|| মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী ||
সব দায় আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েন না। কিছুটা দায় আপনারাও নেন। আমাদের সমালোচনা করুন—প্রচণ্ডভাবে করুন। এমন সমালোচনা করুন, যাতে আমাদের ভেতরের বক্রতা সোজা হয়ে যায়।
তবে দয়া করে—সহযোগিতার মানসিকতা পরিহার করবেন না। আমাদেরকে ঠিকাদারি দিয়ে আপনারা দায়মুক্ত হয়ে যাবেন না। দীন প্রতিষ্ঠার দায় যেমন আমাদের, তেমনি আপনাদেরও।
বলবেন, ‘তোমরা নেতা!’ — তো আপনিও নেতা হয়ে যান। আপনাকেও তো আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে!
আফসোস লাগে— আমাদেরকে সামনে অগ্রসর হওয়ার জন্য যতটা উদ্বুদ্ধ বা তিরস্কার করা হয়, সামনে অগ্রসর হতে শুরু করলে ততটা সহযোগিতার হাত কেউ বাড়ায় না।
আমি বলবো না—আমাদের ভুল নেই, আমাদের মধ্যে কপটতা নেই। আমরা যতটা করতে সক্ষম এবং আপনারা যতটা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত—ততটুকুর জন্য সমালোচনা করুন, কর্মসূচি দিতে বাধ্য করুন। ধরুন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের বিষয়টি— এ বিষয়ে সবচেয়ে বেশি প্রতিবাদ করেছে কওমি ঘরানার ইসলামি সংগঠনগুলো। অথচ সমালোচনার তীর ছোড়া হচ্ছে একমাত্র তাদের দিকেই! কমিশনের অফিস স্থাপনের বিষয়টি চূড়ান্ত করার পর সরকার আলেম-ওলামাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। কাকতালীয়ভাবে এমন দুটি বৈঠকে আমিও ছিলাম।
এক বৈঠকে মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেবসহ দেশের শীর্ষ আলেমদের সঙ্গে আমিও অনেক কথা বলেছি। ওলামায়ে কেরাম যথেষ্ট জোরালো ভূমিকা রেখেছেন। তবুও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়নি। এখন কি এ দায় আলেমদেরকেই নিতে হবে?
কমিশনের বিষয়টি শুধু ইসলামের সঙ্গে নয়—দেশের স্বার্থের সাথেও জড়িত। তাহলে প্রত্যাশা শুধু ইসলামি দলগুলো থেকেই কেন?
বাকি দলগুলোর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয় না কেন? তাদের কেউ কেউ তো কেবল একটি বিবৃতি দিয়েই দায় সেরে ফেলেছে।
আপনারা যদি বলেন—‘এর জন্য যুদ্ধ করতে হবে।’ তাহলে মাথায় রাখতে হবে—যুদ্ধের পরবর্তী অবস্থা কী হবে?
ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে কঠোর কর্মসূচি নিয়ে সমালোচনার নতুন ঝড় উঠবে কি না সেটাও বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে।
বলতে পারেন—‘তোমরা বিক্রি হয়ে গেছো!’
যারা ফ্যাসিবাদের আমলে স্বার্থের কাছে বিক্রি হয়নি, তারা এখন কেন বিক্রি হবে?
বলবেন—‘তোমরা ভয় পেয়ে গেছো!’
যারা তখন প্রতিবাদ করতে ভয় পায়নি, তারা আজ কেন ভয় পাবে? আসলে যথাসাধ্য প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে হবে এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। প্রত্যেক অঞ্চলে—গ্রামপর্যন্ত—তালিম, তরবিয়ত ও দাওয়াহনির্ভর ক্ষুদ্র নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে। এই ক্ষুদ্র নেতৃত্বই সামাজিক শক্তি তৈরি করে বৃহত্তর নেতৃত্বের জন্য ভিত্তি রচনা করবে। ক্ষুদ্র নেতৃত্ব তৈরি না করে, সামাজিক শক্তি গড়ে না তুলে— কোনো নেতৃত্বকে যত বড় করেই দেখা হোক, ফলাফল আসবে না। স্রোতের মোকাবেলায় দাঁড়িয়ে হয়তো সে নেতৃত্ব অস্তিত্ব হারাবে আর না হয় বিশ্বাস হারাবে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন, ভীরুতা ও কাপুরুষতা থেকে হেফাজত করুন, আমিন!
লেখক: মহাসচিব, বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট
এসএকে/