|| ওলিউল্লাহ্ মুহাম্মাদ ||
দাওরায়ে হাদীস শেষ করার পর অনেক ছাত্র দ্বিধায় পড়ে যান—কোন বিষয়ে তাখাসসুস (স্পেশালাইজেশন) করব? তখন কেউ উস্তাদের কাছে পরামর্শ চান, কেউ বন্ধুর অনুসরণ করেন, কেউ বা চিন্তা না করেই গা ভাসিয়ে দেন প্রচলিত ধারায়। অথচ এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি হওয়া উচিত অনেক আগেই—যখন ছাত্র নিজেকে বোঝার সুযোগ পায়, নিজের মেধা ও প্রবণতা যাচাই করতে পারে।
একজন ছাত্র যখন দরসে নিজামের কিতাবগুলো পাঠ করে, তখনই তার মনে কোন বিষয়ের প্রতি টান আছে তা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কেউ হাদীসের সূক্ষ্ম বিশ্লেষণে তৃপ্তি পান, কেউ ফিকহি মাসআলায় গভীর ভাবনায় ডুবে যান, কেউ আবার আরবী সাহিত্যের সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ হন। এসব অনুভব থেকেই জন্ম নেয় নিজের ঝোঁক ও উপযোগিতা। তাখাসসুসের বিষয় নির্বাচনে এটাই হওয়া উচিত মূল নির্ধারক।
আবার কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় দাওরায়ে হাদীস শেষ করে উলুমুল হাদীসে তাখাসসুস করছেন, এরপরই ইফতা, তারপর আরবি সাহিত্যে। যেন একে একে সব বিষয়ে তাখাসসুস করা ব্যক্তিত্বের পূর্ণতা বা বড় আলেম হওয়ার পথ! অথচ এই প্রবণতা বাস্তবে চিন্তার অস্থিরতা ও উদ্দেশ্যহীনতার প্রতিচ্ছবি ছাড়া আর কিছুই নয়।
তাখাসসুস মানে হচ্ছে—একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে গভীরতা অর্জন, চিন্তায় দক্ষতা, গবেষণায় স্বাতন্ত্র্য এবং সমাজে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা। এটি কোনো সাধারণ পাঠক্রম নয়, বরং একজন আলিমের আত্মিক-মানসিক শক্তিকে একটি কেন্দ্রে একত্রিত করে মহৎ উদ্দেশ্যে নিয়োজিত করার মাধ্যম। এখন যদি কেউ একাধিক বিষয়ে তাখাসসুস করতে থাকেন, তবে সেটি তার মন ও মেধাকে ছড়িয়ে ফেলে, সাধারণত কেন্দ্রীভূত হতে দেয় না।
যারা একের পর এক তাখাসসুস করছেন, বাস্তবে দেখা যায়—কোনোটিতেই তারা পূর্ণতা লাভ করতে পারছেন না। বরং একেকটি কোর্স যেন কেবল সার্টিফিকেট সংগ্রহের তালিকায় পরিণত হয়। এতে সময় ও শ্রম তো অপচয় হয়ই, বরং একটি বিষয়ের গভীরে ঢুকে জাতিকে উপহার দেওয়ার মতো কিছু তৈরিও হয় না। এজন্য আমাদের অভিজ্ঞ প্রবীণ উস্তাযগণ মনে করেন, তাখাসসুসের ক্ষেত্রে যে কোন একটি বিষয়কে নির্বাচন করা উচিত।
এমএম/