শনিবার, ১৮ মে ২০২৪ ।। ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ।। ১০ জিলকদ ১৪৪৫


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম ছাত্রী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

।।সারিব সুইজা।।

১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে ছিলো, একজন ছেলে যদি একজন মেয়ের সাথে কথা বলতে চায়, তবে তাকে প্রক্টর বরাবর দরখাস্ত দিতে হবে। শুধুমাত্র প্রক্টর অনুমতি দিলেই সে কথা বলতে পারবে। এছাড়া নয়। এমনকি তার ক্লাসের কোন মেয়ের সাথেও না।

ডিসেম্বর ১৯২৭। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাত্র ৬ বছর পর। একদিন কোলকাতা থেকে একজন যুবক এলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখবেন। কয়েকজন বন্ধু বান্ধব নিয়ে সে ঘুরতে বের হলেন। তখন কার্জন হল ছিলো বিজ্ঞান ভবন। ঘুরতে ঘুরতে যখন কার্জন হলের সামনে এসে পড়লেন তারা, সে যুবক দেখলেন দূরে একটা থ্রী কোয়ার্টার হাতার ব্লাউজ আর সুতির শাড়ি পরা এক মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে তার বন্ধুদের জিজ্ঞেস করলেন, এই মেয়েটি কে? তখন তার বন্ধুরা বলল, এ হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম নারী ছাত্রী।

তখন সেই যুবক বলেন, সত্যি? আমি এই মেয়ের সাথে কথা বলব।

তখন সে যুবক মেয়েটির সাথে কথা বলার জন্য একটু এগিয়ে গেলেন তার বন্ধুরা তাকে বাঁধা দেয়। বলে, না তুমি যেও না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের সাথে কথা বলার অনুমতি নেই। তুমি যদি ওর সাথে অনুমতি ছাড়া কথা বলো তবে তোমার শাস্তি হবে।

সেই যুবক বললেন, ‘আমি মানি নাকো কোন বাঁধা, মানি নাকো কোন আইন।’ সেই যুবক হেঁটে হেঁটে গিয়ে সেই মেয়েটির সামনে দাঁড়ালেন। তারপর তাকে বললেন, আমি শুনেছি আপনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম নারী ছাত্রী! কি নাম আপনার?

মেয়েটি মাথা নিচু করে বললেন, ফজিলাতুন্নেছা।

যুবক জিজ্ঞেস করলেন, কোন সাবজেক্টে পড়েন?

গণিতে। এখানো নিচু মেয়েটির মাথা।

গ্রামের বাড়ি কোথায়?

টাঙ্গাইলের করটিয়া।

ঢাকায় থাকছেন কোথায়?

সিদ্দিকবাজার।

এবার যুবক বললেন, আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম নারী ছাত্রী। আপনার সাথে কথা বলে আমি খুব আপ্লুত।  আজই সন্ধ্যায় আমি আপনার সাথে দেখা করতে আসবো।

মেয়েটি চলে গেলো।

এই সব কিছু দূরে দাঁড়িয়ে এসিস্ট্যান্ট প্রক্টর স্যার দেখছিলেন। তার ঠিক তিনদিন পর। ২৯ ডিসেম্বর ১৯২৭। কলা ভবন আর বিজ্ঞান ভবনের নোটিশ বোর্ডে হাতে লেখা বিজ্ঞপ্তি টানিয়ে দেয়া হলো যুবকের নামে। তার নাম লেখা হলো, তার বাবার নাম লেখা হলো এবং বিজ্ঞপ্তিতে বলা হলো, এই যুবকের আজীবনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ।

তারপরে এই যুবক আর কোনদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেননি। সেইদিনের সেই যুবক বৃদ্ধ বয়সে ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট মৃত্যুবরণ করলেন। যে যুবকটা আর কোনদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ করেননি, তার মৃত্যুর পরে তার কবর হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে। কেননা তিনি মৃত্যুর আগে ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন, ‘মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই, যেন ঘোরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই।’

সেই যুবক আর কেউ নন। আমাদের প্রিয় কবি, জাতীয় কবি, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। মেয়েটি ফজিলাতুন্নেসা জোহা। কবি নজরুল ওনাকে নিয়ে 'বর্ষা বিদায়' কবিতা লেখেন। টাঙ্গাইলের সদর থানার নামদার কুমুল্লী গ্রামে জন্ম নেয়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোক উদ্ভাসিত কারি, মহিয়সী নারী বেগম ফজিলতুন্নেসা জোহা ।

বেগম ফজিলতুন্নেসা জোহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম ছাত্রী ও ঢাকা ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন (১৯৪৮-৫৭)। তিনিই প্রথম বাঙালি মুসলমান ছাত্রী যিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে যান।

এই বিদুষী নারী ১৯৭৭ সালে ২১ অক্টোবর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তার স্মৃতি রক্ষার্থে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৮৭ সালে ‘ফজিলাতুন্নেছা’ নামে একটি হল নির্মাণ করা হয়।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ