বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


‘ইউটিউব ফেইসবুক থেকে নয়, নসিহত শুনতে হবে সরাসরি’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

উলামায়ে কেরাম ও বুজুর্গানে দীনের সোহবত কেন জরুরি এ বিষয়ে মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ্ আইয়ুবী বলেন, নসিহত তো ইউটিউব ফেইসবুক থেকেও শোনা যায়। কিন্তু এই নসিহত অন্তরে তেমন প্রভাব ফেলে না। তিনি আল্লামা রুমি রহ. এর বিখ্যাত শ্লোক আবৃত্তি করেন।

গতকাল মঙ্গলবার কুমিল্লার বুযর্গ আলেম মুফতি জিলানী প্রতিষ্ঠিত মাদরাসায়ে আশরাফিয়া দারুল উলুমের বয়ানে মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ্ আইয়ুবী এসব কথা বলেন।

তিনি মজলিসে গুনাহের কারণে অন্তরের চৌচির অবস্থা দূর করার পদ্ধতিসমূহ আলোচনা করেন। এক্ষেত্রে তিনি চারটি পয়েন্টে গুরুত্বপূর্ণ নসিহত করেন। যথা: ১. নসিহত ২. সোহবত ৩. জিয়ারত ৪. ইবাদত

নসিহতের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, নসিহত সর্বদাই মুমিনদের জন্য উপকারী। উদাহরণ হিসেবে সূরা জারিয়াত এর ৫৫ নং আয়াতের সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ করেন।

এই আয়াতে ইরশাদ হয়েছে— وَّ ذَکِّرۡ فَاِنَّ الذِّکۡرٰی تَنۡفَعُ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ অর্থাৎ 'আর আপনি উপদেশ দিতে থাকুন, কারণ নিশ্চয় উপদেশ মুমিনদের উপকারে আসে'।

উলামায়ে কেরাম ও বুজুর্গানে দীনের সোহবত কেন জরুরি এ বিষয়ে তিনি বলেন, নসিহত তো ইউটিউব ফেইসবুক থেকেও শোনা যায়। কিন্তু এই নসিহত অন্তরে তেমন প্রভাব ফেলে না। তিনি আল্লামা রুমি রহ. এর বিখ্যাত শ্লোক আবৃত্তি করেন। শ্লোকটি হলো—
صحبت صالح ترا صالح کند و صحبت طالح ترا طالح کند
অর্থাৎ 'ভালো মানুষের সোহবতে ভালো মানুষই হবে তুমি, মন্দ মানুষের নিকটে গেলে মন্দে হবে না কমি'।

আলেম ও বুজুর্গদের জিয়ারত সংশ্লিষ্ট আলোচনায় তিনি বলেন, জিয়ারত তথা দর্শনের মাধ্যমে অন্তরে তৃপ্তি আসে। ঈমান তাজা হয়। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, মনের তৃপ্তির জন্যই মানুষ টিকিট কেটে চিড়িয়াখানায় যায়। পাহাড় সাগর ঝরনা বনবনানী দেখতে যায়। এক বুজুর্গের ঘটনা তিনি এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, যিনি ৩৫০ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে একটি বিখ্যাত উট দেখতে এসেছিলেন। এরপর হাদিকতুল হাইওয়ানাতের আলোকে উট সম্পর্কিত বিরল ও চমৎকার কিছু তথ্য প্রদান করেন। তিনি এই আলোচনা শেষ করেন সূরা গাশিয়ার ১৭ থেকে ২০ নং আয়াতের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যার মাধ্যমে।

যেখানে আল্লাহ তাআলা বলেন—
اَفَلَا یَنۡظُرُوۡنَ اِلَی الۡاِبِلِ کَیۡفَ خُلِقَتۡ ﴿ٝ۱۷﴾ وَ اِلَی السَّمَآءِ کَیۡفَ رُفِعَتۡ ﴿ٝ۱۸﴾ ৮৮:১৯ وَ اِلَی الۡجِبَالِ کَیۡفَ نُصِبَتۡ ﴿ٝ۱۹﴾ وَ اِلَی الۡاَرۡضِ کَیۡفَ سُطِحَتۡ ﴿ٝ۲۰﴾
অর্থাৎ 'তবে কি তারা উটের প্রতি দৃষ্টিপাত করে না, কীভাবে তা সৃষ্টি করা হয়েছে? আর আকাশের দিকে, কীভাবে তা ঊর্ধ্বে স্থাপন করা হয়েছে? এবং পর্বতমালার দিকে, কী রকম দৃঢ়ভাবে তাকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে? আর জমিনের দিকে, কীভাবে তা বিস্তৃত করা হয়েছে?

ইবাদত সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি উল্লেখ করেন, ফরজ-ওয়াজিব ছেড়ে দিলে মানুষ গুনাহগার হয়। কিন্তু আদায় করলে বন্দেগির দায়িত্ব পালন হয়। মাসিয়ত তথা অপরাধ থেকে দূরে থাকাও ইবাদত। এবং নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয় হওয়া যায়। আর ইবাদত যথার্থভাবে পালন করার জন্য আলেমদের থেকে তার পদ্ধতি শিখতে হয়।

সবশেষে তিনি বলেন, উপরের সবগুলোর মাধ্যমে অর্জিত হয় বেলায়েত তথা নৈকট্য। বিশেষভাবে খাঁটি তওবার মাধ্যমে এটি হাসিল হয়। যে বেলায়েত লাভ করে তাকে বলা হয় 'অলি'।

অলি হওয়ার জন্য অনেক ইলম থাকা জরুরি নয়। সাহাবায়ে কেরামের মধ্যেও অনেক কম ইলমের সাহাবি ছিলেন। কিন্তু তারাও আল্লাহ তাআলা কর্তৃক رَّضِیَ اللّٰهُ عَنۡهُمۡ وَ رَضُوۡا عَنۡهُ তথা 'আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে'— এই সার্টিফিকেট লাভ করেছেন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক أصحابي كالنُّجومِ بأيِّهم اقتدَيتُم اهتدَيتُم তথা 'আমার সাহাবিগণ নক্ষত্র তুল্য, তোমরা তাদের যারই অনুসরন করবে হেদায়েত পাবে'— এই সনদ লাভ করেছেন।

আর এটা হয়েছে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নসিহত, সোহবত ও জিয়ারতের মাধ্যমে। আর আলেমরা যেহেতু নবিদের ওয়ারিস তাই আল্লাহর নৈকট্য পেতে হলে তাদের নসিহত শ্রবণ, সোহবত গ্ৰহণ ও জিয়ারত করতে হবে।

প্রায় দেড় ঘন্টার হৃদয়গ্ৰাহী আলোচনা শেষে তিনি অশ্রুসজল চোখে বিগলিত মনে আল্লাহর দরবারে দুআ করেন। এ সময় নানা বয়সী মানুষের ক্রন্দনধ্বনিতে আশেপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। মন খুলে কাঁদতে পেরে সকলের চোখেমুখে তৃপ্তির ঝিলিক ছিল স্পষ্ট।

-এটি


সম্পর্কিত খবর