বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫ ।। ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ ।। ২ জিলহজ ১৪৪৬


পান্তাভাতে বাজিমাত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহাম্মদ মিজানুর রহমান

পান্তাভাত এখন আর শুধু গৃহস্থালি খাবার নয়, এটি হয়ে উঠেছে বাঙালির সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও গর্বের অংশ। তাই বলাই যায়—পান্তাভাতে বাজিমাত, কারণ এতে আছে স্বাদ, ঐতিহ্য, স্বাস্থ্য আর আবেগের অনন্য মিশেল। আবহমান বাংলায় একটা কথা প্রচলিত আছে, ‘পান্তাভাতের জল তিন পুরুষের বল।’ কথাটা শতভাগ সত্য। গবেষণাও বলছে এমনটাই।

বিএআরসির পুষ্টি ইউনিট ২০১৫ সালে পান্তাভাতের অণু পুষ্টিকণা পরিমাপ করে। তাতে দেখা গেছে, প্রতি ১০০ গ্রাম পান্তাভাতে ৬৮ দশমিক ৭ মিলিগ্রাম আয়রন আছে, যা সাদাভাতে ২ দশমিক ৯ মিলিগ্রাম। পান্তাভাতে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ ৭৮৫ মিলিগ্রাম, যা সাদাভাতে ২০ দশমিক ৩৫ মিলিগ্রাম। পান্তাভাতে পটাশিয়ামের পরিমাণ ৭৯৯ মিলিগ্রাম, যা সাদাভাতে ৭৭ মিলিগ্রাম।

বিএআরসির বিশ্লেষণ বলছে, ভাতকে ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখলে গাঁজন প্রক্রিয়ায় তা ফাইটিক অ্যাসিড, হাইড্রোলাইসিস (পানির সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়া) করে ল্যাকটিক অ্যাসিড তৈরি হয়। এতে পান্তাভাতের গুণাগুণ বাড়ে এবং ভাতের অণুপুষ্টিগুলোকে মুক্ত করে। পান্তাকে ঠান্ডা খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

২০১৬ সালে ভারতের আসাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিদ্যা বিভাগের কয়েকজন অধ্যাপকও পান্তাভাত নিয়ে গবেষণা চালান। রাসায়নিক বিশ্লেষণে তাঁরা দেখেন, ভাত ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখলে এটির অম্লত্ব বেড়ে যায় এবং ক্ষারত্ব কমে যায়। পানিতে ভেজালে গাঁজনকারী ব্যাকটেরিয়া বা ইস্ট এই শর্করা ভেঙে ইথানল ও ল্যাকটিক অ্যাসিড তৈরি করে। ইথানলই পান্তাভাতের ভিন্ন রকম স্বাদ তৈরি করে।

ঐতিহ্যের ঘ্রাণ 

গ্রামীণ জীবনের এই সরল খাবার বাংলার প্রাচীন কৃষ্টির প্রতীক। ভাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে নুন, পেঁয়াজ, লঙ্কা আর একটা কাঁচা মরিচ—এই সাধারণ আয়োজনে লুকিয়ে আছে আবহমান বাংলার স্বাদ ও ইতিহাস। বাংলার কৃষক-শ্রমজীবীদের দীর্ঘ পরিশ্রমের পর সহজে হজম হয় এমন খাবার হিসেবেই এর উৎপত্তি।

স্বাস্থ্যগুণেও সমৃদ্ধ 

পান্তাভাতে থাকে প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া, যা অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং হজম শক্তি বাড়ায়। গরমকালে পান্তাভাত শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। এটি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। নিয়মিত পান্তাভাত খাওয়ার মাধ্যমে পাকস্থলীর এসিড নিঃসরণ নিয়ন্ত্রিত হয়, ফলে গ্যাস্ট্রিক ও অ্যাসিডিটির সমস্যা কমে। ভেজানো ভাতে থাকা ফাইবার ও জলীয় অংশ পেট পরিষ্কারে সহায়তা করে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য হ্রাস করে। গাঁজানো ভাতে ভিটামিন বি৬, বি১২ ও কিছু পরিমাণ ফোলিক অ্যাসিড তৈরি হয়, যা স্নায়ুতন্ত্র ও রক্ত গঠনে উপকারী। ভাতে থাকা শর্করা ধীরে হজম হয় বলে এটি দীর্ঘক্ষণ শক্তি জোগায় ও ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখে। পান্তাভাতে সোডিয়ামের পরিমাণ কম থাকে, যা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য সহায়ক। ভাতের পানি (ভাতের মাড়) শরীরকে হাইড্রেট রাখে এবং প্রস্রাবের সমস্যা কমায়।

এই উপকারিতাগুলো পেতে চাইলে পান্তাভাতকে বেশি লবণ বা তেল ছাড়া খাওয়াটাই ভালো। তবে যাদের ডায়াবেটিস আছে, তারা পরিমিত পরিমাণে খেলে ভালো হয়।

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ