আবদুল্লাহ তামিম।।
ওমানের জনপ্রিয় সুলতান কাবুস বিন সাঈদ আল সাঈদ গুরুতর অসুস্থ।
আল আরাবিয়া ওমানের সুলতান কার্যালয়ের বরাতে জানায়, চার দশকের বেশি সময় ধরে রাজ্য শাসন করা এ সুলতান গুরুতর অসুস্থততার কারণে ডিসেম্বরের শেষে বেলজিয়াম সফরে গিয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার তিনি তার দেশে ফিরে আসেন। চিকিৎসা শেষ করে দেশে ফিরে তার শারীরিক উন্নতি ও অবনতির কোনো খবর জানায়নি কার্যালয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে তিনি খুব অসুস্থ।
আরব নৃপতিদের মধ্যে ওমানের সুলতান কাবুস বিন সাঈদ আল সাঈদ সবার থেকে ব্যতিক্রম। মধ্যপ্রাচ্যের অন্য যে কোনো রাজার চেয়ে বেশি দিন রাজত্ব করছেন। তার রাজত্বের ৪৮ বছর চলছে। তিনি ক্ষমতায় আসার আগে শুধু রাজধানী মাস্কাটেই বাঁধানো রাস্তা ছিল। কলের পানি কিংবা বিদ্যুৎও পাওয়া যেত না ওই সময়।
আজ ওমানের রাস্তাঘাট দেশের প্রত্যন্ত প্রান্তগুলো অবধি চলে গেছে। সবচেয়ে দূরের বসতিগুলোতেও স্কুল ও হাসপাতাল আছে। সারা দেশে ২০টির বেশি কলেজ ও ইউনিভার্সিটি স্থাপন করা হয়েছে। ১৯৯৬ সালের নভেম্বর মাসে রাষ্ট্রের মৌলিক বিধি উপস্থাপন করেন ওমানের সুলতান কাবুস বিন সাঈদ আল সাঈদ। এটিই হলো ওমানের প্রথম লিখিত সংবিধান।
সুলতান কাবুস ওমানকে আধুনিকতার দিকে নিয়ে গেছেন দ্রুত গতিতে। ৪৫ বছর আগে ওমান ছিল আরব বিশ্বের সবচেয়ে পেছনে পড়ে থাকা দেশগুলোর মধ্যে একটি। অন্যদিকে বিশ্বের যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি প্রগতি করেছে আজ ওমান সেই তালিকার শীর্ষে বলে ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ। ২০১০ সালের হিসাব বলছে, ওমানের গড় আয়ু ৭৬ বছর।
প্রতি ১০০০ জন লোকের জন্য ২.১ জন ডাক্তার ও ২.১টি হাসপাতালের শয্যা আছে। ওমানে বহু বিদেশি কাজ করেন। এখানকার ৩৫ লাখের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ লোক ওমানি নাগরিক নন, মূলত ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ইরান থেকে আসা বিদেশি কর্মী। প্রাপ্তবয়স্কদের সাক্ষরতার হার ২০১০ সালে ছিল ৮৬.৯%।
জানা যায়, ১৯৭০ সালের আগে ওমানে ৩টি স্কুল এবং তাতে ১ হাজারের মতো ছাত্র ছিল। বর্তমান সুলতানের সময় থেকে শিক্ষার বিস্তার ঘটতে থাকে। এখন প্রতি বছর হাজার হাজার তরুণ ওমানি বেরোচ্ছেন স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটি থেকে। তাদের অধিকাংশই সরকারি চাকরি করেন। কেননা তারা মনে করেন সরকারি চাকরিতে বেতন ও সুযোগ-সুবিধা বেশি।
ওমানের সাক্ষরতার হার একসময় কম ছিল। যেমন ১৯৯০ সালে ৫৪.৭%, ২০০২ সালে এটি বেড়ে ৭৫% হয়। বর্তমানে ১ হাজারটি স্কুল এবং সেগুলোতে প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার ছাত্রছাত্রী আছে। ওমানের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ‘সুলতান কাবুস বিশ্ববিদ্যালয়’ ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ইংরেজি ভাষা ওমানে সবচেয়ে বেশি শেখানো বিদেশি ভাষা। মাধ্যমিক স্তরের পরবর্তী সব লেখাপড়া ইংরেজিতেই হয়। ওমানের বেতার সংস্থার ইংরেজি চ্যানেল আছে। এ ছাড়াও দেশে অনেক ইংরেজি সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়।
আরবি ছাড়াও ওমানের দক্ষিণাংশে অনেক আধুনিক দক্ষিণী আরবি ভাষা প্রচলিত। এর মধ্যে আছে জিবালি, মেহরি, হার্সুসি এবং হবিয়ত ভাষা। এসব ভাষায় রচিত নানা রকম সাহিত্যকর্ম রয়েছে যা বেশ সমৃদ্ধ।
আরব নিউজ থেকে আবদুল্লাহ তামিম
-এটি