সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫ ।। ১৬ আষাঢ় ১৪৩২ ।। ৫ মহর্‌রম ১৪৪৭

শিরোনাম :
কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে মহাসমাবেশ সফল করার আহ্বান পীর সাহেব মধুপুরের সরকার না করলে জুলাই সনদ আমরা প্রকাশ করব: নাহিদ ইসলাম নীতি নির্ধারণী সপ্তাহ: গাজায় যুদ্ধবিরতি নাকি নতুন কোনো ষড়যন্ত্র? ঐক্যের এই সময়ে খাদেম সুলায়মানদের এড়িয়ে চলুন! ‘ভোট নয়, পরকালে জবাবদিহির ভয় নিয়েই মাঠে নেমেছি’ ইসলামি দলগুলোর ঐক্যের পরিধি সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনার বিচারে একদিনও অতিরিক্ত সময় নিচ্ছি না: চিফ প্রসিকিউটর  ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধ ছিল ‘ভয়ানক’: ট্রাম্প সবাইকে রাজা বানিয়ে দিলে রাজ্যের অবস্থা হবে কাহিল সুনামগঞ্জ-৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী হলেন মাওলানা সৈয়দ তামীম আহমদ

ঘোষণাপত্র নিয়ে কী ভাবছেন জুলাই যোদ্ধারা? 


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি: সংগৃহীত

|| শাব্বির আহমাদ খান ||

জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর থেকে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হয়ে উঠে জুলাই ঘোষণাপত্র। এ নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করেছেন জুলাই যোদ্ধারা। তারা বারবার দাবি তুলেছেন ঘোষণাপত্র প্রকাশের। কিন্তু সব দাবির পরও দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেছে—জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়নি। 

শেষ পর্যন্ত এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহর আহ্বানে দলমত নির্বিশেষে রাজপথে নামে ছাত্রজনতা। তার আশ্বাস ছিল—আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ঘোষণা দেওয়া হবে এবং ত্রিশ কার্যদিবসের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করবে। এই আশ্বাসে রাজপথ ছেড়েছিল আন্দোলনকারীরা। 

কিন্তু ত্রিশ কার্যদিবস পার হয়ে গেলেও এখনো প্রকাশ করা হয়নি সেই ঘোষণাপত্র। এনসিপি জানিয়েছে, আগামী ৩ আগস্ট তারা জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করবে। 

এখন প্রশ্ন হচ্ছে—এই ঘোষণাকে জুলাই যোদ্ধারা কীভাবে দেখছে? আদৌ কি তারা আশ্বস্ত, নাকি আগের মতোই শঙ্কিত? এই বিষয়েই জানার চেষ্টা করা হবে তাদের কাছ থেকে।

ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ)-এর আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতার ডাকে রাজপথে নামিনি। আমরা নামি তখন, যখন দেখি—যে অস্ত্র ও গুলি জনগণের টাকায় কেনা হয়েছে, সেগুলোই ব্যবহার করা হচ্ছে জনগণের বিরুদ্ধেই।’ 

তিনি বলেন, ‘আজ আমরা রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে দেখছি—সরকার এখনো শহীদ ও আহতদের তালিকা করতে পারেনি। শহীদ পরিবার এবং আহতদের ডেকে তাদের কথা শোনার ন্যূনতম উদ্যোগও নেয়নি। এতে প্রমাণ হয়, নৈতিকভাবে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।’ 

আলী আহসান জুনায়েদ আরও বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র ছাড়া এই রাষ্ট্রে জনগণের অধিকার আদায়ের কোনো পথ নেই। এই জাতির প্রত্যাশা পূরণে জুলাই ঘোষণাপত্রই একমাত্র বিকল্প। শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার গ্যারান্টি সরকারকেই দিতে হবে—এটাই এখন সময়ের দাবি।’

জুলাই যোদ্ধা, ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের বলেন, ‘হাসনাত আব্দুল্লাহর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল আমাদের আন্দোলন। সেই ধারাবাহিকতায়ই আমরা যমুনার অবস্থান কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকার ত্রিশ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে পারেনি। এটি শুধু সরকারের ব্যর্থতাই নয়, বরং জনগণকে অবহিত না করে দায়িত্বহীনতারও পরিচয়।’ 

‘আমরা সরকারের এ ধরনের আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই। এটি নতুন কিছু নয়—সরকার এর আগেও দু’বার ছলচাতুরির মাধ্যমে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। বাস্তবতা হলো, তারা এবারও তা পারেনি এবং ভবিষ্যতেও পারবে বলে মনে হচ্ছে না।’ 

তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে আমরা ১ জুলাই 'লাল মার্চ' কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছি। এই কর্মসূচিতে সকল সংগঠনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে—জুলাই ঘোষণাপত্র কোনো একক দলের দলিল নয়, এটি হতে হবে বাংলাদেশের আপামর জনতার পক্ষ থেকে।’ 

তার মতে, নাহিদ ইসলাম চাইলে তার দলের পক্ষ থেকে একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতেই পারেন, তবে সেটি যদি সাংবিধানিকভাবে, সরকারিভাবে স্বীকৃতি পায়, তাহলে আমাদের আপত্তি থাকবে। কেননা, তা একটি একক রাজনৈতিক দলের ঘোষণায় রূপ নেবে—যা জুলাই আন্দোলনের মূল চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। 

তিনি বলেন, ‘তবে যদি সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠন একমত হয়ে, সম্মিলিতভাবে তা গ্রহণ করে, তাহলে সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ হতে পারে। কিন্তু এককভাবে এনসিপির ঘোষণাপত্র প্রকাশের সিদ্ধান্ত আমরা ঘোরতরভাবে প্রত্যাখ্যান করি।’ 

জুলাই আন্দোলনের এই নেতা বলেন, ‘আমাদের একটাই দাবি—জুলাই ঘোষণাপত্র রাষ্ট্রের পক্ষ থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করতে হবে, যাতে তা সত্যিকার অর্থে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে এবং জাতীয় ঐক্যের প্রতিফলন হয়।’

জুলাই-আগস্ট ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের সামনের সারির যোদ্ধা ফারজানা খাতুন বলেন, ‘আগামী ৩ আগস্ট জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করবে বলে জানিয়েছেন ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি)-এর কেন্দ্রীয় নেতা নাহিদ ইসলাম। তবে এই উদ্যোগ ঘিরে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন। অনেকে মনে করছেন, যদি এটি শুধু পাঠ করাই হয়, তাহলে আপত্তির জায়গা নেই। কিন্তু ভবিষ্যতে যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এটিকেই সরকারিভাবে অনুমোদন করে, তাহলে প্রশ্ন উঠবে—একটি রাজনৈতিক দলের ঘোষণাই কি জাতীয় দলিলে পরিণত হচ্ছে?’

কারণ, এনসিপি এখন একটি রাজনৈতিক দল। জাতীয় ঐক্যের ঘোষণাপত্র যদি দলীয় ব্যানারে পাঠ করা হয়, তাহলে তা কীভাবে সার্বজনীন থাকবে—এই প্রশ্ন তুলেছেন অনেক জুলাই যোদ্ধা। 

এর আগে হাসনাত আব্দুল্লাহর ডাকে যমুনায় দলমত নির্বিশেষে ছাত্র-জনতা সাড়া দিয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল, ত্রিশ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ হবে। কিন্তু সেই সময় পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো ঘোষণাই আসেনি। 

এই দেরির পেছনে এনসিপির প্রস্তুতি কারণ কি না, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। আরও প্রশ্ন হচ্ছে—ঘোষণাপত্র লিখছে কারা? এটি কি এনসিপির দলীয় দলিল, না কি সত্যিই জাতীয় ঐক্যের প্রতিফলন? 

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—সরকারি ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি ছাড়া ঘোষণাপত্রের কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। তাই আন্দোলনকারীরা বলছেন, শুধু পাঠ করলেই চলবে না, স্বীকৃতি না এলে জুলাই বিপ্লব থেকে যাবে অসম্পূর্ণ।

এসএকে/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ