সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ৩০ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
তিন পুরুষের জমিয়ত উত্তরসূরী মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী আজ হজ ফ্লাইট উদ্বোধন করবেন ধর্ম উপদেষ্টা হেফাজতের খুলনা মহানগরী সভাপতি মাওলানা সাখাওয়াত, সম্পাদক গোলামুর রহমান যুদ্ধের মাঝে যৌথ অস্ত্র উৎপাদন: ভারত-ইসরায়েল সামরিক সম্পর্কের বিবর্তন তাকওয়ার ছায়ায় মানবসভ্যতার বিকাশ ‘মানুষের ক্ষুধা নিবারণ না করতে পারলে সংস্কার-নির্বাচন ভেস্তে যাবে’ সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা কমিটির সভা ৩ মে’র মহাসমাবেশ সফল করতে বগুড়ায় হেফাজতের মতবিনিময় সভা ২৭ খণ্ডের ‘ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ’ অনুবাদ করাচ্ছে সরকার ভারতের প্রসিদ্ধ আলেম স্যাইয়িদ আকীল মাজাহিরির ইন্তেকালে জমিয়তের শোক

ঢাবির অধ্যাপক আমেনা মহসিনের বক্তব্যের প্রতিবাদে ৩ দফা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আব্দুল্লাহ: ভাষা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত একটি অমোঘ নেয়ামত৷ ভাষা হচ্ছে ভাবের বাহন৷ ভাব বিনিময় করেই প্রতিটি জীব তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করে থাকে৷

ব্যাকরণবিদগণের মতে, মনের ভাব প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত সাংকেতিক চিহ্ন-ই ভাষা৷ পৃথিবীতে প্রায় ৩৫০০ হাজারেরও বেশি ভাষা প্রচলিত আছে৷ তন্মধ্যে অন্যতম হলো আরবি৷

গেল শনিবার ১৬ ডিসেম্বর ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মাঝে উগ্রবাদের প্রভাব প্রকট’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে, বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কথা বলা, পোশাক ও দিবস উদ্‌যাপনের মধ্যে উগ্রবাদের প্রভাব প্রকট হয়ে উঠেছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক৷

“বাংলাদেশ : ফেসিং চ্যালেঞ্জস অব র‍্যাডিকালাইজেশন আ্যন্ড ভায়োলেন্ট এক্সট্রিমিজম” শীর্ষক গবেষণা প্রবন্ধে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের “আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ” র একদল গবেষক এইসব মন্তব্য পেশ করেন৷ অধ্যাপক আমেনা মহসিন, অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন যৌথভাবে গবেষণাকর্মটি সম্পন্ন করেছেন৷

প্রবন্ধ উপস্থাপন অধিবেশনে আরো উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক রওনক জাহান ও গবেষক আফসান চৌধুরী৷

প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে গিয়ে অধ্যাপক আমেনা মহসিন বলেন, তারা দেখেছেন বিদায়, সম্ভাষণ ও দৈনন্দিন নানা বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কথাবার্তায় আরবি শব্দের ব্যবহার বাড়ছে৷ নারী শিক্ষার্থীদের মাঝে হিজাব, নেকাব পরা এবং ছেলেদের মাঝে ওয়াহাবি মতাদর্শ অনুসারীদের মতো গোড়ালির উপর প্যান্ট পরার প্রবণতা বাড়ছে৷

তার মতে শিক্ষার্থীদের মাঝে আরবি ভাষা চর্চা করা এবং ইসলামি মূল্যবোধ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশে উগ্রবাদের সৃষ্টি হচ্ছে৷

এবার আসা যাক মূল কথায়। যদি আমরা ধরেই নেই, তিনি সঠিক বলেছেন তাহলে প্রাথমিকভাবে কয়েকটি বিষয় তার ঘারেই আগে বার্তাবে৷

১. তিনিই উগ্রবাদের পৃষ্ঠপোষক৷ কেননা আমেনা ও মহসিন দুটি শব্দই আরবি৷

২. তার নিকটতম পূর্বপুরুষরা উগ্রবাদী ছিলেন৷ তা না হলে আরবি নাম রাখতেন না৷

৩. তার নাম পরিবর্তন করা উচিত৷ কেননা উগ্রবাদ ও উগ্রবাদের উপাদান এদেশে অবৈধ৷

৪. তিনি প্রবন্ধে হিজাব, নেকাব, ওয়াহাবি ইত্যাদি আরবি শব্দ ব্যবহার করেছেন৷

৬. বাংলাদেশের প্রায় ৯৫ ভাগ মানুষের নাম আরবি ভাষায়৷ তিনি তাদের প্রতি জুলুম করেছেন৷

তাছাড়া ছেলেদের গোড়ালির উপর কাপড় পরা যেমন ওয়াহাবি মতপুষ্ট উগ্রবাদ, তেমনি নারীদের জন্য গোড়ালির নিচে কাপড় পরাও ওয়াহাবি মতপুষ্ট উগ্রবাদ৷ আর তিনি গোড়ালির নিচে কাপড় পরেন সুতরাং তিনিও উগ্রবাদী৷

ইসলাম ধর্ম অনুসারে সতর ঢাকা ফরজ৷ তাই শরীর ঢাকা, হিজাব পরা, নেকাব পরা এ বিধানের অন্তর্ভুক্ত৷ তিনি হিজাব, নেকাব না পরলেও শরীর ভাল করেই ঢেকে রাখেন৷ সুতরাং হিজাব ও নেকাব পরা উগ্রবাদ হলে তিনিও এর বাইরে নন৷

অন্যভাবে বলতে গেলে তিনি ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ শীর্ষস্থানীয় ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিতর্কিত করেছেন৷ কেননা এগুলোতে স্বতন্ত্রভাবে আরবি বিভাগ ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ রয়েছে৷

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সবকটিতেই ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ রয়েছে৷ পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও সমান হারে আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ রয়েছে৷ আর এ দুটি বিভাগের প্রাণ হল আরবি ভাষা৷

এদেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থী এ দুই বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে দেশ সেবায় ব্রতী হচ্ছে৷ তার কাণ্ডজ্ঞানহীন মন্তব্যের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও ঘৃণার পাত্রে পরিণত হলো৷

শুধু কি তাই? এদেশে হাজার হাজার স্কুল ও মাদরাসা রয়েছে যেগুলোতে আরবি ভাষা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ শেখানো হয়৷ আরবি ভাষার বিরুদ্ধে কথা বলে তিনি পুরো শিক্ষাব্যবস্থাইকেই ত্রুটিযুক্ত করেছেন৷

১৪ হাজার কওমি মাদরাসায় প্রায় ২ লাখ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে৷ যারা কদিন আগেই সরকারি স্বীকৃতি লাভ করেছে৷ এদেশের অসংখ্য মসজিদ-মকতবে প্রতিদিন আরবি ভাষার চর্চা করা হয়৷ সেগুলোও তার বক্র মানসিকতা থেকে রক্ষা পায়নি৷

আরবি ভাষা এদেশের ৯৫ ভাগ মানুষের ভক্তির জায়গা৷ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে শতভাগ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহৃত ভাষা৷ পরিবার, সমাজ, শিক্ষাঙ্গন, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিচারালয়সহ সর্বক্ষেত্রে মৌলিক পরিভাষা হিসেবে আরবি শব্দের ব্যবহার চোখে পড়ার মতো৷

২২ টি দেশের রাষ্ট্রীয় ভাষা এই আরবি ভাষা৷ বিশ্বের প্রায় ২শ কোটি মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন আরবি ভাষা৷ বাংলাদেশের বৈদেশিক আয়ের অন্যতম মাধ্যম আরবি ভাষা৷ আপনার আধোয়া কথার মাধ্যমে আপনি বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে হেয় করেছেন।

বিশ্ব মুসলিমের প্রাণকেন্দ্র, জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎসমূল কুরআন-হাদিসকে অপমান করেছেন, হিজাব, নেকাব নিয়ে কথা বলে ইসলামকে অপমান করেছেন৷ আমরা আপনাদের ধিক্কার জানাই৷ তাই আমরা আপনার প্রতি ৩ দফা দাবি পেশ করছি :

( ক) গবেষণা প্রবন্ধ থেকে এই বক্তব্যটি প্রত্যাহার করুন৷ (খ) সকল সংবাদপত্র থেকে সংবাদটি মুছে ফেলার হুকুম জারি করুন৷ (গ) জাতির কাছে ক্ষমা চান এবং ভাষাজ্ঞান লাভ করুন৷

অন্যথায় স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং সাধারণ জনগণ আপনার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে তুলবে।

ভাষা কখনো উগ্রবাদের কারণ হতে পারে না৷ জাতিসংঘের ৬ টি দাফতরিক ভাষার অন্যতম একটি ভাষা হলো আরবি৷ সুতরাং এই ভাষা কোন অপরাধ করেনি বরং আপনাদের মতো দায়িত্বজ্ঞানহীন অধ্যাপকদের কর্মকাণ্ডেই উগ্রবাদ ছড়ায়৷ তাই এইসব অর্থহীন প্রলেপ প্রত্যাহার করুন৷ সঠিক পথে হাঁটুন৷ দেশ ও জাতির কল্যাণে নিয়োজিত হোন৷

আব্দুল্লাহ
এম. এ. আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ