দৈনিক ইত্তেফাক প্রধান শিরোনাম,যুক্তরাষ্ট্রকে দ্রুত যুদ্ধের মাঠে টান ‘হত্যা’ নেতানিয়াহু ' প্রতিবেদনে বলা হয়: ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইরানের বিপ্লবীদের বোঝাতে চাচ্ছেন—তাদের নিধন করতে প্রস্তুত রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি এমন এক সময় এই বার্তা দিচ্ছেন, যখন গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রেক্ষিতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। একই সঙ্গে সিরিয়া, ইরাক ও লেবাননের ইরানঘেঁষা গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘাত জটিলতর রূপ নিচ্ছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, নেতানিয়াহু ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, যাতে করে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধের ফাঁদে পড়ে। শুক্রবার ভোরে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের একটি হাসপাতালের সামনে বিস্ফোরণে অন্তত পাঁচ জন নিহত হয়। মার্কিন সেনারা নিহতদের মধ্যে একাধিক ইরানঘেঁষা মিলিশিয়া নেতার উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে। এই হামলার দায় আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ স্বীকার করেনি, তবে মার্কিন প্রশাসন একে ‘সংশ্লিষ্টতা না থাকা’ বলে দাবি করেছে। তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের একাংশ বলছে, এই ধরণের টার্গেট কিলিংয়ের ঘটনা ইসরায়েলের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’-এর অংশ হতে পারে, যার লক্ষ্য ইরানের সামরিক ও গোয়েন্দা শীর্ষ নেতৃত্বকে নিঃশেষ করা। এদিকে, ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সহিংসতা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা কোনো পক্ষকে অতিরিক্ত উত্তেজনা সৃষ্টি না করার আহ্বান জানাই।” বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলের বর্তমান সরকার অভ্যন্তরীণ চাপ ও রাজনৈতিক সংকট থেকে দৃষ্টি সরাতে যুদ্ধের কৌশলে এগোচ্ছে। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলা, বিচার বিভাগ সংস্কার নিয়ে বিক্ষোভ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা তাকে আগ্রাসী অবস্থানে নিয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল যদি ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে আরও বিস্তৃত করে, তাহলে হোয়াইট হাউস সামরিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য হতে পারে। আর এটিই হতে পারে নেতানিয়াহুর কৌশলের মূল লক্ষ্য। বণিক বার্তার প্রধান শিরোনাম, 'অভিযোগ তুলে আপসের পথে হাঁটছে অন্তর্বর্তী সরকার‘। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে,কোনো দেশের স্বৈরাচার বা দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার যখন জনগণের উপকারের কথা মাথায় না রেখে দুর্নীতি ও লুটপাটের উদ্দেশ্যে বিদেশী ঋণ নেয় তা-ই 'অডিয়াস ডেট' বা 'বিতর্কিত বিদেশী ঋণ' হিসেবে পরিচিত। এ ঋণ নেয়া হয় স্বৈরাচার বা দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের অনিয়ম, দুনীতি ও লুটপাটের স্বার্থে। আন্তর্জাতিক আইনে এখনো এ ধারণা স্বীকৃত না হলেও ইকুয়েডর, ইরাক, কিউবা, মোজাম্বিক ও শ্রীলঙ্কাসহ অনেক দেশে বিতর্কিত ঋণ মওকুফ বা পুনর্গঠনের দৃষ্টান্ত আছে। বাংলাদেশে সাবেক আওয়ামী সরকার এমন কয়েকটি মেগা প্রকল্প নিয়েছিল, কর্ণফুলী টানেল, পায়রা বন্দর, মাতারবাড়ী ও রূপপুর, যেগুলোর ব্যয় বারবার বেড়েছে এবং দৃশ্যমান সুবিধা আনেনি। শ্বেতপত্র কমিটির হিসাবে সাতটি বড় প্রকল্পের খরচ প্রাথমিক অনুমানের তুলনায় ৮০ হাজার কোটি টাকা বেশি, কোথাও ব্যয় ৯০০ ভাগ পর্যন্ত ফুলে উঠেছে। ২০১৯‑এ মোট সরকারি ঋণ যেখানে ছিল আট দশমিক ৭৩ লাখ কোটি টাকা, ২০২৪‑এ তা ১৯ দশমিক ২৩ লাখ কোটিতে পৌঁছেছে; পাঁচ বছরেই ঋণ বেড়েছে ১০ দশমিক পাঁচ লাখ কোটি টাকা, যার অর্ধেকের বেশি বিদেশি উৎস থেকে। অর্থনীতিবিদদের মত, প্রকল্পগুলোর উপযোগিতা ও দুর্নীতি খতিয়ে না দেখে এই দায় জনগণের ঘাড়ে চাপানো অন্যায়; অনেক অংশ 'অডিয়াস' হিসেবে ছাড় বা পুনর্গঠন চাওয়া যেতে পারে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ব্যয় কমানো ও ঋণদাতাদের সঙ্গে আলোচনার কথা বললেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, প্রকল্প বন্ধ করলে বিনিয়োগ আস্থা নষ্ট হতে পারে; তাই মধ্যমেয়াদি মূল্যায়ন ও কূটনীতি ছাড়া উপায় নেই। নয়া দিগন্তের প্রধান শিরোনাম, 'ট্রাম্পকে এখনই যুদ্ধের মাঠে না পেয়ে হতাশ নেতানিয়াহু'। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ইরান-ইসরায়েল সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করলেও যুক্তরাষ্ট্র এখনই সরাসরি যুদ্ধে জড়াতে চাইছে না, যা ইসরায়েলের জন্য হতাশার কারণ। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, তিনি দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ করবে কি না। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি ট্রাম্প সত্যিই অপেক্ষা করেন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি যুদ্ধ জড়ানোর সম্ভাবনা কমে যাবে। ইসরায়েল বারবার চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত পদক্ষেপ নিক, কিন্তু ট্রাম্প শান্তিপূর্ণ আলোচনার সুযোগ খুঁজছেন। এদিকে ইরান ইসরাইলি হামলা বন্ধ না হলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো আলোচনা করবে না বলে জানিয়েছে। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা খামেনি যুদ্ধকালীন ক্ষমতা আইআরজিসিকে দিয়েছেন এবং নিজে সপরিবারে একটি নিরাপদ বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছেন। ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ইরানের তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ধ্বংস করেছে এবং এক সামরিক কমান্ডারকে হত্যা করেছে। এদিকে, ইরান অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে হত্যার চক্রান্ত করেছিল যা ব্যর্থ হয়েছে। এই সময় হেজবুল্লাহ জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেবে, মার্কিন হুমকির তোয়াক্কা করবে না। সংঘাত ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক মাত্রা নিচ্ছে, কিন্তু শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ অনিশ্চিত। কালের কণ্ঠের প্রধান শিরোনাম, 'টাকা পাচার চলছেই' প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ছাত্র‑জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের পর অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, দুবাইসহ নানা দেশে পালিয়েছেন। তারা বাড়ি‑গাড়ি কিনতে বা নিরাপদে থাকার জন্য হুন্ডির মাধ্যমে অবৈধ টাকা পাচার করছেন। সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে রাখা বাংলাদেশি অর্থের হঠাৎ উল্লম্ফন এই চিত্র পরিষ্কার করে। ২০২৩ সালে যেখানে ছিল মাত্র ১৮ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ, ২০২৪‑এ তা বেড়ে হয়েছে ৫৮৯ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন ফ্রাঁ, অর্থাৎ প্রায় আট হাজার ৯৭২ কোটি টাকা বেড়েছে। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, ক্ষমতার বদল আর টাকার নিরাপদ আশ্রয় খোঁজাই এ প্রবণতার মূল কারণ। জমি বিক্রি করে, জোরপূর্বক দখল করা সম্পদ ছাড়া কিংবা ভুয়া আমদানি‑রপ্তানির আড়ালে টাকা বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। সন্দেহজনক লেনদেনের সংখ্যা এক বছরে ৭৯ শতাংশ বেড়ে ২৭ হাজার ছাড়িয়েছে। গবেষণা অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে প্রতি বছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার করে দেশ ছেড়েছে; মূল গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, দুবাইসহ ১০টি দেশ। সরকার এসব অর্থ ফেরাতে টাস্কফোর্স গঠন করে দেড় হাজারের বেশি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করেছে, তবু এখনো কোনো অর্থ ফেরত আসেনি। প্রথম আলোর প্রধান শিরোনাম, 'পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে আলোচনা'। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে টানা আট দিন ধরে সংঘাত চলছে। ইসরায়েলের একাধিক শহরে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, তেমনি ইসরায়েলও তেহরানের হাসপাতালসহ বেসামরিক স্থাপনায় হামলা করেছে। এতে দুই দেশের বহু মানুষ নিহত ও আহত হয়েছেন, হাজার হাজার মানুষ ঘরছাড়া। এই সংঘাত থামাতে জেনেভায় ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে ইরান। উভয় পক্ষ আলোচনা চালিয়ে যেতে রাজি হলেও, ইসরায়েলের আগ্রাসন ও পরমাণু স্থাপনায় হামলা নিয়ে ইরানের গভীর উদ্বেগ রয়েছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদেও এ নিয়ে জরুরি বৈঠক হয়েছে, যেখানে মহাসচিব গুতেরেস সংঘাত বন্ধে সতর্কবার্তা দিয়েছেন। ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি ও এক পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে। অন্যদিকে ইরান বলছে, ইসরায়েলের হামলায় তাদের তিনটি হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইসরায়েলের প্রযুক্তি পার্ক, যেখানে মাইক্রোসফট অফিস রয়েছে, সেখানে ইরানের হামলায় বহু মানুষ আহত হয়। ২৪ জন নিহত ও আট হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এদিকে হেজবুল্লাহ ইরানের পক্ষে হুঁশিয়ারি দিলেও লেবাননের শীর্ষ নেতারা বলছেন, লেবানন সংঘাতে যুক্ত হবে না। ইরান ও ইরাকে ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে লাখো মানুষের বিক্ষোভ হয়েছে, যেখানে ফিলিস্তিন ও হেজবুল্লাহর প্রতি সংহতি জানানো হয়েছে। সংঘাত এখন কূটনৈতিক ও সামরিক উভয় দিকেই বিস্তৃত। নিউ এইজের প্রধান শিরোনাম, 'Parties gear up election preparations' অর্থাৎ, 'নির্বাচনি প্রস্তুতি নিচ্ছে দলগুলো'। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে, এই ইঙ্গিতের পর বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলো প্রস্তুতি শুরু করেছে। বিএনপি ও অন্যান্য দল প্রার্থী নির্বাচন, জোট গঠন ও নির্বাচনি কৌশল তৈরির কাজ করছে। তবে বিএনপির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, প্রতিটি আসনে একজন করে প্রার্থী ঠিক করা। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকেই মনোনয়ন চাইছেন, ফলে দলে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষ দেখা দিচ্ছে। গত নয় মাসে অন্তত ৬০ জন নেতাকর্মী এসব বিরোধে প্রাণ হারিয়েছেন। বিএনপির শীর্ষ নেতারা স্বীকার করেছেন, গত ১৫ বছরে দলের মধ্যে তরুণ ও অভিজ্ঞ নেতাদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় প্রার্থী বাছাই কঠিন হয়ে পড়েছে। তারা বলছেন, জনভিত্তিক প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীসহ ইসলামি দলগুলোও একত্রে নির্বাচনে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে এবং একক প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা করছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নির্বাচনের চেয়ে রাজনৈতিক সংস্কারে গুরুত্ব দিচ্ছে এবং ২২ জুন নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করবে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও একটি ইসলামি মূল্যবোধভিত্তিক একক মঞ্চ গঠনের চেষ্টা করছে, যাতে সব আসনে একটি করে প্রার্থী দেওয়া যায়। সব দলই এখনো প্রাথমিক পর্যায়ের প্রস্তুতিতে রয়েছে। সংবাদের প্রধান শিরোনাম 'চালের দাম বৃদ্ধি 'অবাক' করছে'। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বোরো মৌসুমে ধানের ফলন ভালো হলেও হঠাৎ করে চালের দাম কেজিতে ছয় থেকে আট টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে, যা অনেককে অবাক করেছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বড় বড় চালকল মালিকরা ধান কিনে মজুত করে রাখায় বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মিনিকেট চাল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, আর বিআর-২৮ জাতের চাল ৬২ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, ঈদের আগে মিনিকেট ছিল ৭২ টাকা, এখন সেটা ৮০ টাকা, আর অন্যান্য চালের দামও বাড়ছে। একইভাবে সুপার পাম অয়েলের দামও ঈদের আগে ছিল ১৫৮ টাকা, এখন হয়েছে ১৬৫ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম বাড়ার ফলে ক্রেতাদের কাছে জবাবদিহি করতে হয়, যা তাদের জন্যও কষ্টকর। মিলারদের সিন্ডিকেট ও ব্যাংক লোনের অপব্যবহারকেও এই দাম বৃদ্ধির পেছনে কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। ব্যাংক লোনে বাড়তি টাকা তুলে অনেক মিল কোম্পানি ধান মজুদ করছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই পরিস্থিতি ঠেকাতে সরকারের উচিত বিদেশ থেকে চাল আমদানি ও ব্যাংক লোন যাচাই-বাছাই করা। সরকারি সংস্থা টিসিবির তথ্যেও দেখা যাচ্ছে, এক সপ্তাহে মাঝারি চালের দাম ৫.২২% এবং মোটা চালের দাম ছয় দশমিক ৬৭ শতাংশ বেড়েছে। সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধি জনগণের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে এবং বাজার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের প্রধান শিরোনাম, 'Recapitalisation vs inflation: Twin dilemmas of our banking crisis' অর্থাৎ, 'পুনঃপুঁজিকরণ বনাম মূল্যস্ফীতি: আমাদের ব্যাংকিং সংকটের দুটি দিক' প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত এখন গভীর সঙ্কটে। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে দীর্ঘদিন ধরে জামানত ছাড়া, ভুয়া নামে এবং অতিমূল্যায়িত সম্পত্তির ভিত্তিতে ঋণ দেয়া হয়েছে, যার বড় অংশ এখন খেলাপি। ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ চার দশমিক ই লাখ কোটি টাকা, যা আগামী ছয় মাসে বেড়ে আট লাখ কোটি টাকা হতে পারে। এই অঙ্ক ব্যাংক ঋণের অর্ধেকেরও বেশি। এতে অন্তত ১৬টি ব্যাংক ভয়াবহ তারল্য সংকটে পড়েছে, আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। অনেক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান একই সম্পত্তি একাধিক ব্যাংকে জামানত দেখিয়ে ঋণ নিয়েছে। এ ছাড়া, বড় শিল্পগোষ্ঠী যেমন এস আলম ও বেক্সিমকো গ্রুপ বিপুল ঋণ নিয়ে তা বিদেশে পাচার করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। সরকার বদলের পর বাংলাদেশ ব্যাংক এই সংকট মোকাবেলায় বড় ঋণের পুনর্গঠন, ব্যাংক একীভূতকরণ ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থার (এডিআর) উদ্যোগ নেয়। তবে আইনি জটিলতা ও অদক্ষতা বড় বাধা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুনঃমূলধনীকরণ (রিক্যাপিটালাইজেশন) করতে হলে প্রায় আট লাখ কোটি টাকার ব্যবস্থা করতে হবে, যা প্রায় অসম্ভব এবং জনসাধারণের ওপর বোঝা চাপাবে। ইতোমধ্যে সরকার টাকা ছাপিয়ে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ বাজারে ছেড়েছে, যা ভবিষ্যতে ভয়াবহ মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি করতে পারে। ব্যাংকগুলো নতুন ঋণ দিতে পারছে না, ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও হুমকির মুখে পড়েছে। খেলাপি ঋণ এখন শুধু ব্যাংক নয়, পুরো অর্থনীতির জন্য একটি বড় বিপর্যয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকের পত্রিকার প্রধান শিরোনাম, 'খাতুনগঞ্জের ঋণের শতভাগই খেলাপি'। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ইউনিয়ন ব্যাংকের চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে দুই হাজার ৪৫২ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছিল, যার প্রায় পুরো টাকাই দুই হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা এখন খেলাপি। এই বিপুল ঋণের ৯৪ শতাংশ, প্রায় দুই হাজার ৩০৬ কোটি টাকা নিয়েছে বিতর্কিত শিল্পগ্রুপ এস আলম, যারা ৩৭টি নাম ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই টাকা হাতিয়ে নেয়। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এই ঋণ অনুমোদন এসেছে প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে, যখন ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ ছিল এস আলম গ্রুপের হাতে। ২০২৪ সালের ই অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে গ্রুপটির কেউ দেশে ফেরেনি, ফলে ঋণ আদায়ে কোনো সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। এস আলম গ্রুপের নামে বা লোকের নামে নেওয়া ঋণের অনেকগুলোর বিপরীতে জামানতই নেই, তাই ব্যাংকের পক্ষে টাকা উদ্ধার কঠিন। ব্যাংক বলছে, তারা এখন আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং খেলাপিদের বিরুদ্ধে নোটিশ পাঠানো হয়েছে, মামলা করাও হবে। কিন্তু অনেকে এস আলমের আত্মীয় বা কর্মচারী না হয়েও তাদের মাধ্যমে ঋণ নিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খাতুনগঞ্জ শাখা যেন এস আলম গ্রুপের ব্যক্তিগত মানিব্যাগে পরিণত হয়েছিল। এই ঘটনায় এখন দুদক ও ব্যাংকগুলো মামলা করছে এবং আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। অনেক সম্পত্তি নিলামে তোলা হয়েছে ঋণ আদায়ের জন্য। মানবজমিনের প্রথম পাতার খবর, '২৫৫ কোটি টাকা লুটে ৪৬ প্রতিষ্ঠান' প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, চলতি শিক্ষাবর্ষে দেশের শিক্ষার্থীদের অন্তত ৩৩ শতাংশ পাঠ্যবই নিম্নমানের ছিল, যা ছেপেছে ৪৬টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। এই নিম্নমানের বই ছাপিয়ে অন্তত ২৫৫ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে বলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ও অন্যান্য সংস্থার তদন্তে জানা গেছে। প্রায় ৪০ কোটি বইয়ের মধ্যে ১৩ কোটি বইয়ের কাগজের মান ছিল টেন্ডার শর্তের চেয়ে অনেক নিচে। ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার বই দুর্নীতির অভিযোগও আছে। অনেক ছাপাখানা দরপত্রে নির্ধারিত কাগজের মান ৭০ বা ৮০ জিএসএম থাকার কথা থাকলেও ব্যবহার করেছে ৫৫ থেকে ৭০ জিএসএম মানের পাতলা কাগজ। এনসিটিবি বলছে, এবার সময়মতো ছাপার কাজ শুরু হয়েছে, দরপত্রে নতুন শর্তও যোগ করা হয়েছে, যেমন ওয়েব মেশিন, অটো-বাইন্ডিং, পরিষ্কার ছাপাখানা ইত্যাদি। তবু সংশ্লিষ্টদের শঙ্কা, আগের সিন্ডিকেট এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে। এনসিটিবি বলছে, যেসব প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের বই দিয়েছে, তাদেরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। যদি তারা বই বদলে না দেয়, তবে জরিমানা ও কালো তালিকাভুক্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এভাবেই সরকারের নজরদারি আর জবাবদিহি ছাড়া মানসম্পন্ন বই পৌঁছানো কঠিন বলেই মনে করছেন প্রকাশক ও সংশ্লিষ্টরা।
