এনায়েতুল্লাহ ফাহাদ: সমসাময়িক আলোচিত ইস্যু ভারতের উত্তর প্রদেশে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মা ও দিল্লি শাখার গণমাধ্যম প্রধান নবীন কুমার জিন্দাল কর্তৃক বিশ্বনবী সা. এর প্রতি কটূক্তি ও অরুচিকর মন্তব্য প্রদান। এ অশালীন মন্তক্তব্যকে কেন্দ্র করে চলমান আন্দোলন। নড়ে বসেছে বিশ্বমুসলিম। রাষ্টীয়ভাবে নিন্দাবাদ জানিয়েছে সৌদি, কুয়েত, কাতার, ইরাক, ইরান, ইসলামি ইমারত আফগানিস্তান সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। জেগে উঠেছে মাদ্রাসার ওলামা-তালাবা। মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন, মুসল্লী। শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ। সর্বস্তরের আপামরসাধারণ। এমনকি ইডেন কলেজের বোনরাও দাঁড়িয়েছে রাস্তায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ইডেনের ছাত্রীদের মানববন্ধন ও মিছিল করা অত্যন্ত ইতিবাচক ও সুচিন্তার বিষয়। চোখ শীতল করা দৃশ্য। হৃদয়ের প্রশান্তি ও সুন্দর আগামীর প্রত্যাশা।
গতদু'দিনে যেভাবে পাড়া-মহল্লায় মানববন্ধন ও মিছিল করেছে, সেটা একেবারেই কল্পনাতীত। ভেবেছিলাম, দুই হাজার বিশের মতোও হয়তো এবার জাগবে না জাতি। কারণ, চারিদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। মর্মান্তিক আবহ কাটিয়ে উঠতে বেশ সময় লাগবে। কিন্তু না, বাস্তবতা যেন মনের ধারণাকে ভুল প্রমাণ করলো।
আমিও স্ব-শরীরে বেশ কয়েকটি মানববন্ধন ও মিছিলে অংশগ্রহণ করেছি। সামান্য জেলা শহরেই অসংখ্য জনতার কোলাহল। রাজধানীর কথা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। সকলেই স্ব স্ব অবস্থান থেকে সাধ্যমতো প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে তুলেছে। আমাদের ঐক্য ও ভালোবাসা দেখে আকস্মিক ভাবপ্রকাশ পাচ্ছে পা চাটা গোলামদের। বিস্ময় হয়ে অপলক তাকিয়ে দেখছে মুসলমানরা সব প্রতিবাদের সরব। শুনছে তাকবীরের স্লোগান । এ যেন শাশ্বত দ্বীনের জয় জয় ধ্বনি। সর্বনাশ, বামপন্থীদের মাথায় বাঁশ। হঠাৎ করেই এভাবে জেগে ওঠবে, কে ভেবেছিল! কেউই বা জানতো!
আজকে মুমিনের রক্তে আগুন ধরিয়েছে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে। স্বাভাবিক অর্থে কতক জনতা জেগে উঠবেই। তাই বলে কি এত্ত এত্ত মানুষ! বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলাম বিদ্বেষী স্যারগুলোর বিশ্বাসে ভাটা লেগেছে ! হাতাশ হয়ে ভাবছে—"জনমভর বুঝালাম ধর্মীয় আবেগ ও ভালোবাসা বলতে কিচ্ছু নেই" এগুলো সব গুড়ামি আর ভন্ডামি। পড়াতে পড়াতে আয়ুকাল শেষ হতে চললো, ফলশ্রুতিতে আজ তাঁরা মুহাম্মদের ভালোবাসায় রাস্তায় দাঁড়ালো! আজিব ব্যাপার, আমার দীর্ঘ সাহিত্যপূর্ণ ও গবেষণালব্ধ লেকচার তাদের নবী প্রেমের কাছে একেবারেই তুচ্ছ!
বিশ্ব জুড়ে চলছে নিন্দার ঝড়। বজ্রকন্ঠে তীব্র প্রতিবাদ। রাজপথে নেমেছে শিশু থেকে বৃদ্ধ। সুস্থ-অসুস্থ। পঙ্গু-প্রতিবন্ধী। কিশোর-তরুণ, যুবক-নওজোয়ান। সকলেই আজ অকুতোভয়ের পরিচয় নিয়ে মঠে নেমেছে। স্লোগান দিচ্ছে— "বিশ্বনবীর অপমান, সহিবে না আর মুসলমান" "রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়" "ঘেরাও করো ঘেরাও করো, ভারতের দূতাবাস ঘেরাও করো" "মুসলমানের একশন, ডাইরেক একশন" "নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবার" "নারায়ে রিসালাত, ইয়া রাসুল আল্লাহ" এসব
ছোট্ট ছোট্ট ছন্দকাব্য কোটি জনতার প্রাণের দাবি তুলে ধরছে। জানান দিচ্ছে—নবীজির অপমান সইতে পারবো না। প্রয়োজনে রক্ত দিবো তবুও নবীর অপমান করতে দিব না। জনতার এই ভালোবাসাটুকুই হয়তো আবেগ। রাসূলের সাথে জান্নাতে থাকার স্বপ্ন। রাসুলের শাফায়াতের আশা ভরসা। জনতার হৃদয়ের সবটুকু নিবেদিত প্রিয় একটি নামের জন্য—মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
ভালোবাসা প্রকাশের বিকল্প নেই, কখনো মিছিলে না গেলে-শ্লোগান না দিলে এই উত্তেজনাটা উপলব্ধি করতে পারবেন না। এই উদারতা দেখাতে পারবেন না। জানি, এ ভালোবাসা হৃদয়ের গভীর থেকে উতরে উঠা। হয়তো সপ্তাহখানেকের মধ্যে এই প্রবাহ থেমে যাবে। যাক, তবে এর পরিকল্পনা-নেতৃত্ব-উত্তেজনা ইসলামি ইমারত কায়েমে জীবনভর উপকারে আসবে। এ চেতনা সমাজ সংস্কারের কাজে আসবে। এ বিপ্লব আগামী কাঁটা সরিয়ে দিবে। ভুলে গেলে চলবে না, ইতিপূর্বে ঐতিহাসিকভাবে ইসলামি আন্দোলনগুলো এভাবেই গড়ে উঠেছে। দূর্গগুলোতে জগরণ তৈরি হয়েছে। সমাজ পরিবর্তনে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। অতএব সর্বসাকুল্যে বলতে পারি, এই ধর্মীয় আবেগ আগামীদিনের বাংলাদেশে প্রভাব ফেলবে অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। আগামীর বাংলাদেশ,...বাংলাদেশ।
বাস্তব কথা হলো, এ দেশের শিখরে ইসলাম মিশে আছে। হৃদয়ের গভীরে ধর্ম ডুবে আছে। এবার বোধহয় মেধাবী, ধীমান ও পোড় খাওয়া রাহবাররা ভেসে ওঠেছে। ইসলামের আলো উদিত হতে চলছে...! এখন মুসলমানদের পথচলা হবে বুদ্ধিবৃত্তিক। উদ্যোগ হবে বহুমুখী। চিন্তা ভাবনা হবে স্বচ্ছ। কাজ হবে একসঙ্গে। তবেই সফলতা হানছানি দিবে ইনশাআল্লাহ...
যারা চুপ আছেন তাদের বলছি! আপনারা হয়তো সুসম্পর্ক রক্ষার্থে নবীর প্রতি আপনার ভালোবাসা প্রকাশ করছেন না। বন্ধুত্বের অভিশাপে নিন্দাবাদ জানাচ্ছেন না। জানিনা, আপনার যুক্তিতে এটা কতটুকু সত্য বা ঠিক। তবে আপনাদের প্রতি জনগণের অবজার্বেশন হলো— আপনারা জাতিকে তাহাজ্জুত আর তাসবীহের কথা বলে ধোঁকা দিচ্ছেন। আমাদের স্পষ্ট কথা, এমন বন্ধু দরকার নেই যার কারণে ঈমান চলে যায়। এমন সুসম্পর্কের প্রয়োজন নেই যার দরুন দেশের মান-সম্মান ডুবে যায়। এমন পিরিত তো বৃথা যা মুসলিম শিবির আমাদের শত্রু হয়ে যায়। একটু ভাবুন, এ সম্পর্ক আর বন্ধুত্ব যেন আপনাকে জান্নাতের পথে বাঁধা না প্রদান করে!
কুরআনে বর্ণিত হয়েছে— হে নবী!
আপনি আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাসী সম্প্রদায়কে কখনো এমন পাবেন না যে, তারা এমন লোকদের সাথে বন্ধুত্ব করে যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণে লিপ্ত, যদিও হয় ওরা তাদের পিতা, পুত্র, ভাই বা জ্ঞাতিগোষ্ঠী। [সূরা মুজাদালা-২২]
লেখক: কবি, গীতিকার ও প্রাবন্ধিক
-কেএল