সোমবার, ০৫ মে ২০২৫ ।। ২১ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ৭ জিলকদ ১৪৪৬


নারী সংস্কার কমিশন ইস্যুতে কী করবে সরকার?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বিশেষ প্রতিনিধি

অন্তর্বতী সরকারের নেওয়া বিভিন্ন সংস্কার কর্মসূচিতে শুরু থেকেই ইসলামি দলগুলো এবং ইসলামপ্রিয় মানুষেরা সমর্থন দিয়ে আসছে। এমনকি তাদের অনেকে এই সরকারের মেয়াদ যেন অন্তত পাঁচ বছর হয় সেই দাবিও তোলেছে। কিন্তু সরকারের সেই আস্থার জায়গাটি অনেকটা নড়বড়ে করে দিয়েছে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন। সম্প্রতি এই কমিশন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তা নিয়ে ব্যাপক আপত্তি জানিয়েছেন আলেম-উলামারা। এই সুপারিশের বিভিন্ন ধারা সরাসরি কুরআন ও সুন্নাহ পরিপন্থী। এই অবস্থায় যারা এই সরকারের হিকাকাঙ্ক্ষী ছিলেন তারাও তাদের প্রতি রুষ্ট হয়েছেন। 

নারী সংস্কার কমিশন ইস্যুতে জামায়াতে ইসলামীসহ প্রায় সব ইসলামি দল বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েছে। কেউ কেউ রাজপথের কর্মসূচি পালন করেছে। এই ইস্যুতে সবচেয়ে জোরদার প্রতিবাদ করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। শনিবার (৩ মে) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হেফাজতের মহাসমাবেশের চার দফা দাবির প্রধান দাবি ছিল এই কমিশন বাতিল করা। মহাসমাবেশে যারা বক্তব্য দিয়েছেন তাদের প্রায় সবার বক্তব্যে এই কমিশন বাতিলের দাবি উঠে এসেছে। 

এদেশের আলেম-উলামা ও দীনদার মানুষের সবচেয়ে বড় অরাজনৈতিক প্লাটফর্ম হেফাজতে ইসলাম। গতকালের মহাসমাবেশ থেকে হেফাজত সরকারকে এদেশে ইসলামবিরোধী কোনো আইন বা নীতি কার্যকর করা যাবে না বলে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে। এমনকি এ ধরনের কিছু করার চেষ্টা করলে ইউনূস সরকারের পরিণতি হাসিনা সরকারের মতো হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কেউ কেউ। হেফাজত আমিরের লিখিত বক্তব্যে স্পষ্ট বলা হয়েছে, এটা পশ্চিমাদের প্রেসক্রিপশনে হয়েছে। এনজিও গোষ্ঠীর প্ররোচনায় পড়ে সরকার এটা করতে চাচ্ছে। হেফাজত কোনোভাবেই এই নীতি বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করতে দেবে না। এই ইস্যুতে হেফাজত কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে। 

নারী সংস্কার ইস্যুতে সরকার নিঃসন্দেহে চাপে পড়েছে। এবার প্রশ্ন হলো, সরকার কী করবে? এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে সরকারের দায়িত্বশীল কেউ কোনো কথাই বলেনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার এই ইস্যুতে কথা না বলার নীতি গ্রহণ করেছে। তবে বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে এবং এই কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন হবে না সেটাও নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইসলামি দলগুলোকে ক্ষেপিয়ে কিছু করার পরিকল্পনা সরকারের নেই। 

তবে সরকার এই ইস্যুতে কিছুটা বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের পেছনে বড় সমর্থন পশ্চিমা বিশ্বের। আর এই নারীনীতি মূলত পশ্চিমা চিন্তাধারা থেকেই করা হয়েছে। এজন্য সরকারের পক্ষে সরাসরি এই প্রস্তাবকে নাকচ করাও কঠিন। সরকার এক্ষেত্রে কিছুটা কৌশলী ভূমিকা পালন করছে। মূলত সরকারই চাচ্ছে, এই ইস্যুতে আলেম-উলামা এবং ইসলামি দলগুলো আন্দোলন করুক। যাতে তারা তাদের পশ্চিমা মিত্রদের বলতে পারে- আমাদের করার কিছু নেই। আমাদের ওপর চাপ রয়েছে। 

সরকারের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, সরকার নারী সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন করবে না এটা নিশ্চিত। তবে এই ইস্যুতে তাদের অনেক মিত্রকেও হারাতে চায় না সরকার। এজন্য কিছুটা কৌশলী ভূমিকা নিয়েছে। 

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হকের নেতৃত্ব কমিশনের সদস্যরা গত ১৯ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করতে মুসলিম, হিন্দু ও খ্রিষ্টান পারিবারিক আইনের সংস্কার করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব আইনের পরিবর্তে অভিন্ন পারিবারিক আইনের মাধ্যমে সব ধর্মের নারীর জন্য বিয়ে, তালাক ও সন্তানের ভরণপোষণে সমান অধিকার নিশ্চিত করার জন্য অধ্যাদেশ জারি করার সুপারিশের পাশাপাশি সব সম্প্রদায়ের জন্য আইনটিকে ঐচ্ছিক রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া উত্তরাধিকার আইন সংশোধন করে মুসলিম ও অন্যান্য ধর্মীয় উত্তরাধিকার আইন সংশোধন করে সম্পদে নারীর ৫০ শতাংশ নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে কমিশন। এর অংশ হিসেবে সিডও সনদের ওপর অবশিষ্ট দুটি সংরক্ষণ প্রত্যাহার এবং আইএলও সনদ সি১৮৯ ও সি১৯০ অনুস্বাক্ষর ও পূর্ণ বাস্তবায়ন করার সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি শ্রম আইনে যৌনকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করেছে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন।

এসব সুপারিশের বেশ কিছু ধারা সরাসরি কুরআন-সুন্নাহ পরিপন্থী বলে জানিয়েছেন আলেমরা। বিশেষজ্ঞ আলেমদের একটি টিম পুরো সুপারিশ পড়ে কোথায় কোথায় আপত্তি সেটা চিহ্নিত করেছে। ইতোমধ্যে আপত্তির জায়গাগুলো সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এবার দেখার পালা, সরকার এই ইস্যুতে কী করে!

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ