শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ।। ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ ।। ১৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

শিরোনাম :
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের অভিনব প্রতিবাদ হাফেজা/আলেমা শিক্ষিকা নিয়োগ দিচ্ছে আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) মহিলা মাদরাসা শরীয়তপুরের বড়াইল মাদরাসার বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল শনিবার আমরা পণ করেছি আগামীর বাংলাদেশ হবে ইসলামের: ইবনে শাইখুল হাদিস সেনাপ্রধানের সঙ্গে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৫৬৫ অনিবার্য কারণ ছাড়া নির্বাচন বিলম্বিত হোক, চায় না বিএনপি আফগানিস্তানে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রবেশে অনুমতি দেবে পাকিস্তান বিএসএফের গুলিতে এক দিনে দুই বাংলাদেশি যুবক নিহত জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আইআরআই প্রতিনিধি দলের বৈঠক

যুগে যুগে, দেশে দেশে মাহামারীর সময়ে মসজিদ মাদরাসা বন্ধের ইতিহাস!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আব্দুল কাদির আল মাহদি ।।
বার্সেলোনা, স্পেন>

যুগে যুগে, দেশে দেশে মাহামারীকালীন মসজিদ মাদ্রাসা বন্ধের ইতিহাস। মার্সিফুল ইংলিশ চ্যানেল থেকে আব্দুল কাদির আল মাহদির অনুবাদ করা তথ্য।

ইতিহাসের দিকে থাকলে দেখতে পারব। প্রতি যুগে ভিবিন্ন সময়ে পৃথীবিতে মহামারী আঘাত এনেছিল। বিশেষত আত তাবারী, ইবনে কাছীরের ও ইয়াকুত আল হীমাওয়ী বিশেষজ্ঞদের ইতিহাস গ্রন্থগুলো এমন বড় বড় মহামারীর কথা বাদ দিয়ে পড়ার কল্পনাই করা যায় না।

২১৪ হিজরীতে ইজিপ্ট (মিশর) একটি মহামারী আঘাত এনেছিল। যে মহামারীর অক্রমন থেকে একটি ঘরও বাদ যায় নি। এমনকি দেশের সরকারের সব উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গ, রাজনীতিক নেতা, কূটনীতিক ব্যক্তবর্গ এই ভয়াল মহামারীতে মৃত্যুবরণ করেন।

২২৮ হিজরীতে একই ধরণের মহামারী আজারবাইজানে আঘাত হানে। এই মহামারীর কবলে দেশের বেশির ভাগ মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। মানুষের মাঝে রোগ সংক্রমনের ভয় ছিল এতটাই প্রখর। সংক্রমণের ভয়ে কাপড় পরিধান করা থেকে পর্যন্ত বিরত থাকত। ভয়ে মৃত ব্যক্তিদের কাফন-দাফন পর্যন্ত করা হচ্ছিল না।

৪০৬ হিজরীতে অন্য এক ভয়াল মহামারী বসরা (ইরাক্বে) আঘাত হানে। সেখানে এমন এক ভয়াবহ পরিস্তিতি সৃষ্টি হয়, যেটা বর্ণনা করার মত নয়। মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা এতই প্রবল হচ্ছিল যে দেশের সকল কবরস্থান ভরে গিয়েছিল। মৃতদেহ লাশ সাপ্তাহ হতে সাপ্তাহ রাস্থায় পড়ে থাকত। দু:খের বিষয় হচ্ছে, অনেক পরিবারের সব সদস্যই মৃত্যুবরণ করেন। এমনকি দাফন কাফন করার কোন মানুষ ছিল না। অনেক সময় মৃতদের দেহ নিজ নিজ ঘরে দরজা বন্ধ করে সেখানেই কবর দেয়া হত। মহামারী শেষ হওয়া পর্যন্ত ঘরগুলো তালা দিয়ে রাখা ছিল।

৪৪৮ হিজরীতে আরেকটি মারাত্মক ধরণের মহামারী মিশর (ইজিপ্ট) ও আন্দালুসে (স্পেনে) আক্রমণ করে। ইমাম আয যাহাবী তাঁর বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থ “সিয়ার আ’আলামুন নুবলা’র” ১৮ নং খন্ডের ৩১১ নং পৃষ্ঠায় এই মহামারীর ভয়াবহতা অত্যান্ত পরিস্কার করে তুলে ধরছেন। তিনি উল্লেখ করেন যে ইজিপ্ট ও স্পেন এর আগে এমন মারাত্মক মহামারী দেখে নি।

সেসময় এসব দেশের সব মসজিদ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মহামারীর ভয়ে মুসল্লিরা মসজিদে আসতো না। কজেই মসজিদ মুসল্লি শূন্য হয়ে পড়ছিল। বধ্য হয়ে মসজিদ বন্ধের পরিবেশ তৈরী হয়ে গিয়েছিল।

“ব্ল্যাক প্লেগ” অথবা “ব্ল্যাক ডেথ” নামে ইতিহাসে যে মহামারী পরিচিত। এটি হিজরী ৮ম শতাব্দীতে যেটা খ্রিস্টীয় ক্যালেন্ডার হিসেবে ১৪শত শতাব্দীতে মধ্য ইউরোপে আঘাত এনেছিল। এটি স্পেন ও ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী দেশসহ পুরা বিশ্বে খুব দ্রুত ছডিয়ে পড়ছিল। অবশ্য এই মহামারীর মূল কেন্দ্রস্থল ছিল ইউরোপিয়ান দেশসমূহ। এটি মারাত্মক পর্যায়ের ছোঁয়াচে বা সংক্রমণ পর্যায়ের রোগ ছিল। খুব ভয়াবহ মহামারী বলে ইতিহাসে পাওয়া যায়।

এই মহামারী কোন কোন এলাকায় খুব বেশি আঘাত এনেছিল বলে আল মাক্বরিজী তার লিখিত গ্রন্থ “আস সুলুকের” ৪নং খন্ডের ৮৮নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন।

তখন ছিল ৭৪৯ হিজরী। এই মহামারীর কারনে অনেক এলাকায় আজান দেয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কোথাও কোথাও পুরা শহরের একমাত্র কেন্দীয় মসজিদে শুধু আজন হতো। বাকি অন্যান্য মসজিদগুলো বন্ধ থাকত।

বেশির ভাগ খানকাহ যেখানে আধ্যাত্মিক ব্যক্তিরা জমা হতেন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সংক্রমনের ভয়ে কেউ কোথাও জোড় হতো না।

বুখারীর ব্যাখ্যাকার বিখ্যাত দার্শনিক ইবনে হাজার (রাহ) বলেন। ৪৩৩ হিজরীর মহামারীতে তিনি তাঁর নিজের তিনজন মেয়েকে হারান। যে মহামারী প্রায় পুরা মিশর (ইজিপ্ট) জুড়ে আঘাত আনছিল।

যখন মিশরে সুলতান আশরাফের রাজত্ব ছিল। তিনি তার তিনজন মেয়ে হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করতে বিখ্যাত বিশ্বকোষ “বাজলাল মাউন ফি ফাজলিত তাউন” প্রায় ৪০০ পৃষ্ঠায় সম্পাদন করেছেন।

সেখানে তিনি চমত্কারভাবে মহামারী কিভাবে আসে? কেন মহামারী আসে? মহামারী সংক্রান্ত হাদিস ও ফেক্বহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এই বিশ্বকোষে মূলত তিনি ধর্মিয় দৃষ্টিকোন থেকে মহামারীর সংক্রান্ত বিশদ আলোচনা পর্যালোচন করছেন। এই গ্রন্থে মহামারী সংক্রান্ত বিভিন্ন মাস’আলা মাসাইল তিনি উল্লখ করছেন। তিনি তাঁর পরিবারের তিন সদস্য হারিয়ে তথ সংশ্লিষ্ট এমন একটি গ্রন্থ লেখার ইচ্ছা করলেন।

-এটি


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ