আন্তর্জাতিক ডেস্ক | ১৪ জুন ২০২৫
তেহরানে ইসরায়েলের ভয়াবহ বিমান হামলা ও ইরানের প্রতিক্রিয়ামূলক সামরিক তৎপরতার পরিপ্রেক্ষিতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করেছে। এই পটভূমিতে এবার যুক্তরাষ্ট্র ইরানের আশপাশে সামরিক সরবতা বাড়াতে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ওয়াশিংটন পোস্ট শনিবার (১৪ জুন) মার্কিন নৌবাহিনীর উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে সক্ষম USS Thomas Hudner যুদ্ধজাহাজকে পশ্চিম ভূমধ্যসাগর থেকে পূর্ব অংশের দিকে অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরেকটি মিসাইল ডেস্ট্রয়ারকেও হোয়াইট হাউসের বিশেষ নির্দেশে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
এর আগের দিন, ১৩ জুন শুক্রবার, মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানান, তারা মধ্যপ্রাচ্য থেকে কিছু সামরিক সরঞ্জাম এবং বাহিনী পুনর্বিন্যাস করছে, যার মধ্যে নৌযানও রয়েছে।
এই পরিস্থিতির মধ্যে, মার্কিন যুদ্ধবিমানগুলো এখন মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে সক্রিয় টহল চালাচ্ছে। পাশাপাশি, মার্কিন বিমানঘাঁটিগুলোর নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে বলে পেন্টাগনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এখনও এই মোতায়েন এবং টহলের বিষয়গুলো আনুষ্ঠানিকভাবে হোয়াইট হাউস বা পেন্টাগনের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়নি। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, চলমান সামরিক উত্তেজনার প্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপগুলো প্রতিরক্ষামূলক প্রস্তুতির অংশ হতে পারে।
'অপারেশন রাইজিং লায়ন': ইরানে ইসরায়েলের নজিরবিহীন অভিযান
স্থানীয় সময় শুক্রবার (১৩ জুন) ভোররাতে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে একটি সমন্বিত অভিযান পরিচালনা করে। এতে ইরানের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু সুবিধা, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা এবং সামরিক কমান্ড সেন্টার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।
টাইমস অব ইসরায়েলকে দেওয়া এক বিবৃতিতে দেশটির এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা দাবি করেন, অভিযানের আগে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ তেহরানে একটি গোপন ঘাঁটি স্থাপন করেছিল। সেই ঘাঁটি থেকেই মাটি থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চারের অবস্থান চিহ্নিত করে সেগুলোর ওপর হামলা চালানো হয়। এতে ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বড় অংশ অকেজো হয়ে যায়।
হতাহত ও প্রতিক্রিয়া
ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ও রেভল্যুশনারি গার্ড-ঘনিষ্ঠ গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, হামলায় অন্তত ৭৮ জন নিহত এবং ৩২৯ জন আহত হয়েছেন। তবে বাস্তবে সংখ্যাটি আরও বেশি হতে পারে বলে শঙ্কা করা হচ্ছে।
এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় সৌদি আরব, তুরস্কসহ একাধিক দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে আরও সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষ মধ্যপ্রাচ্যে ভয়াবহ সংঘাতের সূচনা করতে পারে, যার প্রভাব গোটা বিশ্বেই পড়বে।
এনএইচ/