রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ; গ্রেপ্তার মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ঢাকাসহ ৫ জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা ‘বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করে যাওয়া; দোয়া কবুল না হলেও বুঝতে হবে এতেই কল্যাণ রয়েছে’ উৎসবমূখর পরিবেশে শেষ হল ঢাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন কাতার'র ঈদ পুনর্মিলনী ঝড়ে রেললাইনে গাছ পড়ে সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ ইস্তিস্কার নামাজ কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়! মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে পুলিশি ব্যবস্থা চায় মানবাধিকার কমিশন ‘কোরবানিতে ১ কোটি ৩০ লাখ গবাদিপশুর জোগান দেওয়া হবে’ ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়াসহ ৪০ বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামে হিটস্ট্রোকে আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষকের মৃত্যু

পুঁজিবাদ, সমাজতন্ত্র, ইসলামে সম্পদ উৎপাদন ও বন্টন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা মাহমুদুল হাসান নু'মান:।। ১। আল্লাহ তাআলা মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন এই বলে, তোমরা নেমে যাও পরস্পরের শত্রু হয়ে। তোমাদের জন্যে পৃথিবীতে বাসস্থান এবং একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ (কিয়ামত) পর্যন্ত জীবনোপকরন রয়েছে (৭-২৪)।

অর্থাৎ মানব জীবনের যা কিছু প্রয়োজন সে সবের মূল উপাদান পৃথিবীতে দেয়া আছে। কিন্তু পৃথিবীর সম্পদ সীমিত। কাজেই কিছু লোক অধিক সম্পদ কুক্ষিগত করলে অন্যদের উপর এর প্রভাব পড়ে, অভুক্ত থাকতে হয়। যেমন বর্তমান বিশ্বের ৮২ শতাংশ সম্পদ এক শতাংশ মানুষ দখল করে রেখেছে।

ফলে পৃথিবীর দুই তৃতীয়াংশ মানুষ দরিদ্র, তার মধ্যে বিশাল একটা অংশ খেতে- পরতে পায় না। কিন্তু এই সম্পদের সুষম বন্টন হলে কোন অভাব থাকত না, কাউকে অভুক্ত থাকতে হতো না। পৃথিবীতে তিনটি মতবাদ আছে- সমাজতন্ত্র ধনতন্ত্র ও ইসলাম। এখন আমরা দেখব সম্পদের সুষম বন্টন ও দারিদ্র বিমোচনে কোন মতবাদ কি বিধান দিয়েছে।

পুঁজিবাদ বলছে সম্পদ উৎপাদনের চারটি উপাদান- ভূমি পুঁজি শ্রম ও উদ্যোক্তা। কাজেই উৎপাদনের আয় এই চারটি উপাদানের মধ্যে বন্টন হবে। অর্থাৎ ভূমির জন্য দেওয়া হবে ভাড়া, পুজির জন্য দেওয়া হবে সুদ, শ্রমিককে দেওয়া হবে মজুরি।

তারপর অবশিষ্ট যা থাকবে তাই হল উদ্যোক্তার মুনাফা। এক্ষেত্রে ভাড়া সুদ ও শ্রমিকের বেতন নির্ধারিত হবে যোগান ও চাহিদার ভিত্তিতে। অর্থাৎ চাহিদার চেয়ে শ্রমিক কম থাকলে তার মজুরি বেশি হবে আর শ্রমিক বেশি থাকলে মজুরি কম হবে। তাতে শ্রমিকের মৌলিক চাহিদা পূরণ হলো কিনা মালিকের তা দেখার বিষয় নয়। শ্রমিকের যেহেতু শ্রম শক্তি বিক্রয় ব্যতীত জীবিকার অন্য কোন অবলম্বন নাই বিধায় মালিক ইচ্ছা অনুযায়ী কম বেতনে অধিক সময় যেমন ষোল ঘন্টা বা ১৮ ঘন্টা কাজ আদায় করে নিতে পারে, এটা পুঁজিবাদের দৃষ্টিতে জায়েজ। পুঁজিবাদ শুধু উক্ত চারটি উপাদানে আয় বন্টন করে। এর বাইরে দরিদ্র দুর্বল সর্বহারা বিকলাঙ্গ প্রতিবন্ধী ইয়াতিম বিধবা বৃদ্ধ ইত্যাদি অসহায় জনগোষ্ঠী সম্পর্কে একটি কথাও বলে না বা তাদের সাহায্য সহযোগিতার উৎসাহ দেয় না।

সমাজতন্ত্রঃ সমাজতন্ত্রের একমাত্র লক্ষ্য হলো উদ্বৃত্ত মূল্যতত্ত্ব। অর্থাৎ শ্রমিক যে মূল্য উৎপাদন করল তার একাংশে বেতন দিয়ে বাকিটা মালিক ভক্ষণ করলো, এটাই উদ্বৃত্ত মূল্য। মালিক যাতে শ্রমিকের উৎপাদিত মূল্য ভক্ষণ করতে না পারে, শোষণ করতে না পারে তার জন্য সমাজতন্ত্রের দাবি হলো সকল উৎপাদন উপকরণ এমনকি ভূমি দোকানপাট কারখানা সবই সরকারি মালিকানায় থাকবে। এই দর্শন অনুযায়ী ভূমি ও পুঁজি সরকারি মালিকানায় থাকবে আর সরকার নিজেই উদ্যোক্তা বিধায় এসবের কোন ভাড়া বা বেতনের প্রয়োজন নাই। বাকি থাকলো শুধু শ্রমিক। তখন সরকারি পরিকল্পনা মোতাবেক সবাই নিজ নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী শ্রম দিবে আর প্রয়োজন অনুযায়ী বেতন নিবে। তখন সকলের আয় হবে সমান। সরকারি পরিকল্পনা অনুযায়ী সম্পদের সুষম বন্টন হবে, ধনী দরিদ্র শ্রেণী বৈষম্য থাকবে না। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি, বেতন বা আয় বৈষম্য পুঁজিবাদী দেশের তুলনায় সমাজতান্ত্রিক দেশে আরো বেশি। ব্যস সমাজতন্ত্র এর বাইরে বৃহত্তর মানবাধিকার সম্পর্কে কোন কথা বলে না, দরিদ্র দুর্বল নারী শিশু বৃদ্ধ প্রতিবন্ধী ইত্যাদিদের কি হবে- এসব নিয়ে সমাজতন্ত্র মাথা ঘামায় না।

এখন ইসলামী অর্থ ব্যবস্থা আলোচনার আগে সমাজতন্ত্রের দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ সম্পর্কে আমাদের ধারণা নেয়া দরকার। দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদঃ কার্ল মার্কসের মতে সমাজ পরিবর্তন ও বিকাশের মূল শক্তি হল দ্বন্দ্ব। অর্থাৎ বস্তুর সহজাত সংঘাতের ফলে পরিবর্তন সাধিত হয়। আর বিকাশের প্রতিটি পর্যায়ে প্রস্তাব (Thesis), প্রতি প্রস্তাব (Anti-thesis) আসবে, তারপর উভয় দ্বন্ধের মিমাংসা হিসাবে আসবে সংশ্লেষণ (Synthesis) যাতে উভয়টির সার নির্যাস থাকবে।

কাজেই সুত্রানুসারে পুঁজিবাদ হল থিসিস। কিন্তু এর নিষ্ঠুরতা ও শোষণের কারনে এসেছে প্রতি প্রস্তাব সমাজতন্ত্র। কিন্তু সমাজতন্ত্র ব্যক্তি মালিকানা খতম করে গোটা মানব সমাজকে শ্রমিকে পরিণত করা এবং অন্যান্য কারণে ব্যর্থ হয়ে গেছে। কাজেই এখন সংশ্লেষণ আসার সময়, আর তা হল ইসলাম। কারণ ইসলাম হলো পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের সমষ্টি বা সমন্বয়। যেমন ইসলাম পুঁজিবাদের উপস্থাপিত চার উৎপাদন উপকরণ মেনে নিয়েছে। অর্থাৎ ভূমির ভাড়া, শ্রমিকের মজুরি এতটুকু দিতে হবে যাতে শ্রমিক মালিকের জীবনমান সমান হয়। এ বিষয়ে মুনাফা ও উদ্বৃত্ত মূল্য তত্ত্ব প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে।

তারপর পুঁজির কোন সুদ নাই বরং পুজিপতি লাভ-লোকসানের ভিত্তিতে ব্যবসায় অংশীদার হবে। ভূমির ভাড়া ও শ্রমিকের মজুরির পর যা থাকে তাই মুনাফা। মুনাফার ক্ষেত্রে ইসলামের মূলনীতি হলো- সম্পদের মালিক আল্লাহ, মানুষ শুধু ভোগ দখলের মালিক- আমানতদার। কাজেই মুনাফার হকদার উদ্যোক্তা বটে কিন্তু তার মধ্যে দ্বিতীয় আরেকটি শ্রেণি তথা নিঃস্ব দরিদ্র দুর্বলের অধিকারও নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ দারিদ্র বিমোচনে যাকাত দিতে হবে, তাতেও দরিদ্রের প্রয়োজন না মিটলে ইনফাক (অতিরিক্ত ব্যয়) করতে হবে। তাতেও না হলে সম্পদের সমবন্টন বা ইসলামি সমাজতন্ত্র। এ সম্পর্কে ‘মুসলিম ঐক্যের ডাক’ গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে ।

এভাবে ইসলাম হল সংশ্লেষণ অর্থাৎ এতে পুঁজিবাদ আছে, সমাজতন্ত্র আছে এই অর্থে যে ইসলাম শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করেছে। তদুপরি ইসলাম নিঃস্ব অসহায় ও দুর্বলের আর্থিক ও বিচারিক অধিকার নিশ্চিত করেছে- যার কথা পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্র কিছুই বলেনি। প্রমানিত হলো ইসলাম সংশ্লেষণ তথা পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের সমন্বয় ও সমষ্টি। সুতরাং পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের ব্যর্থতার পর এখন ইসলাম আসার কথা কিন্তু এখনো আসেনি। এই না আসার কারণ হলো আলেম সমাজ এবং ইসলামপন্থীদের ব্যর্থতা।

এখন বিশ্ব শাসনের একমাত্র মতবাদ ইসলাম- এজন্য যে সমাজতন্ত্র ব্যর্থ হয়ে গেছে। আর পুঁজিবাদ সম্পদের সুষম বন্টন তো করতে পারেইনি বরং বিশাল ধন বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। একদিকে বিশাল বিত্ত- বৈভব, ভোগ বিলাস অপচয় অপরদিকে ক্ষুধা দারিদ্রতার অভিশাপ, অশিক্ষা রোগ পীড়া মহামারী ইত্যাদি। এরপরেও নাই মামার কানা মামা হিসাবে পুঁজিবাদ টিকে আছে এজন্য যে তাকে চ্যালেঞ্জ করার মত সামনে কেউ নাই।

বস্তুত ইসলামের যে অংশটা এসবের মোকাবেলা করতে পারতো তা বাদ পড়ে গেছে। অর্থাৎ ইসলামের সমষ্টি হল হক্কুল্লাহ, হক্কুল ইবাদ ও হুকুমত- এ তিনটি অঙ্গ থেকে শুধু হক্কুল্লাহ অংশটা আছে বাকি দুটি বাদ পড়ে গেছে। কাজেই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় হল হক্কুল ইবাদ ও হুকুমত সংক্রান্ত বিষয়গুলি সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং জনগণকে তা বোঝাতে হবে। তাহলেই সর্বস্তরের জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য এগিয়ে আসবে। এক্ষেত্রে আলেমদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ