অবরুদ্ধ গাজাকে দুই খণ্ড করার পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। একটি হবে ‘গ্রিন জোন’ ও অন্যটি ‘রেড জোন’। ‘গ্রিন জোনে’ ইসরাইল ও আন্তর্জাতিক সামরিক বাহিনী নিরাপত্তা দেবে। পাশাপাশি পুনর্গঠন শুরু হবে। ‘রেড জোনে’ কোনো পুনর্গঠনের পরিকল্পনা নেই। ইসরাইল নিয়ন্ত্রিত বর্তমান ‘ইয়েলো লাইন’ ধরে পুরো উপত্যকাকে এই দুভাগে বিভক্ত করা হবে।
শুক্রবার ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের প্রকাশিত খবরে রেড জোনে কি হবে বা কার থাকবে-সে সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘নীতিগতভাবে আপনি পুরো এলাকাটাই এক করতে চাইবেন, ঠিক না? কিন্তু সেটা হবে উচ্চাকাঙ্ক্ষা। আরও অনেক সময় লাগবে, এত সহজ হবে না।’
তবে মধ্যস্থতাকারীরা বলছেন, এটি ‘না যুদ্ধ, না শান্তি’-এটি একটি বিভক্ত গাজা, যেখানে ইসরাইলের নিয়মিত আক্রমণ থাকবে, দখলদারত্ব পাকাপোক্ত হবে, ফিলিস্তিনি আত্মশাসন থাকবে না, আর বাড়িঘর পুনর্নির্মাণ হবে সীমিত পরিসরে।’
অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজায় যে ২০ দফা ‘শান্তি পরিকল্পনা’ ঘোষণা করেছেন, তার মূল ভিত্তি হলো-অবরুদ্ধ অঞ্চলে একটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনী (আইএসএফ) মোতায়েন করা। এই বাহিনীই গাজার নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং পরবর্তী রাজনৈতিক প্রক্রিয়া পরিচালনার মূল শক্তি হবে। এখন যুক্তরাষ্ট্র চেষ্টা করছে যেন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ আগামী সপ্তাহের শুরুতেই একটি খসড়া প্রস্তাব পাশ করে। এই প্রস্তাবে আইএসএফের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন (ম্যান্ডেট) থাকবে। একবার এই সিদ্ধান্ত পাশ হয়ে গেলে কোন কোন দেশ কত সৈন্য দেবে সেসব ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে। এ আগে ট্রাম্প পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, ইসরাইলের সেনা সরে যাওয়ার পথ তৈরিতে তিনি কোনো মার্কিন সৈন্য গাজায় পাঠাবেন না, পুনর্গঠনের খরচও দেবেন না।
২০ হাজার সৈন্যকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে ইন্দোনেশিয়া : যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় সম্ভাব্য শান্তিরক্ষা বাহিনীতে যোগ দেবে ইন্দোনেশিয়া। এ জন্য ২০ হাজার সৈন্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তারা গাজার স্বাস্থ্য ও নির্মাণ সম্পর্কিত কাজগুলো পরিচালনা করবে। শুক্রবার এসব তথ্য জানান দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী সাজাফ্রি সাজামসোয়েদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ ২০ হাজার সৈন্য প্রস্তুত রেখেছি, তবে স্বাস্থ্য এবং নির্মাণ সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে তারা আপাতত কাজ করবে।’ প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও জানান, প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো এবং জর্ডানের রাজা আবদুল্লাহ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করবেন।
গাজায় ৭ লাখ টন বর্জ্যরে স্তূপ : গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৭ লাখ টন কঠিন বর্জ্য জমে তীব্র মানবিক ও পরিবেশগত বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শুক্রবার এ সতর্কবার্তা দিয়েছে গাজার মিউনিসিপ্যাল ইউনিয়ন। জ্বালানি সংকট, অবকাঠামো ধ্বংস এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে স্থানীয় পৌরসভাগুলো ন্যূনতম সেবাও দিতে পারছে না বলে জানিয়েছে আনাদোলু। ইউনিয়নের উপপ্রধান আলা আল-বাত্তা বলেন, ‘অবকাঠামোর ভয়াবহ ধ্বংস, জ্বালানির তীব্র ঘাটতি এবং পৌরসভার যন্ত্রপাতি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় আমরা এক অসম্ভব সমস্যার মুখোমুখি।
ইসরাইলি বাহিনীর চলমান গণহত্যা, পৌর সম্পদের ধ্বংস এবং কঠোর অবরোধ মিলিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। তিনি আরও জানান, ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার এক মাস পার হলেও গাজার মানুষের জন্য সেবার মানের কোনো রকম উন্নতি হয়নি।
এনএইচ/