মুসলিম হতে চাইবে কেন?
মুসা আল হাফিজ : কুরআন হাদিসে যা আছে, সেটা তত্ত, দর্শন,বিধান। সেটার প্রায়োগিক রূপ কেমন? বিশ্বাসীদের মধ্যে প্রতিফলিত রূপটা কেমন? কুরআন-হাদিসকে মেনে নিলো যে সমাজ, যে মানুষ, সেই মানুষ ও সমাজ কেমন? কেমন মানুষ হয়ে উঠলো? কেমন সমাজ হয়ে উঠলো? তা যাচাই করা অত্যন্ত স্বাভাবিক।
কেউ যদি আমাদের মধ্যে তা যাচাই করে, সে হয়তো মুসলিম হবার ইচ্ছা পোষণ করবে না। তার মানে আমরা মুসলিম হয়েও তাকে ইসলাম থেকে দূরে সরালাম। এর মানে আমরা ইসলামের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠলাম।
ইসলামের যত ক্ষতি মুসলিমরা করে চলছি, অমুসলিমরা ততটা করছে না। তারা যা করতে পারছে, তাও প্রধানত আমাদের কারণে করতে পারছে। আর ইসলামি চেতনার পাহারা দেবেন যারা, তাদের একটি অংশ ইসলামের ঢাল হাতে নিয়ে পাহারা দিচ্ছেন নিজেদের স্বার্থের। যে বেড়া খেতের হেফাজত করবে, প্রায়ই দেখবেন, সে বেড়াই ধান খাচ্ছে ইসলামি চেতনার।
হুমায়ূন আইয়ুব : ইসলাম তাহলে চারদিক থেকে হুমকির মুখে?
মুসা আল হাফিজ : হুমকির মুখে ইসলাম কখন ছিলো না? প্রায় দেড় হাজার বছরের প্রতিটি মুহূর্ত হুমকির ঢেউ উজিয়ে ইসলাম চলে এসেছে। হুমকি থাকবেই। কিন্তু মুসলিমরা নানাভাবে এবং অব্যাহতভাবে ইসলামকে রক্তাক্ত করে চলতে পারি না।
হুমায়ূন আইয়ুব : এই রক্তাক্ত করা কীভাবে? ব্যাখ্যা করবেন?
মুসা আল হাফিজ : অনেক দিক থেকে হচ্ছে। যেমন ধরেন, ইসলামের অখণ্ডতা। আমরা তাকে খণ্ডিত করছি। কিছু দিক ধরছি, কিছু দিক ছাড়ছি, বেমালুম চেপে যাচ্ছি বহু দিক। ইসলামের অখণ্ডতা, অবিভাজ্যতা ও সম্পূর্ণতাকে বাদ দিয়ে ইসলামকে দেখছি আমরা। এভাবে দেখা ও দেখানো মানুষ ইসলামে জীবন সমস্যার সমাধান পাবে?
কেউ বলছি না ইসলাম অপূর্ণ, কিন্তু প্রেজেন্টেশন করছি একটি বিকলাঙ্গ ইসলামকে। কারো হাত কাটলে যা হয়, পা কাটলে যা হয়, মাথা কাটলে যা হয়, ইসলামের বিভিন্ন দিককেও এভাবে অব্যাহতভাবে বেমালুম চেপে গেলে তা হয়। ইসলামের রক্ত ঝরে। ওরা ঝরায় মুসলিমদের রক্ত আর আমরা ঝরাই ইসলামের রক্ত।
আমাদের চর্চায় ইসলামের অনেকগুলো ভার্সন তৈরি হচ্ছে। যেমন ধরুন উপমহাদেশীয় রূপ। এখানেও আবার আছে লামাযহাবী রূপ, বেরলভি রূপ, আলিগড়ি রূপ, জামায়াতী রূপ ইত্যাদি। বিভিন্ন ঘরানা থাকতেই পারে, স্বাভাবিক। যেমন থাকতে পারে দেওবন্দি ঘরানাও।
কিন্তু প্রত্যেক ঘরানার বেশির ভাগ অনুসারী নিজেদের চর্চিত যে রূপ, তাকেই একমাত্র সত্য ও যথার্থ হিসেবে ভাবি এবং এক্ষেত্রে খুবই নিরাপোষ থাকি। অনেকেই আবার নিজেরা যা করছেন, তাকেই ইসলাম বলে চালিয়ে দিচ্ছেন।
এই উপমহাদেশে মুসলিমরা ইসলামের প্রচার- প্রসারে যত উদ্যম, সাধনা, মনোযোগ ও সময় ব্যয় করেছি, এর চেয়ে অনেক বেশি ব্যয় হয়েছে এক ঘরানার সাথে অন্য ঘরানার ঝগড়ায়। এমনও দেখা গেছে, এক ঘরানাকে ঘায়েল করার জন্য অন্য ঘরানার লোকেরা ইসলামের শত্রুদের সাথেও হাত মেলাতে দ্বিধা করেনি।
ভাবে ও ভাষায় মুসা আল হাফিজ স্বতন্ত্র পথের দিশারী: প্রফেসর আবদুর রহীম
এসএস
 
                              
                           
                              
                           
                         
                              
                           
                        
                                                 
                      
                                                  
                                               
                                                  
                                               
                                      
                                         
                                      
                                         
                                      
                                        