শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ২৭ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
ভারতে মুসলিম নির্যাতনের প্রতিবাদ ও নারী সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবিতে সাভারে হেফাজতের বিক্ষোভ আমরা একজোট হয়ে ভারতকে জবাব দেব: মাওলানা ফজলুর রহমান পটিয়ার সাবেক সিনিয়র উস্তাদ মাওলানা আব্দুল মান্নান দানিশের ইন্তেকাল নারী সংস্কার কমিশনের কিছু ধারা কোরআন-সুন্নাহর খেলাপ: জামায়াত আমির  ‘নারী সংস্কার কমিশনের উদ্দেশ্য ধর্মীয় ও পারিবারিক কাঠামো ধ্বংস করা’ ঐতিহাসিক দারোগা বাগানের ৩ একর জায়গা উদ্ধার করলেন বন বিভাগ  পেহেলগাম হত্যার তীব্র নিন্দা দারুল উলুম দেওবন্দের অবশেষে ভারতীয়দের ভিসা বাতিল করল পাকিস্তান হজযাত্রায় গ্রামীণফোন গ্রাহকদের জন্য সুখবর! পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে ভয়াবহ বোমা হামলা

বাংলা একাডেমি পুরস্কার: আলেম সমাজের অবদান স্বীকৃতি দেওয়ার সময় এসেছে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
লেখক মুহিউদ্দীন খান, আবু তাহের মিসবাহ, মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন, শরীফ মুহাম্মদ

|| মুহাম্মাদ শোয়াইব আস-সফাদী ||

বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বাংলাদেশের সাহিত্য জগতে অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি, যা ১৯৬০ সাল থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য প্রদান করা হচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এই পুরস্কার প্রদানের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা বলয়ের প্রাধান্য এবং আলেম সমাজের অবদান উপেক্ষার অভিযোগ উঠেছে। এটা শুধু একটি সম্প্রদায়কে বঞ্চিত করা নয়, বরং বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে তাদের অনস্বীকার্য অবদানকে অবজ্ঞা করা।

মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ একজন প্রখ্যাত আলেম ও সাহিত্যিক, যিনি কওমি মাদরাসা শিক্ষায় যুগোপযোগী সিলেবাস প্রণয়ন এবং অসংখ্য মৌলিক ও অনুবাদ গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে বিশেষ অবদান রেখেছেন। তাঁর রচিত বইগুলো পাঠকমহলে সমাদৃত এবং ইসলামি সাহিত্য সমৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। পাশাপাশি, তিনি কওমি শিক্ষাব্যবস্থায় একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছেন, যা প্রগতিশীল এবং সময়োপযোগী। তাঁর এই অবদান শুধু কওমি শিক্ষার জন্য নয়, পুরো জাতির জন্যই গর্বের বিষয়।

বাংলাদেশে আলেমদের সাহিত্যচর্চা শুধু ধর্মীয় বিষয়াবলীতে সীমাবদ্ধ নয়। মহিউদ্দিন খান, মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ, এবং মাওলানা মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীনের মতো আলেমরা বহু মৌলিক সাহিত্যকর্ম এবং অনুবাদ সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। মুহিউদ্দিন খানের অনূদিত এবং সম্পাদিত বইগুলো যেমন ইসলামি দর্শন ও ইতিহাসকে বাংলাভাষী পাঠকদের কাছে সহজলভ্য করেছে, তেমনই মাওলানা যাইনুল আবিদীন এবং মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ তাঁদের লেখনীর মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান খুঁজে পেতে পথ দেখিয়েছেন।

বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রদানের নীতিমালার কথা বিবেচনা করলে দেখা যায়, সমসাময়িক জীবিত লেখকদের সামগ্রিক মৌলিক অবদানকে চিহ্নিত করে তাঁদের সৃজনী প্রতিভাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কিন্তু গত ৫০ বছরে আলেম সমাজের কেউ এই পুরস্কার পাননি। এটি শুধু বৈষম্যের উদাহরণ নয়, বরং একটি গোষ্ঠীর সাহিত্যিক অবদানকে উপেক্ষা করার প্রমাণ।

এর পেছনে মৌলিক কারণ হলো, ভারতীয় আধিপত্য। ভারতপন্থী বুদ্ধিজীবীরা কখনই বাংলাদেশের আলেমদেরকে স্বীকৃতি দিতে চায়নি। তারা সব সময় আলেম-ওলামা বিদ্বেষী। চিন্তা-চেতনায় তারা প্রচণ্ড ভারতপন্থী। গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে স্বৈরাচারী সরকার পতনের পরও আলেমদের প্রতি এই বৈষম্য দূর হয়নি। অথচ সেই আন্দোলনে প্রায় ৮৪ জন মাদরাসার ছাত্র অকাতরে তাদের জীবন দিয়েছেন। এমন আত্মত্যাগের পরেও আলেম সমাজের সাহিত্যিক অবদানকে স্বীকৃতি না দেওয়া দুঃখজনক।

মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ, মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ ও মাওলানা যাইনুল আবিদীনের মতো গুণী ব্যক্তিদের পুরস্কৃত করা হলে, তা সাহিত্যাঙ্গনে বৈচিত্র্য ও সমতার প্রতিফলন ঘটাবে এবং আলেম সমাজের মধ্যে উৎসাহ জোগাবে। তাঁদের লেখনীগুলো শুধু ধর্মীয় শিক্ষা নয়, বরং সামগ্রিকভাবে সমাজ সংস্কারের দিকেও অগ্রসর।

বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রদানের ক্ষেত্রে এই বৈষম্য দূরীকরণে উদ্যোগ নেওয়া উচিত। আলেমদের সাহিত্যচর্চা ও রচনাকে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি দিয়ে আমরা জাতি হিসেবে আরও ঐক্যবদ্ধ ও সমৃদ্ধ হতে পারি। তাঁদের কাজগুলো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

হাআমা/


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ