শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫ ।। ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ ।। ৩ জিলহজ ১৪৪৬


কাঁঠালের বিচি: অবহেলিত এক পুষ্টি ভাণ্ডার

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| মুহাম্মদ মিজানুর রহমান ||  

গ্রীষ্মকালীন ফল কাঁঠাল অনেকের কাছেই দারুণ পছন্দের ফল। কাঁঠালের কোষ খেতে কার না ভালো লাগে! সুস্বাদু এই ফল খেয়ে আমরা সাধারণত বিচিগুলো ফেলে দিই। অথচ এই বিচিই হতে পারে স্বাস্থ্য রক্ষায় এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পুষ্টিবিদরা বলছেন, কাঁঠালের বিচি নানা ধরনের ভিটামিন, খনিজ ও ফাইবারসমৃদ্ধ, যা দেহের নানা উপকারে আসে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালের বিচিতে প্রায় ৭ গ্রাম প্রোটিন, পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইবার, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে। এছাড়া, এতে ভিটামিন বি এ, বি ও সি বিদ্যমান, যা স্নায়ুতন্ত্রকে সচল রাখে এবং মানসিক চাপ কমায়।

স্বাস্থ্য উপকারিতা  

অনেক মানুষ হজম সমস্যায় ভোগেন। কাঁঠালের বিচি হজমে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ফাইবার থাকায় এটি পেট পরিষ্কার রাখতে কার্যকর। এছাড়া, বিচিতে থাকা আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সহায়ক। নিয়মিত খেলে ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বজায় থাকে। বিচিতে থাকা পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম একত্রে হাড় শক্ত করে, যা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড় ক্ষয় রোধে সহায়ক। কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে প্রচুর থায়ামিন ও রিবোফ্লাভিন। উভয়ই ভিটামিন বি এর অন্তর্গত। এরা শরীরে শক্তি সঞ্চয়ের পাশাপাশি নার্ভস সিস্টেম, হৃদ্যন্ত্র, মস্তিষ্ক, অন্ত্র, মাংসপেশি ইত্যাদির রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। কাঁঠালের বিচিতে যে সালফার থাকে সেটি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণসম্পন্ন। ডায়রিয়া, গ্যাসের সমস্যা ও অন্যান্য খাদ্যজনিত পেটের অসুখ দূর করতে সাহায্য করে এটি। সর্বোপরি কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। বিচিতে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েডস, স্যাপোনিনস, ফেনোলিকস ইত্যাদি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো শরীরের ইনফ্ল্যামেশনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে বহুগুণ।মানসিক চাপ কমাতে কাঁঠালের বীজ খুবই উপকারী। কাঁঠালের বীজ প্রোটিন ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস মস্তিষ্কের ক্যামিকেলের ভারসাম্য বজায় রেখে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। কাঁঠালের বিচিতে প্রচুর ভিটামিন এ আছে। যারা চোখের বিভিন্ন সমস্যায় ভোগেন, তারা চোখের যত্নে কাঁঠাল নিয়মিত খেতে পারেন। 

খাওয়ার পদ্ধতি ও সতর্কতা

কাঁঠালের বিচি সিদ্ধ করে বা আগুনে পুড়িয়ে, ভেজে ভর্তা হিসেবে, সিদ্ধ বিচি সবজির সঙ্গে রান্না করেও খাওয়া যায়। এটি আমাদের শক্তি দেয় এবং মাংসপেশি সুগঠিত রাখতে সাহায্য করে। যদিও কাঁঠালের বিচি উপকারী, তবে অতিরিক্ত খাওয়া গ্যাস বা অম্বলের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই পরিমাণমতো এবং রান্না করে খাওয়া উত্তম।  

আমরা অনেক সময় যেসব জিনিস ফেলনা ভাবি, সেগুলোই হতে পারে পুষ্টির উৎস। কাঁঠালের বিচি তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। সঠিকভাবে গ্রহণ করলে এটি হতে পারে দেহের শক্তি ও রোগ প্রতিরোধের এক নির্ভরযোগ্য অনুষঙ্গ।

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ