শনিবার, ২১ জুন ২০২৫ ।। ৭ আষাঢ় ১৪৩২ ।। ২৫ জিলহজ ১৪৪৬

শিরোনাম :
ইসরায়েলি হামলায় ইরানের আরও এক পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত ইরানকে শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচিতে সহায়তা দেবে রাশিয়া: পুতিন খেলাফত মজলিসের রংপুর বিভাগীয় তরবিয়তি সভা উত্তরসূরিদের নাম ঘোষণা করলেন খামেনি ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনালাপে ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইরানের ড্রোন হামলা, ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভেদ করে বিস্ময় সৃষ্টি আধিপত্যবাদ মোকাবেলায় ইসলামি শক্তির ঐক্য অপরিহার্য: ইবনে শাইখুল হাদিস পৃথিবীর শান্তি ও মানবতা ধ্বংস করছে ইসরায়েল, পতন অনিবার্য: হেফাজত  যে মাওলানার কাছে ভরাডুবি হয়েছিল সেই ফজলুর রহমানের হল না ছাড়ার সিদ্ধান্ত ঢামেক শিক্ষার্থীদের, আন্দোলন চলবে

যে মাওলানার কাছে ভরাডুবি হয়েছিল সেই ফজলুর রহমানের

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বিশেষ প্রতিনিধি

গত কয়েক মাস ধরে দেশের আলেম-উলামার বিরুদ্ধে বিভিন্ন টকশো ও সামাজিক মাধ্যমে বেশ সরব অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান। দেশের আলেম-উলামা ও ধর্মপ্রাণ মানুষদের কাছে ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়েছেন এই নেতা। তিনি এখন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। আগে অবশ্য আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন। ছাত্রলীগের একটি অংশের সভাপতিও ছিলেন কিছুদিন। মূলত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলই করা এই নেতার ভরাডুবি হয়েছিল একজন মাওলানার কাছে। এ কারণে আলেম-উলামার প্রতি একটা বিদ্বেষী মনোভাব এখনো রয়ে গেছে তার মধ্যে। যা ফুটে উঠে কথাবার্তায়। 

১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশে একটি আসন ছিল বেশ আলোচনায়। সেটি হচ্ছে কিশোরগঞ্জ-৩ (সদর) আসন। যা বর্তমানে কিশোরগঞ্জ-১ হিসেবে পরিচিত। সেই নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ সদর আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন মাওলানা আতাউর রহমান খান। আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন আজকের আলোচিত ফজলুর রহমান। দুজনই বক্তা হিসেবে তুখোড়। ভোটের লড়াইয়ে একজনের বিরুদ্ধে আরেকজনের কথার লড়াই চলে। কেউই ঘায়েল হওয়ার মতো নয়। ফলে সেবার কিশোরগঞ্জের সাতটি আসনের মধ্যে সবচেয়ে জমে উঠে সদর আসনের ভোট। দুই বাগ্মীর কথার লড়াই উপভোগ করে কিশোরগঞ্জবাসী। 

এই দুই নেতার মধ্যে আরেকটি জায়গায় মিল ছিল। দুজনই হাওরের সন্তান। কিশোরগঞ্জ সদর থেকে নির্বাচন করলেও দুজনের বাড়িই ইটনা থানায়। মাওলানা আতাউর রহমান খানের গ্রামের বাড়ি ইটনার বড় হাতকবিলা গ্রামে। আর ফজলুর রহমানের বাড়ি জয়সিদ্ধি গ্রামে। দুই গ্রামের দূরত্বও মাত্র কয়েক কিলোমিটারের।  

জনশ্রুতি আছে, ফজলুর রহমান সেই নির্বাচনের আগে এক জনসভায় বলেছিলেন, মাওলানা সাহেবের কাছে তিনি হেরে গেলে কান কেটে ফেলবেন। রাজনীতি ছেড়ে দেবেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তার কথায় ছিল একটা দাম্ভিক ভাব। এটা জনগণ ভালোভাবে নেয়নি। ভোটের লড়াইয়ে তাকে কুপোকাত করে জনগণ। বিপুল ভোটে একজন মাওলানার কাছে ভরাডুবি ঘটে আওয়ামী লীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় এই নেতার। 

সেই নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপির প্রার্থী মাওলানা আতাউর রহমান খান পেয়েছিলেন ৫৭ হাজার ৬৭১ ভোট। আর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান পেয়েছিলেন ৪০ হাজার ২০৫। ১৭ হাজারের বেশি ভোটে পরাজিত হন আজকের আলোচিত ফজলুর রহমান। 

তবে ভোটের লড়াইয়ে চরমভাবে পরাজিত হলেও কথা রাখেননি ফজলুর রহমান। তিনি কানও কাটেননি এবং রাজনীতিও ছাড়েননি। তবে অনেকের কাছে তিনি এখনো ‘কানকাটা ফজলু’ হিসেবে পরিচিত। বারবার শিবির বদল করে এখন তিনি আছেন বিএনপির সঙ্গে। 

অবশ্য ফজলুর রহমান ১৯৮৬ সালে এরশাদের পাতানো নির্বাচনে এমপি হয়েছিলেন স্বল্প সময়ের জন্য। সেই নির্বাচনে তিনি ছিলেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী। প্রথমবারের মতো স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মাওলানা আতাউর রহমান খান। সেই নির্বাচনেও কিশোরগঞ্জের মাটি ও মানুষের নেতা হিসেবে পরিচিত মাওলানা আতাউর রহমান খানের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল। বিএনপি সেই নির্বাচন বর্জন করে। ফলে আওয়ামী লীগের মতো দলের প্রার্থীর সঙ্গে ভোটের লড়াইয়ে জিতলেও ভোট রক্ষার লড়াইয়ে হেরে যান মাওলানা আতাউর রহমান খান। ব্যাপক কারচুপির মাধ্যমে তাঁকে পরাজিত দেখানো হয়। 

মূলত সেই নির্বাচনের পরেই মাওলানা আতাউর রহমান খান সিদ্ধান্ত নেন কোনো একটি প্রতিষ্ঠিত দলের হয়ে লড়তে হবে। কারণ ভোট রক্ষার জন্য কর্মী বাহিনী লাগবে। ফলে অনেক চিন্তাভাবনা করে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। পরবর্তী নির্বাচনে তাঁর চিন্তাভাবনাই সঠিক হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। সেই নির্বাচনে সত্যিই তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর এই বিজয়ী হওয়ার পেছনে ব্যক্তিগত ইমেজই মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। এজন্য এর আগে বা পরে কখনো প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচনে বিএনপি এই সিটটি পায়নি।

মাওলানা আতাউর রহমান খান ছিলেন দেশের শীর্ষ আলেমদের একজন। মুজাহিদে মিল্লাত মাওলানা আতহার আলী রহ.-এর ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে রাজনীতির দীক্ষা নেন তিনি। ছিলেন বেফাকের মহাসচিব। কিশোরগঞ্জের আল-জামেয়াতুল ইমদাদিয়ার দীর্ঘকালীন ভাইস প্রিন্সিপালন। ঢাকার ফরিদাবাদ এবং মিরপুর-৬ নম্বর মাদরাসার প্রিন্সিপালের দায়িত্বও পালন করেন। শেষ জীবনে কিশোরগঞ্জে জামিয়া ফারুকিয়া নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ২০০৮ সালে তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর পাঁচ ছেলের সবাই স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ