বছরব্যাপী কুরআন পাঠ ও প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণদের আনন্দঘন উপস্থিতিতে সম্পন্ন হলো চূড়ান্ত পর্বের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান। শনিবার (১৮ অক্টোবর) আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের অডিটোরিয়ামে সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর ১২টায় সম্পন্ন হয়েছে এই অনুষ্ঠান।
কুরআন পাঠ ও প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে ২০২৪ সালকে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন ‘কুরআন বর্ষ’ ঘোষণা করেছিল। এই বর্ষে সারা দেশের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ কুরআন পাঠে নিমগ্ন হয়। পাঁচ ধাপের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল লক্ষাধিক মানুষ। এর মধ্যে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, বুয়েট-ঢাবিসহ পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী; এমনকি খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষও। চূড়ান্ত পর্বে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে একশত সতেরো জনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে কাল।
কুরআন পাঠ ও প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণদের মাঝে মোট ১৫ লক্ষ টাকার পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম স্থান অর্জনকারী তিনজন আসছে নভেম্বরেই পাচ্ছেন উমরায় যাওয়ার সুযোগ। প্রথম স্থান অর্জনকারীরা হলেন- দক্ষিণ বারিধারার এবিসি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষার্থী কে এম ইউসুফ নূর, দ্বিতীয় স্থান এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যায়ের বিবিএর শিক্ষার্থী ফাহিম আশরাফ, তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন রাজশাহী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডেন্টাল সার্জন আফসানা মিম।
দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন তিনজন। ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারের শিক্ষার্থী সুমাইয়া, গৃহিণী উম্মে মারয়াম ও সায়মা আক্তার তিন্নি। ৩ জনের প্রত্যেকে পেয়েছেন ৫০ হাজার টাকা সমমূল্যের পারিবারিক লাইব্রেরি।
তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে ৬ জন। বুয়েটের লেকচারার, শেখ আজিজুল হাকিম, মাদরাসা শিক্ষার্থী মুয়াজ মুহাম্মাদ আজাদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আমজাদ হোসেন, ডাক্তার লিওজা আরা তোহফা, গৃহিণী নিগার সুলতানা ও নুরানী শিক্ষক মো. ইবরাহিম। ৬ জনের প্রত্যেকে পেয়েছেন ট্যাব। চতুর্থ স্থান অর্জন করেছেন ১০৫ জন। প্রত্যেকে পেয়েছেন ১ হাজার টাকা সমমূল্যের রকমারি গিফট ভাউচার।
লক্ষণীয় বিষয় হলো দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী ৩ জনই নারী। এছাড়াও উত্তীর্ণদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা বেশি। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, দীনি চেতনা লালন ও জ্ঞানচর্চায় নারীরা পুরুষদের থেকে পিছিনে নেই।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ। তিনি বলেন, প্রত্যেক মুসলমানের উচিত দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিদিন কুরআন তিলাওয়াত, অনুধাবন ও তা অনুযায়ী জীবন জীবন পরিচালনা করা।
শায়খ আহমাদুল্লাহ আরও বলেন, ‘আমরা যদি কুরআনকে বুঝে জীবন গড়তে পারি, তবেই সমাজ ও পরিবার থেকে অশান্তি, অনৈতিকতা দূর হবে।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার সাব্বির আহমাদ। তিনি বলেন, এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমরা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কুরআনের প্রতি আগ্রহ ও অনুরাগ বাড়াতে চাই। কুরআনের আলোয় আলোকিত এই প্রজন্মই একদিন নৈতিক সমাজ গঠনে নেতৃত্ব দেবে, ইনশাআল্লাহ।’
এছাড়া পুরস্কার বিজয়ীরা তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, প্রতিযোগিতা পরিচালনা টিম ও কুরআনপ্রেমী শিক্ষক-শিক্ষার্থী।
উল্লেখ্য, উমরাহ বিজয়ী ফাহিম আশরাফ কিছু দিন ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তাঁর পক্ষ থেকে উমরাহর পুরস্কার গ্রহণ করেছেন তার বাবা। উপস্থিত ছিলেন পরিবারের সদস্যবৃন্দ। উপস্থিত সবাই ফাহিম আশরাফের মাগফেরাতের জন্য দোয়া করেন এবং শায়খ আহমাদুল্লাহ পরিবারকে সান্ত্বনা জানান।
এলএইস/