|| মাওলানা সাইফুদ্দীন গাজী ||
অমুসলিমদের পূজা-পার্বণে একজন মুমিন যা করতে পারে না সে বিষয়গুলো হলো-
১) অমুসলিমদের পূজা-পার্বণে আনন্দিত হতে পারে না।
২) শুভেচ্ছা, অভিনন্দন জানাতে পারে না। চিঠি, বার্তা বা উইশ পাঠিয়ে তাদের আনন্দিত করতে পারে না।
৩) কোনোরূপ সমর্থন, সহযোগিতা করতে পারে না।
৪) টাকা-পয়সা বা কোনো কিছু দান করতে পারে না। এমনকি পূজার কাজে এক টাকাও দান করাও গুনাহ। তবে আর্তমানবিক সাহায্য দিতে কোনো অসুবিধা নেই।
৫) শুধু পূজার কাজে ব্যবহৃত হয়, এমন জিনিস যোগান বা বিক্রি করতে পারে না। যেমন, পূজা উপলক্ষে আতশবাজির দোকান খোলা বা বিক্রি করা ইত্যাদি।
৬) প্রতিমা তৈরি বা বিক্রি করতে পারে না।
৭) পূজামণ্ডপ তৈরি, ডেকারেশন ইত্যাদি করতে পারে না। এগুলোতে শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে পারে না।
৮) পূজানুষ্ঠান উপভোগ করার জন্য দেখতে যেতে পারবে না।
৯) পূজানুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারে না।
১০) তাদের অনুকরণে নিজেরাও কোনো কাজ করতে পারবে না। যেমন, ফটকা ফুটানো, আতশবাজি করা, রংছিটানো, তাদের সৌজন্যে নতুন জামাকাপড় পরা ইত্যাদি।
১১) তাদের নিমন্ত্রণ গ্রহণ করা যাবে না।
১২) তাদের যবাই করা কোনো জিনিস বিলকুল খাওয়া যাবে না।
১৩) হাতে তৈরি পিঠা-পায়েশ ও অন্যান্য জিনিসও পরিহার করা উচিত। যদিও এগুলো হারাম নয়, তথাপি যেহেতু দেবদেবীর পাদপ্রান্তে দেওয়ার উদ্দেশ্যে এগুলো তৈরি করা হয়, সেহেতু তা পরিহার করা জরুরী।
১৪) মুসলিম ব্যবসায়ী পূজা উপলক্ষে তাদের সৌজন্যে বিশেষ ছাড় বা অফার ঘোষণা করতে পারে না। বরং ইসলামের প্রতি আগ্রহসৃষ্টির জন্য এসব ছাড় ও অফারের ঘোষণা ঈদ, রমাযান ও অন্য কোনো উপলক্ষে করতে পারে।
১৫) মুসলিম কর্মচারী বা লেবার তার অমুসলিম মালিকপক্ষের পূজার কাজে সহযোগিতা করতে পারে না। যেমন পূজার ফুল পানি এগিয়ে দেওয়া, সান্ধ্যবাতি বা ধোনি দেওয়া ইত্যাদি।
উপরোক্ত বিষয়গুলোর কোনো কোনোটি দ্বারা ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে এবং মুশরিক হয়ে যাবে। আর কোনো কোনোটি হারাম ও কবীরা গোনাহ। কোনোটি মাকরূহ ও নিন্দনীয়। আত্মমর্যাদাবান কোনো মুমিন এগুলোতে জড়াতে পারে না। বরং এসব কুফরী-শিরকী কর্মকাণ্ডের প্রতি থাকবে তার প্রচণ্ড ঘৃণাবোধ। পাশাপাশি ওসব মুশরিকদের প্রতি থাকবে দাঈসুলভ করুণা ও দরদ, যা তাদেরকে শিরকমুক্ত করার চেষ্টা সাধনা করতে মুসলিমকে উদ্বুদ্ধ করবে।
কাফির-মুশরিকদের ধর্মীয় আচার ও পূজা-পার্বনের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান হবে ঠিক হযরত ইবরাহীম আ. এর অনুরূপ। তিনি একদিকে তাদের কর্মকাণ্ডের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করেছেন, তাদের সাথে ধর্মীয় সস্পর্ক প্রকাশ্য ছিন্ন করেছেন, অপরদিকে তাদেরকে তাওহীদের দাওয়াত দেওয়ার জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করেছেন এবং তাদেরকে শিরকমুক্ত করার জন্য ব্যাকুল ছিলেন।
মুসলিম তার ঈমান ইসলামের ওপর অটল অবিচল থাকতে হলে এ ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। একদিকে থাকবে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ঈমান ও আস্থা, অপরদিতে তাগুত ও দেবদেবীর প্রতি থাকবে প্রচণ্ড ঘৃণা ও ধর্মবিশ্বাসের প্রতি অস্বীকৃতি। কাফেরদের সাথে ধর্মগত সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে পরিপূর্ণভাবে। এটি মুমিনকে ঈমানী অবিচলতা দান করবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা বলেন :
لَاۤ اِکۡرَاہَ فِی الدِّیۡنِ ۟ۙ قَدۡ تَّبَیَّنَ الرُّشۡدُ مِنَ الۡغَیِّ ۚ فَمَنۡ یَّکۡفُرۡ بِالطَّاغُوۡتِ وَ یُؤۡمِنۡۢ بِاللّٰہِ فَقَدِ اسۡتَمۡسَکَ بِالۡعُرۡوَۃِ الۡوُثۡقٰی ٭ لَا انۡفِصَامَ لَہَا ؕ وَ اللّٰہُ سَمِیۡعٌ عَلِیۡمٌ ﴿۲۵۶﴾
"দ্বীন গ্রহণের ব্যাপারে কোন জোর-জবরদস্তি নেই ; সত্য পথ সুস্পষ্ট হয়েছে ভ্রান্ত পথ থেকে। অতএব, যে তাগূতকে অস্বীকার করবে ও আল্লাহ্র উপর ঈমান আনবে, সে এমন এক দৃঢ়তর রজ্জু ধারন করল যা কখনো বিচ্ছিন্ন হবে না। আর আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।" (সূরা বাকারা- ২৫৬)
উল্লেখ্য, কোনো মুমিনের পক্ষে যেমন বিধর্মীদের উপরুক্ত কাজগুলোতে জড়ানো সম্ভব নয়, তেমনি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও অনুমতিপ্রাপ্ত এসব কাফিরদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অহেতুক হামলা বা আক্রমণ করাও উচিত নয়। ঈমানী নিরাপত্তার স্বার্থে যেমন প্রথমোক্ত বিষয়গুলো থেকে আমরা সর্বাত্মক আত্মরক্ষার চেষ্টা করবো, তেমনি জানমাল ও সামাজিক নিরাপত্তার স্বার্থে দ্বিতীয়টি থেকেও বিরত থাকবো। আল্লাহই একমাত্র তাওফীকদাতা।
লেখক: মাদরাসা শিক্ষক, লেখক ও চিন্তক
এমএম/