|| মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেমী ||
কারবালা অবশ্যই ইতিহাসের মর্মান্তিক ঘটনা। কারবালায় শাহাদতবরণকারী সবাইকে আমরা ভালোবাসি। তবে কারবালার চেয়ে বদর, ওহুদ, খন্দক, হুনাইন, মুতা, ইয়ামামা ইত্যাদি যুদ্ধের ঘটনা ছোট নয়, বরং আরও বেশি মহান। যে যুদ্ধে স্বয়ং নবীজির দাঁত শহীদ হয়, নবীজি সা. আহত হন, ৭০ জন সাহাবি শহীদ হন, যে যুদ্ধে অসংখ্য হাফেজে কুরআন সাহাবি শহীদ হন, সেসব যুদ্ধ কি কারবালার চেয়েও গুরুত্বহীন? কারবালার ঘটনা কি কুরআনে আছে? হাদিসে এসেছে?
কিছু লোক কেবল কারবালা নিয়ে এত মাতামাতি করে যে, ইতিহাসের মর্মান্তিক অন্যসব যুদ্ধ নিয়ে কোনো আলোচনাই করে না।
দুই. হজরত হাসান ও হুসাইন রা. জান্নাতের যুবকদের সর্দার। তাদেরকে ভালোবাসা ঈমানের অঙ্গ। তবে তাদের প্রতি ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে যেন হজরত আবুবকর, উমর, উসমান, আয়েশা ও মুয়াবিয়া রা.সহ অন্য কোনো সাহাবির মর্যাদাকে খাটো না করা হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। হাসান হুসাইনকে ভালোবাসি নবীজির ভালোবাসার কারণে। তদ্রূপ অন্যান্য সাহাবায়ে কেরামকেও ভালোবাসি নবীজির ভালোবাসার কারণে। নবীজি তাদের সবাইকেই ভালোবাসতেন। নবীজির কর্মপন্থা বাদ দিয়ে মনগড়ামতো কাউকে ভালেবাসা ও ঘৃণা করা যাবে না। এটাই সঠিক পথ।
তিন. সকল সাহাবির মর্যাদা সমান না, তাদের অবদানও সমান না। তবে সবচেয়ে কম মর্যাদার সাহাবিও গোটা পৃথিবীর সকল মুসলমান থেকেও উত্তম ও শ্রেষ্ঠ।
চার. সাহাবায়ে কেরামের মাঝে বিভিন্ন বিষয়ে মতপার্থক্য হয়েছে। এমনকি যুদ্ধও হয়েছে। তবুও তাঁরা সম্মানিত। এ কারণে তাদের মর্যাদা হ্রাস পায়নি। প্রত্যেকে যার যার ইজতিহাদ অনুযায়ী আমল করেছেন। সেসব ইতিহাস আলোচনা করা এবং নির্মোহভাবে ইতিহাস তুলে ধরা দূষণীয় নয়, তবে কোনো এক পক্ষকে দোষারোপ করা, মন্দ বলা অবশ্যই দূষণীয় এবং গুনাহের কাজ।
কারণ, সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা নিষিদ্ধ সম্পর্কে স্পষ্ট হাদিস রয়েছে। সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা করার সাহস হয় কীভাবে? সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা করে যে বা যারা একটা অক্ষরও লিখেছে, তারচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ কেউ হতে পারে? কোনো সাহাবিকে খারাপ বলার অর্থ হচ্ছে নবীজিকে খারাপ বলা। নাউজুবিল্লাহ।
লেখক: মাদরাসা শিক্ষক, লেখক ও অনুবাদক
এসএকে/