|| মাওলানা গাজী মুহাম্মদ সানাউল্লাহ ||
আমাদের একজন প্রিয় শিক্ষক আজকে দুনিয়া থেকে চলে গেলেন। তিনি মাওলানা আহমদ আব্দুল্লাহ। শোকে স্তব্ধ কণ্ঠে উচ্চারণ করছি রহিমাহুল্লাহু রাহমাতান অসিআ। মাওলানা আহমদ আবদুল্লাহ সাহেবের কাছে আমি পড়েছি জামিয়ার দারুল আরকাম বি-বাড়িয়াতে। আজ থেকে ২৪ বছর আগে। তখন তিনি নতুন শিক্ষক সেই জামিয়ার এবং আমিও সেখানে নতুন ছাত্র।
তিনি প্রযুক্তিবান্ধব শিক্ষক ছিলেন। আমার কিতাবের শিক্ষক তিনি, কম্পিউটারেরও শিক্ষক তিনি। কম্পিউটার হাতেখড়ি যেটাকে বলা হয় সেটা আমি হজরতের কাছ থেকে শিখেছি। আরো যেটা শিখেছি সেটা হলো, অত্যন্ত বড় মানুষ হয়েও নিজেকে ছোটদের কাছে নিয়ে আসতে পারা, সবাইকে হৃদয় দিয়ে ছুঁতে পারা, সরলভাবে, উদার হয়ে, এটা উনার কাছ থেকে শিখেছি।
জামিয়া দারুল আরকাম থেকে একসময় তিনি চলে এলেন। কেন এসেছেন, সেটা জানা নেই। পরবর্তীতে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী জামিউল উলুম মাদরাসার ভাইস প্রিন্সিপাল পদে আসীন হন। তখন আমি জামিয়া রাহমানির পড়ি। মাঝে মাঝে হজরতের সাথে দেখা হতো। কর্মজীবন শুরু হওয়ার পর পরেও কোনো কোনো অনুষ্ঠান-আয়োজনে আমার প্রিয় এই শিক্ষকের সাথে দেখা হয়েছে।
বৃহত্তর সিলেটে বাড়ি ছিল তাঁর। কথার মধ্যে সিলেটের আঞ্চলিকতা প্রকাশ পেত। হাসতেন খুব চমৎকার করে। যতক্ষণ কথা বলতেন মুখে একটি হাসি লেগে থাকতো। কোথায় আছি, কী করছি, খোঁজখবর নিতেন, নাসিহা দিতেন, পরামর্শ দিতেন, কাঁধে হাত দিয়ে এগিয়ে যাবার প্রেরণা দিতেন। আনন্দ এবং গর্বে বুকটা ফুলে উঠতো।
মাওলানা আহমাদ আব্দুল্লাহ সাহেব হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়লেন এবং জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হলেন। দীর্ঘদিন পর্যন্ত অসুস্থ থেকে একপর্যায়ে ঢাকা ছেড়ে দিলেন। হবিগঞ্জে থেকে আমার মাহফিলের পরিমাণ খুবই কম। কিন্তু বারবারই মনে হতো, একবার অন্তত হজরতের সাথে দেখা করা দরকার। সিলেটের দিকে থাকা আমার সুহৃদদেরকে আমি কথাটা বেশ কয়েকবার বলেছি। মাঝে মাঝে মনে হতো, কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন বাদে শুধু হুজুরকে দেখার জন্যই একবার যাওয়া উচিত।
সব কষ্টের মেঘ আজ নেমে গেল বৃষ্টি হয়ে, কান্নার বৃষ্টি। আমাদেরকে ছেড়ে মাওলানা আহমদ আব্দুল্লাহ সাহেব চলে গেলেন তার প্রিয় প্রভুর কাছে। পৃথিবীর সকল দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা তাকে আর স্পর্শ করতে পারবে না। তিনি এখন জান্নাতের পথিক। আসমান থেকে নেমে আসা রুহ কবজের ফেরেশতারা জান্নাতের মখমল চাদরে আবৃত করে তার সুবাসিত রুহকে নিয়ে চলছেন, ইল্লিনের, পথে ইনশাআল্লাহ।
পূর্ব নির্ধারিত কিছু প্রোগ্রামের কারণে হয়তো জানাজায় শামিল হতে পারছি না, কিন্তু দোয়ায় শরিক আছেন তিনি আমাদের, আজকে এবং যতদিন পৃথিবীতে থাকবো ততদিন। আল্লাহ পাক আমাদের সকল শিক্ষক- যারা কবরবাসী হয়েছেন তাদের কবরগুলোকে জান্নাতের বাগান বানিয়ে দিন। যারা বেঁচে আছেন তাদের নেক দীর্ঘ হায়াত দান করুন। আমিন।
লেখক: বিশিষ্ট আলোচক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব
এমএইচ/