ওমানে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার সাত প্রবাসীর মরদেহ আজ রবিবার (১৯ অক্টোবর) সকালে নিজ এলাকায় পৌঁছেছে। একসঙ্গে সাতটি মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ফেরিঘাটে পৌঁছলে পুরো দ্বীপজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। আজ সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে জানাজা ও দাফন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রত্যেকটি জানাজায় স্থানীয় বাসিন্দা ও স্বজনদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
গত ৮ অক্টোবর ওমানের দুখুম এলাকায় কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার পথে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় আটজন বাংলাদেশি নিহত হন। তাদের মধ্যে সাতজনের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলায়। নিহত প্রবাসীরা হলেন- আমিন সওদাগর (৫০), মো. সাহাবুদ্দিন (২৮), মো. বাবলু (২৮), মো. রকি (২৭), মো. আরজু (২৬), মো. জুয়েল (২৮) এবং মোশারফ হোসেন রনি (২৬)। তাদের মধ্যে পাঁচজনের বাড়ি সারিকাইত ইউনিয়নে, একজন মাইটভাঙ্গা ইউনিয়নে এবং অন্যজন সন্দ্বীপ পৌরসভার বাসিন্দা।
অপর নিহত প্রবাসী আলাউদ্দিনের বাড়ি রাউজানের চিকদাইর ইউনিয়নে। সারিকাইত ইউনিয়নের নিহত পাঁচ প্রবাসীর সবাই দরিদ্র পরিবারের সন্তান।
গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) রাত ৯টায় বাংলাদেশ বিমানের বিজি-১২২ ফ্লাইটে মরদেহগুলো চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছয়। রাত সাড়ে ১০টায় আনুষ্ঠানিকতা শেষে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রত্যেক পরিবারকে দাফন খরচ বাবদ ৩৫ হাজার টাকার চেক প্রদান করা হয়। এ সময় সন্দ্বীপ উপজেলা বিএনপি নেতা প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন, অ্যাডভোকেট আবু তাহের, আলমগীর হোসেন ঠাকুর, মোস্তফা কামাল বাবুল, জামায়াত নেতা আলাউদ্দীন সিকদার, ব্যবসায়ী নুরুল মোস্তফা খোকনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আজ রবিবার সকাল ৭টায় সীতাকুণ্ড বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাট থেকে সাতটি ফ্রিজার অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহগুলো সন্দ্বীপে পৌঁছয়। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পূর্ব সন্দ্বীপ হাইস্কুল মাঠ ও সাউথ সন্দ্বীপ হাইস্কুল মাঠে সমন্বিত জানাজার আয়োজন থাকলেও ওমানে মরদেহের গোসল না হওয়ার কারণে স্বজনদের অনুরোধে পারিবারিকভাবে জানাজার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সারিকাইত ইউনিয়নের সাইয়েদ মার্কেট চত্বরে বেলা সাড়ে ১১টায় নিহত দুই বন্ধু বাবলু ও সাহাবুদ্দিনের জানাজা একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়।
একই সময়ে রকি, আরজু, আমিন সওদাগর, জুয়েল ও রনির জানাজাও নিজ নিজ এলাকায় সম্পন্ন হয়। প্রতিটি জানাজায় বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এদিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা ও কর্মসংস্থানের দাবিও জানানো হয়েছে।
মৃত্যুর কয়েক মাস আগে বাড়িতে ছুটি কাটিয়ে যাওয়া নিহত জুয়েলের অসমাপ্ত বাড়ি নির্মাণের প্রসঙ্গে তার বাবা জামাল হোসেন বলেন, ‘যার কষ্টের টাকায় ভবন উঠছে, সে আর এই ভবনে ফিরবে না।’
সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মংচিংনু মারমা বলেন, ‘একসঙ্গে সাতজন রেমিট্যান্স যোদ্ধার অকাল মৃত্যু সন্দ্বীপবাসীর জন্য গভীর শোকের বিষয়। আজ দ্বীপবাসীর জন্য একটি শোকাবহ দিন।’
সন্দ্বীপ উপজেলা বিএনপি নেতা প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘সরকারি উদ্যোগে নিহতদের পরিবারের একজন সদস্যের চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে।’
এলএইস/