মুফতি মুহাম্মাদ জাকারিয়া
শিক্ষা মানুষের জ্ঞান, দক্ষতা, এবং দৃষ্টিভঙ্গি বিকাশে সাহায্য করে, যা তাকে আত্ম-সচেতন এবং আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। শিক্ষার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো পরীক্ষা। যদিও পরীক্ষায় ভালো ফলাফল সফলতার চূড়ান্ত কিছু না হলেও এটা যে প্রাথমিক ধাপ সেটা অকপটে স্বীকার করতে হবে। পরীক্ষা হয় মানুষের জীবনের সম্মান, অপমান, আনন্দ ও বেদনার কারণ।
আরবি ভাষার একটি প্রসিদ্ধ প্রবাদপ্রবচন হলো عند الامتحان يكرم المرء أو يهان "পরীক্ষায় মানুষ সম্মানিত হয় বা অপমানিত হয়" তাই সবার চেষ্টা থাকে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল ও সফলতা অর্জন করার। কোনো ব্যক্তি যদি পরীক্ষার ব্যাপারে আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রেখে যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করে, তাহলে সে অবশ্যই সফল হবে ইনশাআল্লাহ।
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। (সুরা তালাক, আয়াত : ৩) আল্লাহ তাআলার ওপর ভরসা করার মানে এই নয় যে পড়ালেখা না করেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য বসে থাকবে। তাই আল্লাহর উপর ভরসার সাথে সাথে যথেষ্ট প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। পরীক্ষায় সঠিক উত্তর প্রদানে মহান আল্লাহর সাহায্যের জন্য মনে মনে তাঁর কাছে দোয়া করতে হবে। যেমন ‘রব্বি জিদনি ইলমা’। মহান আল্লাহ নিজেই তাঁর বন্ধুকে এই দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন।
অনেক সময় দেখা যায়, ভালোভাবে মুখস্থ করে যাওয়া জিনিসও মনে পড়ে না। কেউ এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়লে নিম্নোক্ত দোয়া পড়া যেতে পারে।
رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّن لِّسَانِي يَفْقَهُوا قَوْلِي
নির্দেশনাবলী
১-প্রশ্ন বাছাই: অধিকাংশ পরীক্ষায়ই অতিরিক্ত প্রশ্ন থাকে তা থেকে বাছাই করে লিখতে হবে। সবচেয়ে ভাল জানা উত্তরের প্রশ্নকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আবার ভালভাবে জানা দুটি প্রশ্ন থেকে একটি বাছাই করতে হলে ভেবে দেখতে হবে-কোন প্রশ্নের উত্তরে বেশি নম্বর পাওয়া যেতে পারে। তাছাড়া সময় কম থাকলে অপেক্ষাকৃত কম সময়ে উত্তর দেয়া যায় এরকম প্রশ্ন বাছাই করা উচিৎ।
২-খাতা পূরণ ও খাতার সাজ-সজ্জা: খাতাটি পেয়ে রেজিস্ট্রেশন নম্বরসহ তথ্যাদি পূরণ করে মার্জিন করে ফেলবেন। অবশ্যই বক্স স্কেলিং নয়। কারণ, এতে লেখার জায়গাটা অনেক ছোট হয়ে আসে। ওপরে ও ডান পাশে এক ইঞ্চি রেখে দাগ স্কেলিং করবেন নীল কালি দিয়ে। লুজ শিটে সময় না থাকলে মার্জিন করার প্রয়োজন নেই। শুধু ওপরে ও ডানে ভাঁজ করে নিন। লুজ শিটে তার নম্বরটি প্রথমেই মূল খাতার যথাস্থানে পূরণ করে নিন। পরে মনে থাকবে না। উত্তরের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো হাইলাইট করে বা বুলেট পয়েন্ট ব্যবহার করে আলাদা করে দেখান।
৩-স্পষ্ট এবং পরিচ্ছন্ন হাতের লেখা: পরীক্ষার খাতায় লেখার সময় হাতের লেখা স্পষ্ট এবং পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত। এতে পরীক্ষক সহজে আপনার লেখা বুঝতে পারবেন এবং নম্বর দিতে সুবিধা হবে। মনে রাখতে হবে সুন্দর,স্পষ্ট ও পরিচ্ছন্ন লেখা পরীক্ষকের মন জয় করার সহজ উপায়।
৪-কালি ব্যবহার: সাধারণত, পরীক্ষার খাতায় কালো কালির বল পয়েন্ট কলম ব্যবহার করা উচিত। তবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেমন - প্রশ্নের নম্বর বা ছোট শিরোনাম লেখার জন্য নীল কালি ও ক্ষেত্রবিশেষে পেনসিল ছাড়া আর কোনো কালির দাগ থাকবে না। অনেকে সবুজ, বেগুনি, গোলাপি রং ব্যবহার করেন, যা ঠিক নয়।
৫-সময় বন্টন ও ব্যবস্থাপনা : প্রশ্নগুলোর মান ও ধরনের উপর ভিত্তি করে কত সময়ে কোন প্রশ্নের উত্তর দেয়া শেষ হবে তার একটি হিসাব মনে রাখতে হবে। সেই অনুযায়ী উত্তর লিখুন। প্রশ্নের প্রত্যেক অংশের নম্বর অনুযায়ী উত্তর লিখতে হবে অল্প নম্বরের অংশের উত্তর ছোট হবে বেশি নম্বরের অংশের উত্তর লম্বা হবে । অপ্রয়োজনীয় লেখা পরিহার করে মূল বিষয়ে মনোযোগ দিন।
৬-প্রশ্নের ধারা বজায় রাখা: যথাসম্ভব প্রশ্নের নম্বর অনুযায়ী উত্তর লিখুন এবং প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর একটি নির্দিষ্ট স্থানে শেষ করুন। এক প্রশ্নের উত্তর অন্য প্রশ্নের উত্তরের মধ্যে কোনোভাবেই লেখা যাবে না। এতে খাতা দেখা সহজ হয়। তাই পরীক্ষক খুশি। আর তিনি খুশি হলে নম্বর ভালো আসবে।
৭-অতিরিক্ত পাতা এড়িয়ে চলা: অপ্রাসঙ্গিক বা অতিরিক্ত লেখা এড়িয়ে চলুন। যা জানতে চাওয়া হয়েছে, তার উত্তর সংক্ষেপে লিখুন। মনে রাখতে হবে অতিরিক্ত লেখাই অধিক নম্বর নিয়ে আসে না। এবং ফাঁকা ফাঁকা লিখে পৃষ্ঠা বৃদ্ধি করা যাবে না। এতে কোন লাভ নেই।
৮-শব্দ ও বাক্য গঠন: সঠিক শব্দ ও বাক্য ব্যবহার করুন।ব্যাকরণের দিকে মনোযোগ দিন। সব প্রশ্নের উত্তর করে আসবেন। সময় না থাকলে কম লিখবেন। পরিপূর্ণ না পারলে কিছু একটা অবশ্যই লিখবেন।
৯-লেখার গতি: আপনার জীবগনের সর্বোচ্চ গতিতে লিখবেন। দ্রুত লিখলে লেখা একটু খারাপ হবে এটাই স্বাভাবিক। চিন্তার কিছু নেই।
১০-পুনরায় দেখা: উত্তর লেখা শেষ হলে, অবশ্যই একবার পুরো খাতাটি পুনরায় দেখে নিন। কোন ভুল থাকলে তা সংশোধন করুন।
লেখক: শিক্ষা-সচিব ও উস্তাজুল হাদিস, জামিয়া ইসলামিয়া হোসাইনিয়া মাদ্রাসা বরিশাল
আইএইচ/